২০০২ সালে তাইওয়ানের বিখ্যাত পন্ডিত পাই সিয়েন ইয়োন সু চৌ খুনছু থিয়েটারে যান । তিনি সু চৌ খুনছু থিয়েটারের সঙ্গে খুন ছু অপেরা উন্নয়নের উন্নয়নের ব্যাপারে মত বিনিময় করেন । আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দু' পক্ষ শহরের তরুণ সম্প্রদায়ের জন্য নতুন খুনছু অপেরা ' মু তান থিন ' মঞ্চস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয় । চীনের মূলভূভাগ , হংকং ও তাইওয়ানের অনেক অপেরা বিশেষজ্ঞ এই কাজে অংশ নিয়েছেন । পাই সিয়েন ইয়োন আশা করেন ইয়ু চিউ লিন ' মু তান থিনের' প্রধান চরিত্র লিউ মান মেইয়ের চরিত্রে অভিনয় করবেন । তখন থেকে ইয়ু চিউ লিনের ভাগ্যে পরিবতর্ন এসেছে ।
খুনছু অপেরার এই নতুন অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করার জন্য ইয়ু চিউ লিন প্রবীণ খুনছু শিক্ষক ওয়াং সি ইয়ুর কাছে শিখতে শুরু করেন । ইয়ু চিউ লিন বলেন , শিক্ষক ওয়াং খুনছু মহলের শীর্ষ পর্যায়ের অভিনেতা , তার কাছ থেকে শেখার সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই খুব খুশি । তিনি শুধু একটি অপেরাই আমাকে শেক্ষান না ,বরং আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে তার ছাত্র হিসেবে গ্রহণ করতে রাজী হয়েছেন । চীনের ঐতিহ্য অনুসারে শিল্পী ছাত্র গ্রহণ অনুষ্ঠানে ছাত্রকে শিক্ষকের সামনে নতজানু হয়ে প্রণাম করতে হয় । ইয়ু চিউ লিন অন্য ছয়জন প্রধান অভিনেতা অভিনেত্রীর সঙ্গে অনুশীলন করেন । তার বয়স তখন প্রায় ত্রিশ বছর হয়েছে বলে অপেরা স্কুলে পড়ার সময়ের মতো অনুশীলন করা তিনি কঠিন মনে করেন । তবে তাইওয়ানের পন্ডিত পাই সিয়েন ইয়োন ও শিক্ষক ওয়াং সি ইয়ুর ধারণা , এ অপেরা তরুণ সম্প্রদায়ের দশর্কদের জন্য তৈরী হচ্ছে বলে অপেরার অভিনয়ে তারুণ্য দেখাতে হবে । তাই তাদের অনুশীলন কড়াকড়ি । বিশ ত্রিশ বছর হলেও অভিনেতা অভিনেত্রীকে সোলো সতের বছরের ছেলেমেয়েদের মতো অনুশীলন করতে হত। তাদের কঠোর অনুশীলনের সুফল হিসেবে দশর্করা এ অনুষ্ঠান দেখতে খুব পছন্দ করেন । অনুষ্ঠান পরিবেশনের সময় শিক্ষক ওয়াং সি ইয়ু মঞ্চের নীচে বসে দেখেন এবং তাদের উত্সাহ দেন । ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে ' মু তান থিন' প্রথমে তাইওয়ানে মঞ্চস্থ করা হয়। অনুষ্ঠানের আগে পাতাল রেল স্টেশনগুলোতে এ অনুষ্ঠানের বড় বড় প্রচারপত্র এঁটে দেওয়া হয়। প্রচারপত্রে অভিনেতা অভিনেত্রীর সুন্দর সুন্দর ছবি তাইওয়ানের দশর্কদের দৃষ্টিআকষর্ণ করে । প্রথম অনুষ্ঠানেই থিয়েটারে কোনো সীট খালি ছিল না । দশর্করা মনোযোগ সহকারে অনুষ্ঠানটি দেখেন । থিয়েটারে এক সময় এত নিস্তব্ধ ছিল যে একটি সূচ পড়ার শব্দও শোনা যেতো। এ খুনছু অপেরা পাশ্চাত্য দেশে পরিবেশনের সময়ও দশর্কদের সমাদর পেয়েছে । ইয়ু চিউ লিন বলেন , এ অপেরা যুক্তরাষ্ট্রে চারবার মঞ্চস্থ হয়েছে । প্রত্যেকবারই অনুষ্ঠানের দশর্করা চলে যেতে চান নি। তিনি বলেন , প্রতিটি অনুষ্ঠান শেষে সব অভিনেতা অভিনেত্রী মঞ্চে দাঁড়িয়ে দশর্কদের ধন্যবাদ জানান । আমরা মঞ্চে ১৫ মিনিট দাঁড়িয়েও থাকলেও দশর্করা চলে যান নি । মঞ্চের সব বাতি নিভিয়ে দেওয়ার পরই তারা জোরে হাত তালি দিতে দিতে থিয়েটার হল ত্যাগ করেন । এর আগে বিদেশে মূল ভূভাগের অপেরাগুলোর মধ্যে কুংফু অপেরা বেশি ছিল । দশর্করা বলেন , ' মু তান থিনের ' মতো রোমান্টিক প্রেমের কাহিনীর অপেরা আমরা এই প্রথমবার দেখেছি । আমরা ভাবতে পারি নি যে চীনের ঐতিহ্যিক অপেরা এত সুন্দর । ইয়ু চিউ লিন বলেন , এ অপেরা অভিনয়ের মধ্য দিয়ে খুনছু অপেরা সম্পর্কে তার অনুভূতিও আগের চেয়ে গভীর হয়েছে । তিনি ভাবতেও পারেন নি যে চীনের ও বিদেশের দশর্করা খুনছু অপেরাকে এত পছন্দ করতে পারেন । তিনি মনে প্রাণে প্রতিজ্ঞাকরেন , তিনি তার সারা জীবনই খুনছু অপেরায় কাটিয়ে দেবেন ।
চিয়াংসু প্রদেশের সু চৌ খুনছু থিয়েটার জাপানের নৃত্যশিল্পীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে নৃত্যনাট্য স্টাইলের খুনছু অপেরা ' মু তান থিন' পরিবেশন করেছে । তার পর ' মু তান থিন ' সম্পর্কিত বইপত্র ও ভিডিও ক্যাসেটও বের হয়েছে । ' মু তান থিন' নামে একটি ব্যালে নৃত্যও চীনে মঞ্চস্থ হয়েছে । ' মু তান থিন ' একটি অলীক কাহিনীর মতো ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির প্রতি চীনাদের ভালোবাসার উদ্রেক করেছে । ইয়ু চিউ লিন বলেন , আমি মনে করি , খুনছু ' মু তান থিন ' চীনের অপেরা তথা সংস্কৃতির উন্নয়ন তরান্বিত করেছে । খুনছুর একটি বিখ্যাত ঐতিহ্যিক অপেরা হিসেবে ' মু তান থিন ' সমাজে বিরাট প্রভাব সৃষ্টি করেছে । এ অপেরা খুনছুর জনপ্রিয়তাকে বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি প্রচার করছে ।
ইয়ু চিউ লিন বলেন , এ বছরের জুন মাসে বৃটেন থেকে ফিরে আসার পর তারা একটি নতুন খুনছু অপেরা তৈরী করবেন। অপেরাটির নাম ' ইয়ু চুয়ো চি ' । এটিও একটি ঐতিহ্যিক অপেরা , এতে তরুণতরুণী দের প্রেমেরকাহিনী বণর্না করা হয়েছে । (ফাং সিউ ছিয়েন) 1 2
|