৩ জুন থেকে জাতি সংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বিশ্ব খাদ্যশস্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন রোমে শুরু হয়েছে। ১৫০টিরও বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার উর্ধ্বতন প্রতিনিধি এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। খাদ্যশস্যের দাম দ্রুত বাড়ার পটভূমিতে বিশ্বের খাদ্যশস্য নিরাপত্তার ওপর জলবায়ুর পরিবর্তন ও জৈব জ্বালানির চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এবারের সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়।
জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দুনিয়ায় ৮৬ কোটি ক্ষুধাপীড়িত মানুষ আছে। ক্ষুধা দূর করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দীর্ঘকালীন প্রচেষ্টার অন্যতম লক্ষ্য। কিন্তু খাদ্যশস্য নিরাপত্তা বাস্তবায়ন করতে চাইলে খাদ্যশস্যের বর্তমান উচ্চ মূল্যের কঠোর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এবার সম্মেলনের মহাসচিব, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক আলেক্সান্ডার মুল্লার সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, 'কৃষি নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। খাদ্যশস্যের দাম গত ৩০ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে। বর্তমানের খাদ্য পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক খারাপ। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন শহরে দরিদ্র মানুষ যথেষ্ঠ পরিমাণ খাদ্য কিনতে না পারায় রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবাদে নেমেছে। এ থেকে বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনাও ঘটেছে। বেশ কয়েকটি দেশে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।'
খাদ্যশস্যের উচ্চ মূল্যের দরুণ খাদ্য নিরাপত্তার ব্যাপারে মানুষ সচেতন হয়ে উঠেছে। জৈব জ্বালানির চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি মোটরগাড়ি ও মানুষের পেটের সঙ্গে খাদ্যশস্য ও জ্বালানির সংঘাতময় পরিস্থিতি খাদ্যশস্যের দাম বাড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। মুলারসহ অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জৈব জ্বালানি উন্নয়ন খাদ্যশস্য নিরাপত্তা ও গোটা বিশ্বের টেকসই উন্নয়নের ওপর প্রভাব ফেলতে পারবে না। মুলার বলেন, 'আমরা দেখেছি, এক দিকে খাদ্যশস্যের চাহিদা নিরন্তরভাবে বাড়ছে। অন্য দিকে জ্বালানি সম্পদের চাহিদাও বাড়ছে। কৃষি খাতে জ্বালানি উত্পাদন করা যায়, কিন্তু বিনিয়োগও দরকার। সুতরাং আমাদের সঠিক পদ্ধতিতে জৈব জ্বালানির মাধ্যমে কিছু সমস্যা সমাধান করা নিতে হবে। অর্থাত্ জৈব জ্বালানি উত্পাদনকে টেকসই উন্নয়ন পথে এগিয়ে নিতে হবে। এটা খাদ্যশস্য নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবে না।'
তবে জৈব জ্বালানি উন্নয়নের পদ্ধতির ব্যাপারে বিভিন্ন দেশ এখনো মতৈক্যে পৌঁছতে পারে নি। এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন পক্ষের জৈব জ্বালানি উন্নয়ন বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা নিয়ে মুলার বলেন, 'আমরা আশা করি, বিভিন্ন পক্ষ এবারের সম্মেলে জৈব জ্বালানির সুযোগ ও সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে অভিন্ন উপলব্ধিতে পৌঁছবে এবং জৈব জ্বালানি উত্পাদন যে খাদ্যশস্য নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না এ বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছতে পারবে। এর ভিত্তিতে আমরা জৈব জ্বালানি উত্পাদন থেকে দরিদ্র মানুষের লাভবান হওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে পারবো। চলমান সম্মেলনটি হচ্ছে এক অভুতপূর্ব সুযোগ এবং শুভসূচনা।'
কৃষি উত্পাদনকে কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যায়। সেটা এবারের সম্মেলনের আরেকটি প্রধান আলোচ্য বিষয়। গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, পৃথিবীর জলবায়ু উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশ্বের খাদ্যশস্য উত্পাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় কৃষি দ্বৈত ভূমিকা পালন করে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও ৪০ জনেরও বেশি রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের ২৫০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ সুযোগে কৃষির টেকসই উন্নয়ন ক্ষেত্রে মতৈক্যে পৌঁছবে বলে আমরা আশাবাদী। মুলার বলেন, 'আমি খুব খুশি হয়েছি যে, অনেক দেশের শীর্ষনেতা ও সরকার প্রধান এবারের সম্মেলনে এসেছেন এবং সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত প্রকাশ করেছেন। আমরা আশা করি, সম্মেলন শেষে একটি ঘোষণা প্রকাশিত হবে। ঘোষণায় কৃষি বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে। আমাদের স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচী সমন্বয় করে কাজ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ উদ্যোগে এ দায়িত্ব সম্পন্ন করতে হবে।'(ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|