দক্ষিণ-পূর্ব চীনের উপকূলীয় আঞ্চলে অবস্থিত ফুচিয়েন প্রদেশের পেছনে পাহাড় আর সম্মুখে রয়েছে সাগর । গ্রীষ্মকালের টাইফুন এবং ঝড়বৃষ্টির ফলে বন্যা এবং কাদা মাটি ও পাথরের প্রবাহসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগেরসৃষ্টি হয় । এই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফুচিয়েন প্রদেশের নিম্নস্তর গ্রামাঞ্চলের নাগরিকদের জানমালের গুরুতর ক্ষতিসাধন করে । এর পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফুচিয়েন প্রদেশ প্রতিটি থানায় এবং প্রতিটি গ্রামে পূর্বাভাষ ব্যবস্থা চালু করেছে । যার ফলে নিম্ন স্তরের গ্রামের দুর্যোগ প্রতিরোধের সামর্থ্য বেড়েছে ।
জানা গেছে , অতীতে ফুচিয়েন প্রদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জরুরী ব্যবস্থা প্রধানতঃবড় আর মাঝারি শহর এবং জেলা শহরের জন্য নেওয়া হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্যা ও ভৌগলিক দুর্যোগের কারণে বাড়ি ধসে পড়া এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বেশির ভাগই গ্রামাঞ্চলে ঘটে । এ কারণে ফুচিয়েন প্রদেশের বিভিন্ন এলাকা গ্রামাঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জরুরী ব্যবস্থা নিয়েছে । ফুচিয়েন প্রাদেশিক সরকারের বন্যা বিষয়ক অফিসের স্থায়ী উপপ্রধান ছিউ তিনমুং বলেন , এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল মানুষের হতাহত ন্যূনতম মাত্রায় কমিয়ে দেয়া । তিনি বলেন , গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বিস্তার করার ফলে গ্রামাঞ্চলএখন সময়মতো দুর্যোগের তথ্য পেতে পারে এবং যে দুর্যোগ বিপদজনক এবং বিপদ ঘটলে কে বিপদজনক এলাকার মানুষ এবং সংশ্লিষ্ট ত্রাণকাজের দায়িত্ব পালন করবে তা বিবেচনা করে স্থির করতে পারে । এর প্রধান উদ্দেশ্য হল জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা ।
ফুচিয়েন প্রদেশের লিয়েনচিয়াং জেলায় আমাদের সংবাদদাতা লক্ষ্য করেছেন যে , বন্যা বিষয়ক জেলা অফিস এবং প্রতিটি থানা প্রতিটি গ্রামে দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ত্রাণ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । কোথায় বিপদ হতে পারে ? সে জায়গার লোকসংখ্যা কত ? কে এখানকার স্থানান্তর এবং কোথায় স্থানান্তরকরার দায়িত্ব পালন করবে পরিকল্পনায় সবই লিপিবদ্ধ রয়েছে ।
লিয়েনচিয়াং জেলার চিয়াংনান থানার চিয়াংনান গ্রামের কয়েকজন ক্যাডার জানিয়েছেন , পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম সময়ে টাইফুন ও ঝড়বৃষ্টিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা সময়মত প্রতিটি পরিবারে পৌঁছাতে পারে এবং দ্রুত বিপদজনক এলাকার নাগরিকদের সরাতে পারে । এখন আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি , কোন জায়গা সহজেই দুর্যোগে আক্রান্ত হতে পারে । আক্রান্ত হলে আমরা প্রথমেইতাদেরকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করার কথা জানাতে পারছি ।
গত বছর সিপাত নামে অতি প্রবল একটি টাইফুন ফুচিয়েন প্রদেশের ওপর আঘাত হানার আগে আও চিয়াং নদীর পানি বিপদজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে । এই নদীর তীরে অবস্থিত লিয়েনচিয়াং জেলার অবস্থা অতি বিপদজনক । পূর্বাভাস ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এই জেলার হাজার হাজার মানুষ দ্রুতভাবে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পেরেছেন । এ সম্পর্কে লিয়েন চিয়াং জেলার বন্যা বিষয়ক অফিসের উপপ্রধান ছেন মিংফু বলেন , সিপাত টাইফুনের সময় পর্যন্ত ইতিহাসে আও চিয়াং নদীতে দ্বিতীয়বার বন্যা হয়েছে । কিন্তু পূর্বাভাস ব্যবস্থা অনুযায়ী আমরা সকল নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছি ।
জানা গেছে , ফুচিয়েন প্রদেশের বিভিন্ন এলাকা নিম্নস্তর গ্রামের দুর্যোগ প্রতিরোধকাজের ওপর খুবই গুরুত্ব দেয় । গত বছরের শেষ নাগাদ গোটা প্রদেশের ১৫০০০টি প্রশাসনিক গ্রাম দুর্যোগ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে ।
টাইফুনের মৌসুম আসার প্রাক্কালে ফুচিয়েন প্রদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, গোটা প্রদেশের ১০০০টি থানা ও গ্রামে জরুরী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম কেনার জন্য ১০ কোটি রেন মিনপি বরাদ্দ করা হবে । --চুং শাওলি
|