১১ জুন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা দু'দিনব্যাপী মার্কিন বাণিজ্যিক নীতি সংক্রান্ত পর্যালোচনা শেষ করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি সারা বিশ্বের বাণিজ্যিক পরিবেশের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। দু'দিনব্যাপী রুদ্ধ দ্বার অধিবেশন চলাকালে আমাদের সংবাদদাতা তুয়েন সিউ চিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় চীনের রাষ্ট্রদূত সুন চেন ইয়ুর বিশেষ সাক্ষাত্কার নিয়েছেন।
১১ জুন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ সংস্থার অধিকাংশ সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের মন্থরগতির দিকে লক্ষ্য রেখেছে। রাষ্ট্রদূত সুন চেন ইয়ু বলেন, পর্যালোচনায় মার্কিন মুদ্রা নীতি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। তিনি বলেন, 'পর্যালোচনায় চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডসহ অনেক সদস্য মার্কিন বাণিজ্যিক নীতি, বিশেষ করে মুদ্রা নীতির সমালোচনা করেছে। গত এক বছরে মার্কিন ডলারের মূল্য কমে যাওয়ায় তেল ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বহু উন্নয়নশীল সদস্য দেশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ মার্কিন ডলার হচ্ছে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রা এবং অনেক দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ এবং নিষ্পত্তি মুদ্রা। মার্কিন ডলার মূল্য কমে যাওয়ার ফলে মুদ্রা স্ফীতিও দেখা দিয়েছে।'
১১ জুন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল বাণিজ্য নীতি রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র 'সন্ত্রাস দমন ও দেশের নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা করার' অজুহাতে সকল আমদানী পণ্যের ক্যান্টেইনার পরীক্ষা করার দাবি জানিয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানী করা পণ্যের ব্যয় বেড়ে যাবে। এটা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। সুন চেন ইয়ু উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীপ বাণিজ্যিক নীতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যে স্পষ্ট প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, 'সম্প্রতি আমরা মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দু'জন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মুখ থেকে প্রায়শই চীনের ওপর বাণিজ্যিক সীমাবদ্ধতা বাড়ানোর কথা শুনেছি। মার্কিন কংগ্রেসে চীন সম্পর্কিত মামলার সংখ্যা ৪০টিরও বেশি। এর মধ্যে অনেক মামলার বাণিজ্যের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্র মাঝে মাঝে চীন থেকে আমদানি করার পণ্যগুলোর ওপর পাল্টা ভর্তুকি দেয়, এমনকি পাইকারি বিক্রিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অথবা এই দুটি ব্যবস্থা একসাথে প্রয়োগ করে। এই ব্যবস্থাগুলো চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ক্ষুন্ন করেছে।'
বিশ্বের বাণিজ্যিক পরিবেশ উন্নয়ন, আরো ন্যায়সংগত বাণিজ্যিক নিয়মকানুন তৈরি করা এবং উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলো যাতে বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় লাভবান হয় সে উদ্দেশ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ২০০১ সাল থেকে দোহা দফা আলোচনা শুরু করেছে। এখন দোহা দফা আলোচনা প্রায় দু'বছর ধরে অচলাবস্থার মধ্যে। এ অচলাবস্থা ভেঙে দেয়ার সময় এসেছে। সুন চেন ইয়ু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি ভর্তুকি কমাতে না চাওয়া বর্তমান অচলাবস্থা সৃষ্টির প্রধান কারণ। কৃষি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র আরো বেশি নমনীয়তা দেখানো উচিত। তিনি বলেন, 'বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কৃষি আলোচনা গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রস্তাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক কৃষি ভর্তুকি বর্তমানের ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নামানো উচিত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ভর্তুকি কমানোকে শর্ত হিসেবে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প পণ্যের জন্য অন্যান্য সদস্যের বাজার উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। এটা হচ্ছে দোহা দফা আলোচনায় কোন অগ্রগতি না পাওয়ার মূল কারণ। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে আরো বেশি নমনীয়তা দেখানো, নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করা, কৃষি ভর্তুকি কমানো এবং উন্নয়নশীল সদস্যদের জন্য বাজার উন্মুক্ত করার তাগিদ দেই।'
সুন চেন ইয়ু আরো উল্লেখ করেন যে, বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় লাভবান দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দোহা দফা আলোচনার সাফল্যের জন্য অবদান রাখা উচিত। তিনি বলেন, 'গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্র বহুপক্ষিয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থার অধীনে প্রধান লাভবান দেশে পরিণত হয়েছে। নেতৃত্ব ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে অন্যান্য সদস্যের জন্য আদর্শ হওয়া উচিত। যাতে অন্যান্য সদস্যও প্রয়োজনীয় নমনীয়তা দেখায় এবং দোহা দফা আলোচনা সফল হয়।' (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|