তিব্বতে তাশি লন্পো মন্দির এমন একটি মন্দির , যেখানে যুগ যুগ ধরে পানচেন লামারা বসবাস করতেন । সম্প্রতি এ মন্দিরের মেরামত ও সংস্কার প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে । চীনের একাদশ পাঁচসালা পরিকল্পনার মেয়াদে প্রধান প্রধান পুরাকীর্তি রক্ষার অন্যতম প্রকল্প হিসেবে এ প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়েছে । এ প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য চীনের কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করেছে । আজ এ অনুষ্ঠানে এ মন্দিরের মেরামত ও সংস্কার সম্পর্কে আপনাদের জানাচ্ছি আমি…
তাশি লনপো মন্দির তিব্বতের ইটখাজে শহরের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে নিমা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত । তার আয়তন ২ লাখ ৩৭ হাজার বর্গ মিটার । মন্দির নির্মাণ করা হয় ১৪৪৭ সালে । ১৭১৩ সাল থেকে যুগ যুগ ধরে পানচিন লামারা এ মন্দিরে বসবাস করতে শুরু করেছেন । গত কয়েক শো বছর ধরে নির্মাণকাজ চালানোর মাধ্যমে ছু ছিং বৃহত্ ভবনকে কেন্দ্র করে এ মন্দিরে ৫৬টি উপাসনা কক্ষ , ৬টি বড় ভবন ও ভিক্ষুদের থাকার জন্য ৬ হাজারেরও বেশি ঘর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । মন্দিরে বিপুল সংখ্যক পুরাকীর্তি সংরক্ষিত রয়েছে । এর মধ্যে ১৯১৪ সালে নির্মিত ২৬.২ মিটার উচ্চ একটি বৃহত্ আকারের ব্রোঞ্জের তৈরী বৌদ্ধ মূর্তি হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম ব্রোঞ্জ বৌদ্ধ মূর্তি । ১৯৬১ সালে তাশি লনপো মন্দিরকে চীনের অন্যতম প্রধান পুরাকীর্তি হিসেবে নিধারণ করা হয়েছে এবং তখন থেকে এ মন্দির ভালভাবে রক্ষার কাজ শুরু হয়েছে । দীর্ঘকাল থেকে মেরামত ও মজবুত না হওয়ার কারণে মন্দিরের বেশ কিছু বাড়িঘর গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এ বারের মেরামত পরিকল্পনা অনুযায়ী মন্দিরের বিভিন্ন উপাসনা ভবন নিয়ে সার্বিকভাবে মোরামত ও সংস্কার করা হবে । এ পরিকল্পনায় দমকল ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সহায়ক প্রকল্পও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পুরাকীর্তি ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা লিউ শি চুং বলেন ,
তাশি লনপো মন্দিরের মেরামত ও সংস্কার প্রকল্প চালানোর ক্ষেত্রে সরকার ১২ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এর মধ্যে চতুর্থ পানচেন লামার স্মৃতি প্যাগোডা , অন্য দু'টো বড় উপাসনা ভবন এবং দমকল ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সহায়ক প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত । জানা গেছে , মন্দিরটি মেরামত ও সংস্কার করার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প ও বড় অংকের অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে । ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে প্রকল্পের নির্মাণকাজ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি কার্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে । লাসা , ইটখাজে , সাননান ও অলি অঞ্চলের এ কার্যালয়ের ৪টি শাখাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । কর্মসূচী অনুযায়ী এ মন্দির আগের ও প্রাচীন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মেরামত ও সংস্কার করা হবে ।
পুরাকীর্তি রক্ষা বিষয়ক কাজ করার জন্য সংরক্ষণের ভিত্তিতে পুরাকীর্তি যথাযোগ্য কাজে লাগানো ও ব্যবস্থাপনা জোরদার করা প্রয়োজন । পুরাকীর্তি রক্ষার নীতি হল প্রাচীন বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা । সুতরাং এ নীতি কার্যকরী করতে হলে ঐতিহ্যের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করতে হবে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে তিব্বতী জাতি ও হান জাতির স্থাপত্যশৈলির সমন্বয় করা উচিত । তাশি লনপো মন্দির মেরামত ও সংস্কার প্রকল্প যে চালু হয়েছে , মন্দিরের ভিক্ষুরা তাকে স্বাগত জানিয়েছেন । তাশি লনপো মন্দিরের ব্যবস্থাপনা কমিটির উপপরিচালক সালুং ফুনল্হা আবেগের সঙ্গে বলেন ,
কেন্দ্রীয় সরকার তাশি লনপো মন্দিরের প্রতি যে ব্যাপক যত্ন নিয়েছে ও সাহায্য দিয়েছে , ভিক্ষুরা তা কখনো ভুলে যাবেন না । ভিক্ষুরা বলেন , তারা দেশ ও জনগণকে ভালবাসার চেতনা সম্প্রসারন করবেন , দশম ও একাদশ পানচেন লামার শিক্ষা ও পরামর্শ মেনে নিয়ে ভালভাবে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করবেন , একাগ্রচিত্তে পার্টির ধর্ম বিষয়ক নীতি কার্যকর করবেন এবং আইন অনুসারে মন্দিরের বিভিন্ন ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম নিশ্চিত করবেন ।
তিব্বত চীনের পুরাকীর্তি বহুল একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল । অঞ্চলে কয়েক হাজার পুরাকীর্তির মধ্যে তিনটি পুরাকীর্তি বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । গত শতাব্দির ৫০ দশকে শান্তিপূর্ণ মুক্তি বিশেষভাবে চীনে উন্মুক্ত ও সংস্কার হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার ও তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকার পুরাকীর্তি রক্ষার ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে । এ ক্ষেত্রে সরকার ৭০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করেছে । কর্মসূচী অনুযায়ী পোতালা ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় , নরবুলিংখা গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ ও সাজিয়া মন্দিরসহ প্রধান পুরাকীর্তি রক্ষার প্রকল্প চালু হয়েছে । এর ফলে কার্যকরভাবে তিব্বতের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষা করা হয়েছে । তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পুরাকীর্তি ব্যুরোর পরিচালক ইয়্যু দা ওয়া বলেন , তাশি লনপো মন্দির ছাড়াও সরকার জোকহান মন্দির ও রামাচে মন্দির মেরামতের ব্যাপারেও বিপুল অংকের অর্থ বরাদ্দ করবে ।
চীনের একাদশ পাঁচসালা মেয়াদে তিব্বতে ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি রক্ষা প্রকল্পসহ আরো কয়েকটি প্রকল্প মেরামত ও সংস্কারের কার্যক্রমও প্রণয়ন করেছে । এ ক্ষেত্রে চীনের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিটি এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ৫৭ কোটি ইউয়ান বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এ পরিমাণ দশম পাঁচসালা পরিকল্পনার মেয়াদের চেয়ে ২০ কোটি ইউয়ান বেশি । এতে তিব্বতের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষার ওপর পার্টি ও রাষ্ট্রীয় সরকারের ব্যাপক মনোযোগ ও বিশেষ যত্ন দেখা দিয়েছে ।
ইয়্যু দা ওয়া বলেন , ৩৩ কোটি ইউয়ান খরচে পোতালা ভবন , নরবুলিংখা গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ ও সাজিয়া মন্দিরের মোরামত প্রকল্প ২০০২ সালের জুন মাসে শুরু হয়েছে । এ সব প্রকল্পে যে অর্থ লাগবে , তা কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে । এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তির মেরামত প্রকল্পের বেশির ভাগ কাজ এ বছরের শেষ নাগাদে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে ।
(থান ইয়াও খাং)
|