v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-06-11 22:07:02    
চীনের নামকরা পিয়ানবাদক লি চিয়েন(ছবি)

cri

    লি চিয়েনের বয়স এখন ৪৩ বছর । সাংহাইয়ের একটি সংগীত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । লি চিয়েনের মা ইয়ু লি চীনের একজন নামকরা বেহালাবাদক । ১৯৫৯ সালে তিনি যে বেহালায় কনসার্ট ' লিয়ান সান পাই ও চু ইং থাই ' বাজিয়েছেন। আজ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন , এই সুরে তিনিই চীনের শ্রেষ্ঠ বেহালা বাদকদের অন্যতম । লি চিয়েনের বয়স যখন পাঁচ কি ছয় বছর , তখন তার মা তাকে বেহালা শিখাতে শুরু করেন । তবে লি চিয়েন বলেন ,বেহালার তুলনায় তিনি পিয়ানো বেশি পছন্দ করতেন । লি চিয়েন বেশ লম্বা , দেখতে স্বাস্থ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী । তার দুই হাত বড় ও শক্তিশালী। লি চিয়েনের বেশি কথা বলার অভ্যাস নেই , তবে পিয়ানোর কথা উঠলেই তিনি অনেক কথা বলতে থাকেন । তিনি বলেন , আমার মা বেহালাবাদক । তাই তিনি আশা করেন আমি বেহালা শিখবো । ছোটবেলায় আমি মনে করতাম বেহালা বাজানো খুব ক্লান্তির কাজ । দু' ঘন্টা বাজানোর পর পা দুটোয় বেশি ব্যথা হতো। তবে পিয়ানো বাজানোর সময় দাঁড়াতে হয় না , সব বাদকই বসে বসে বাজান । তাই আমি মনে করতাম বেহালার চেয়ে পিয়ানোই বেশি ভালো। তবে প্রথম দিকে আমি পিয়ানো বাজানোকে বেশি পছন্দ করতাম না ,বারো -তের বছর বছর বয়স থেকেই আমি পিয়ানো বাজানোকে পছন্দ করতে শুরু করি ।

    লি চিয়েন বলেন , দশ বছর বয়সের সময় তিনি গুরুতর রোগাক্রান্ত ছিলেন । অসুখটা এত গুরুতর ছিল যে তিনি একটু হলেই যেন মরে যেতেন । সুস্থ হওয়ার পর লি চিয়েন সংগীত পছন্দ করতে শুরু করেন , পিয়ানো বাজানোকে তিনি বেশি পছন্দ করেন । তখন থেকে তিনি সচেতনভাবে বাসায় পিয়ানো বাজানোর অনুশীলন করা শুরু করেন । তখন তিনি প্রতি দিন দশ –বারো ঘন্টা অনুশীলন করা শুরু করেন । ফলে তার পিয়ানো বাজানোর কৌশল ও সংগীতের ওপর তার উপলব্ধির মানও অনেক উন্নত হতে থাকে । ১৯৮১ সালে ১৬ বছর বয়সের লি চিয়েন প্যালিসের মার্গারেট লোন জ্যাকস থাইবাড আন্তর্জাতিক পিয়ানো প্রতিযোগিতায় অংশ নেন । তিনিই এ বিশ্ববিখ্যাত আন্তর্জাতিক পিয়ানো প্রতিযোগিতার সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রতিযোগীছিলেন । তিনি এ প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছেন এবং ফরাসী সরকারের স্কলারশিপ পান । এ প্রতিযোগিতার পর লি চিয়েন প্যারিসের সংগীত বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রফেসর পিয়েরে সানকেনের ছাত্র হলেন । পড়াশুনা শেষ করে লি চিয়েন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পিয়ানো বাজাতে যান ।১৯৮৭ সালে লি চিয়েন চীনের কেন্দ্রীয় অকেস্ট্রা সংগীত দলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যান । সেখানে চীনের সংগীত দলের এই তরুণ পিয়ানো বাদক যুক্তরাষ্ট্রের দশর্কদের দৃষ্টি আকষর্ন করেন । লি চিয়েন ও তার দলের সদস্যদের পরিবেশিত সংগীত যুক্তরাষ্ট্রে সমাদর পেয়েছে । সেই বছর থেকে লি চিয়েন প্রতি বছরই যুক্তরাষ্ট্র ,ইউরোপ ও দূর প্রাচ্যের দেশগুলোতে যান , তার পরিবেশিত একক ও কনসার্টগুলো বিদেশী দশর্করা খুব পছন্দ করেন । বিদেশে পড়াশুনা ও অনুষ্ঠান পরিবেশনের অভিজ্ঞতা লি চিয়েনের দৃষ্টিকে আরো প্রসারিত করেছে , তার পিয়ানো বাজানোর নৈপুন্যও দ্রুত উন্নত হয় । তিনি একক সংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন , তার পিয়ানো বাজানোর নৈপুন্য ও ভাব প্রকাশের দক্ষতা বিদেশের বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা পেয়েছে ।

