সপ্তম শতাব্দীতে বৌদ্ধ ধর্ম চীনের মূলভূভাগ ও ভারত থেকে তিব্বতে সম্প্রসারিত হয়। বহু বাধা বিঘ্ন অতিক্রমের পর তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ হয়েছে এবং ধীরে ধীরে সেখানে নিজের বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠেছে।
তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্ম বিশেষ করে চীনের তিব্বতী জাতি অধ্যুষিত অঞ্চল ও অন্তঃর্মঙ্গোলিয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলেই প্রচলিত। তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্ম উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় নানা দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন এসব প্রধান ধর্মসম্প্রদায় হিসেবে রয়েছে নিংমা গোষ্ঠী, গেগয়ু গোষ্ঠী, সাগয়া গোষ্ঠী ও গেলুগ গোষ্ঠী।
সপ্তম শতাব্দীতে সোংতসান গাম্বোর শাসনামলে তিব্বত আনুষ্ঠানিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়। সোংতসান গাম্বো পর পর নেপালের রাজকুমারী ব্রিকুতি দেবী ও থাং রাজবংশের রাজকুমারী ওয়েনচেনকে বিয়ে করেন। এই দু'জন রাজকুমারী ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তারা তিব্বতে প্রবেশের সময় বহু বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ও বুদ্ধমূর্তি নিয়ে আসেন। ফলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মও তিব্বতে প্রবেশ করে। সোংতসান গাম্বো বৌদ্ধ ধর্মের ওপর গুরুত্ব দেন এবং এর বিকাশে সহায়তা করেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মের আলোকে দেশের আইন ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। প্রশাসকের জোরালো সমর্থনে ও সহায়তায় বৌদ্ধ ধর্ম থুফেন অর্থাৎ বর্তমান তিব্বত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে তিব্বতের ইতিহাসে বৌদ্ধ ধর্মকে নিষিদ্ধ করার ঘটনাও রয়েছে। ১১ ও ১২ শতাব্দীতে বৌদ্ধ ধর্ম পুনর্বার তিব্বতে জনপ্রিয় হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের যৌথ প্রচেষ্টায় বৌদ্ধ ধর্মের ভিত্তি ধাপে ধাপে সুসংবদ্ধ ও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখে। তিব্বতে সামন্ততান্ত্রিক বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ধারাবাহিকভাবে আবির্ভুত হওয়ার পাশাপাশি তিব্বতের বৌদ্ধ ধর্মও বিভিন্ন অঞ্চলে কেন্দ্রীয় শক্তির ভিত্তিতে নানা ধর্মসম্প্রদায় গড়ে উঠে। নিজেদের ভিন্ন মত নিয়ে ধর্মসম্প্রদায়গুলো তিব্বতের স্থানীয় শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে। তারা পরস্পরকে সমর্থন ও পরস্পরের ওপর নির্ভর করতে শুরু করে। অবশেষে বৌদ্ধ ধর্ম তিব্বত শাসনের ভূমিকায় রূপ নেয় এবং স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ধর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। এটা হচ্ছে তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্ম। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|