v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-27 20:26:56    
চীনে তিব্বতী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতির সার্বিক বিকাশ

cri

    চীনের ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতি হিসেবে তিব্বতী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতির বয়স ২ হাজার ৩ শো বছরেরও বেশি । তিব্বতে তিব্বতী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতি ব্যবস্থা এ অঞ্চলের সকল থানায় ছড়িয়ে পড়েছে । এ পর্যন্ত এ অঞ্চলে ১০টিরও বেশি চিকিত্সা প্রতিষ্ঠান রয়েছে । কয়েক হাজার চিকিত্সা কর্মী এ সব চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন ।

    অধ্যাপক ডনদ্রুপ তিব্বতের তিব্বতী ওষুধ গবেষণাগারের প্রধান । গত শতাব্দির পঞ্চাশের দশকে তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ছিলেন তিব্বতী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতি বিষয়ক প্রথম দফা গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি প্রাপ্ত ছাত্র । গত ৫০ বছর ধরে তিনি অবিরামভাবে তিব্বতী চিকিত্সা কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন । রোগীর চিকিত্সা করা , ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো এবং চিকিত্সা গবেষণার কাজ চালানো তার নিত্যকার কাজ । তিব্বত তিব্বতী মেডিক্যাল কলেজে তিনি যে আরো বেশি ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে পারছেন , এটা তার সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার । তিব্বতী ওষুধ ও ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সা পদ্ধতি উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করা যেতে পারে বলে তিনি আশা করেন । তিনি বলেন , আগে এই কলেজে শুধু ৩ শোর কিছু বেশি ছাত্রছাত্রী ঐতিহ্যবাহী তিব্বতী চিকিত্সা পদ্ধতি শিখতেন । এখন এই সংখ্যা ১ হাজার ৪৪০ জনে দাঁড়িয়েছে । সেজন্য তিব্বতী ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতি সুষ্ঠুভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করেছে । অধ্যাপক ডনদ্রুপ বলেন , তিব্বতী ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতি যে এত দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে , তার মূলে রয়েছে দীর্ঘকাল ধরে এই বিষয়ে চীন সরকারে সাহায্য ও মনোযোগ । সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ হওয়ার পর থেকে তিব্বতের বিভিন্ন পর্যায়ের তিব্বতী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতি বিষয়ক চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানের কাজের ব্যাপারে চীন সরকার চল্লিশ- পঞ্চাশ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করেছে । ১৯৫৯ সাল আগে তিব্বতে মাত্র দু'টো হাসপাতাল ছিল । এই দু'টো হাসপাতালে শুধু শাসক , সামন্তবাদীপ্রভু এবং উর্ধ্বতন পর্যায়ের ভিক্ষুদের সেবা করা হতো । এখন তিব্বতের প্রায় সকল জেলার হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের জন্য ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সা বিভাগ গড়ে তোলা হয়েছে ।

    তিব্বতী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতির উন্নতি ত্বরান্বিত করার জন্য ১৯৮৫ সাল থেকে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে তিব্বতী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতি সুরক্ষা ও বিকশিত করার ১০টি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে । গত বিশ বাইশ বছর ধরে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে তিব্বতী চিকিত্সা পদ্ধতি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কাজ ক্রমাগত বেড়ে গেছে । তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তিব্বতী মেডিক্যাল কলেজ , ছিংহাই তিব্বতী মেডিক্যাল কলেজ , ছেনতু চীনা মেডিক্যাল কলেজ ও কানসু চীনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী স্নাতক পাস করেছেন । এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে বেশ কিছু তিব্বতী চিকিত্সক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে । এতে তিব্বতের বিভিন্ন অঞ্চলে তিব্বতী চিকিত্সকের অভাব পূরণ করা হয়েছে । ২০০৬ সালের শেষ নাগাদ তিব্বতে ১৪টি তিব্বতী হাসপাতাল , বিভিন্ন জেলার অধীনস্থ ৬০টিরও বেশি তিব্বতী চিকিত্সা বিভাগ গড়ে তোলা হয়েছে । প্রায় ২ হাজারেরও বেশি চিকিত্সক এ সব চিকিত্সা বিভাগে কাজ করছেন । তিব্বত ছাড়া চীনের অন্যান্য দশ বারোটি শহরেও তিব্বতী চিকিত্সা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এই সব চিকিত্সা বিভাগে চীনের অভ্যন্তরভাগের রোগীদের জন্যও চিকিত্সা সেবা যোগানো হচ্ছে । তিব্বতী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতির দ্রুত বিকাশ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যক্তিদের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে । বহু দেশের বিশিষ্ট অতিথিরা তিব্বতী হাসপাতাল পরিদর্শনের জন্য তিব্বতে আসেন । বিদেশে সফর এবং তিব্বতী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজনের জন্য তিব্বতী চিকিত্সা প্রতিনিধি দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয় । এ সব প্রশিক্ষণ কোর্সের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের ব্যক্তিরা চিকিত্সা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন ।

    তিব্বতী ওষুধ ও চিকিত্সা কাজের বিকাশ আরো বেশি ত্বরান্বিত করার জন্য ১৯৯২ সালে পেইচিংয়ে তিব্বতী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয় । গত কয়েক বছরে এই হাসপাতালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক প্রসিদ্ধ তিব্বতী চিকিত্সকগণ কাজ করছেন । এ সব হাসপাতালের হৃদ রোগ ও রক্তনালী রোগ বিভাগ , ডায়াবেটিক বিভাগ ও তিব্বতী যকৃত্ রোগ বিভাগ দেশের কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের চিকিত্সা বিভাগ বলে নির্ধারণ করা হয়েছে । তিব্বতী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক নিমাসেরিং বলেন , জানা গেছে , প্রতি বছর পেইচিং তিব্বতী হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা বিদেশী অতিথিদের সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি । এ পর্যন্ত এ হাসপাতালে ৬০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৩ লাখ রোগীকে চিকিত্সা দেয়া হয়েছে ।

    তিব্বতে তিব্বতী ওষুধ তৈরির কাজ দ্রুত প্রসারিত হয়েছে । এ পর্যন্ত বিশ বাইশ ধরনের তিব্বতী ওষুধ আনুষ্ঠানিকভাবে চীন গণ প্রজাতন্ত্রের ওষুধপত্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । তিব্বত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক নিমা সেরিং বলেন , তিব্বতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন হয়েছে । বহু দেশের লোকেরা তিব্বতী ওষুধ ও চিকিত্সা পদ্ধতি গবেষণার কাজে নিয়োজিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন । সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ হওয়ায় আগের চেয়ে বর্তমানে তিব্বতে তিব্বতী ওষুধ তৈরি কারখানার সংখ্যা ১৮ বেড়ে উনিশে দাঁড়িয়েছে । এ সব ওষুধ কারখানায় ৩৬০ জাতের ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে । এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তিব্বতী ওষুধের ব্যাপক ভবিষ্যত্- সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । সেজন্য তিব্বতী ওষুধের ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগের জন্য বেশ কয়েকটি বিদেশী শিল্প গোষ্ঠীও তিব্বতে প্রবেশ করেছে ।

(থান ইয়াও খাং)