    লি ছিয়েন ক্লাসিকাল সংগীতকে খুব পছন্দ করেন । তিনি মনে করেন প্রতিটি ক্লাসিকাল সুর সম্পর্কে সংগীতবিদের অনুভুতি একই নয়। তিনি বলেন , ক্লাসিকাল সুর সর্বপ্রথমে গীর্জা থেকে আসে । এ সব সুর মানব জাতির বাইরের কাল্পনিক বিষয়গুলোর প্রশংসা করে । আমি মনে করি , ক্লাসিকাল সংগীতগুলোর মধ্যে যেমন আছে ক্লাসিকাল সুর,তেমনি আছে রোমান্টিক ও আধুনিক সুর । ক্লাসিকাল সংগীত এমন একমাত্র সুর যা মাইক ও বিদ্যুত ছাড়া বাজানো যায় । আজকাল লোডশেডিং হলেও , আমরা অন্ধকারে অন্য দিনের মতো সুন্দর সুন্দর ক্লাসিকাল সুর বাজাতে পারি।

লি চিয়েনের বাজানো সুরে সুরকারের অনুভুতিকে চমত্কারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় । যেমন বিশ্ববিখ্যাত সুরকার বিটোফেনের চতুর্থ সিম্ফোনী সুর ও চতুর্থ পিয়ানো কনসারটো তার অন্য আটটি সিম্ফোনী সুরের শৈলী আলাদা । এ দুটি সুর সুক্ষ্ম ও নরম ,এতে বিতুফেনের চরিত্রের অন্য দিক প্রতিফলিত হয়েছে । এ দুটি সুর শুনতে মধুর , আনন্দদায়ক ও কোমলতাপূর্ণ । এ দুটি সুর মানুষকে প্রেরণা ও আস্থা দেয় । লি চিয়েন এ দুটো সুর বাজানোর মাধ্যমে বিটোফেনেরচরিত্রের কোমলতা দশর্ককে পৌঁছে দিতে চান । যাতে দশর্করা সুরকারের এই অনুভূতি বুঝতে পারেন । তিনি বলেন , পিয়ানোবাদক হিসেবে আমাকে সুরকারের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করার চেষ্টা করতে হবে । তিনি বলেন , আমার মনে হয় , সুর বাজানোর সময় নিজের শৈলী প্রকাশ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়,সুরকারের শৈলী প্রকাশ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ । এখন অনেক সংগীতবিদ অনুষ্ঠান পরিবেশনের সময় শুধু নিজের শৈলী প্রকাশের চেষ্টা করেন , এটা ঠিক নয় । কারণ বাদকদের শৈলী সুর বাজানোর প্রক্রিয়ায় নিজে থেকেই প্রকাশিত হয় । শুধু নিজের শৈলী প্রকাশের উপর মনোযোগ দিলে সুরকারের অনুভুতি দশর্কদের পৌছাতে পারবে না , এটা বাদকদের সুর বাজানোর উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় ।

    গত কয়েক বছরে লি চিয়েন অনুষ্ঠান পরিবেশনের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন । এ পর্যন্ত তিনি মোট ১৩টি রেকর্ড প্রকাশ করেছেন । সংগীত মহলে সুনাম পেলেও লি চিয়েন নিজের প্রচার করা পছন্দ করেন না । বতর্মানে চীনের সংগীত মহলে অনেক সংগীতশিল্পী নিজেকে ফলাও করে প্রচার করে তথাকথিত 'তারকা'র আওতাভুক্ত করার জোর চেষ্টা করেন ,তাদের এ চেষ্টাকে লি চিয়েন সমথর্ন করেন না । তিনি মনে করেন , সংগীতবিদদের সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে । সংগীত পরিবেশন ছাড়া লি ছিয়েন নানা ধরনের অনুষ্ঠানে খুব কম অংশ নেন । তিনি মনে করেন সংগীতের সঙ্গে সম্পর্কহীন নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পরিবর্তে তিনি বরং বাসায় থেকে অনুশীলনে মেতে থাকতে চান । তিনি মর্যাদা ও গৌরবের কথা হালকাভাবে মনে করেন এবং সাধাসিধে জীবন যাপন করেন। তিনি বলেন , সংগীত ছাড়া আমি কম্পিউটার পছন্দ করি। কম্পিউটার থেকে আমি অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পারি । অবসর সময় আমি নিজের হাতে কিছু জিনিসপত্র তৈরী করতে আগ্রহী। আমার বাসায় টেবিল বাতিসহ অনেক ছোট ছোট জিনিসে আমি নিজে তৈরী করেছি । কাগজ দিয়ে আমি অনেক কিছু তৈরী করেছি । এ সব কাজ করার সময় আমার মন ভালোথাকে । তা ছাড়া আমি ফুটবল ও বেসবোল দেখতে পছন্দ করি । কোনো কোনো সময় আমি মটরসাইকেলে করে রাস্তার এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি । (ফাং সিউ ছিয়েন)