১২ মে সিছুয়ান প্রদেশের ওয়েন ছুয়ান ভূমিকম্পের পর চীন দ্রুত ও ফলপ্রসু তার সঙ্গে ত্রাণ কাজ করে যাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর প্রশংসা পেয়েছে। ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও ত্রাণকর্মের মাধ্যমে বিশ্ব, একটি কর্মক্ষম ও দায়িত্বশীল সরকারকে দেখেছে, দেখছে আরো একটি উন্মুক্ত ও নিরপেক্ষ সমাজ এবং আরো ঐক্যবদ্ধ হওয়া চীনাদের এসব কিছুই স্বাভাবিক অবস্থায় চলছে।
ভূমিকম্পের মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও অবিলম্বে দুর্গত এলাকায় গিয়েছেন। চীনের গণ কল্যাণ, পরিবহন, চিকিত্সা ,গণ-নিরাপত্তা ও টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দ্রুতভাবে জরুরী ব্যবস্থা চালু করেছে। পেইচিংয়ে লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস পত্রিকার সংবাদদাতা বাই সি হুই'এর এক নিবন্ধে প্রশংসা করে লিখেছেন যে, চীন সরকারের ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও ত্রাণকর্মের গতি খুব দ্রুত। বিশ্বের জনগণ একটি নতুন এবং একটি সহানুভূতিশীল ও যোগ্যতর চীনকে দেখেছে।
এবারের মহা ভূমিকম্পে চীনের তথ্য প্রদান ও প্রকাশের পদ্ধতি দেশ ও বিদেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। চীন ভূমিকম্পের দশ মিনিটের মধ্যেই ভূমিকম্পের তথ্য প্রকাশ করেছে। চীনের সংবাদ মাধ্যমও দ্রুত ভূমিকম্পের সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতি প্রচার করেছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও কিছু প্রদেশের টেলিভিশন দৈনন্দিন অনুষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ করে ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও উদ্ধার অভিযানের বিষয়টি সরাসরি সম্প্রচার করেছে।
বিবিসি বলেছে, চীনের সংবাদ মাধ্যম সরকারের নেতৃত্বে ত্রাণ কাজের বিবরণ প্রকাশের পাশাপাশি নিহতদের সংখ্যা, ত্রাণকর্মের প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন পক্ষের সাহায্যসহ বিস্তারিত সংবাদ প্রচার করেছে। ব্রিটেনের ফিন্যানশিয়াল টাইমস পত্রিকা বলেছে, চীন সরকার সিছুয়ান প্রদেশের ওয়েন ছুয়ান ভূমিকম্পে দ্রুত অভিযান চালানোর প্রশংসা করেছে। চীন ভূমিকম্পের গুরুতর অবস্থা সম্পর্কে কোন তথ্যই গোপন করতে চায় নি।
এবারের ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও ত্রাণকর্মে চীনের জনগণও সক্রিয় অবদান রাখছে। ২১ মে পর্যন্ত সারা দেশে ১৪ বিলিয়ন ইউয়ানের বেশি চাঁদা সংগ্রহীত হয়েছে। সরকারের ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও ত্রাণকর্মের পাশাপাশি বহু স্বেচ্ছাসেবকও বিভিন্ন স্থান থেকে দুর্গত এলাকায় গিয়ে ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও ত্রাণকর্মের জন্য নিজের অবদান রাখছে। সিঙ্গাপুরের লিয়েন হো জাও বাও পত্রিকা বলেছে, সিছুয়ান প্রদেশের ওয়েন ছুয়ান ভূমিকম্পে চীনারা বিস্মিত হয়েছে এবং এর ফলে চীনাদের দেশপ্রেমও আরও সমন্বিত হচ্ছে। আরেকটি সংবাদ মাধ্যম বলেছে, এবারের ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও ত্রাণকর্মেচীনাদের নাগরিক চেতনা আরো উন্নত হচ্ছে এবং সমাজও আরো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চীনের এবারের ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও ত্রাণকর্মকে স্বীকৃতি ও প্রশংসা করার পাশাপাশি কিছু সংবাদ মাধ্যম মনে করে, চীন এবারে দ্রুত ও ইতিবাচক অভিযান চালিয়ে শুধু চীন সরকারের পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রতি তার সার্বিক ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। তবে কয়েকটি বিদেশী সংবাদ মাধ্যম চীনের এবারের অভিযানে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। তারা মনে করে, রোম এক দিনে নির্মিত হয় নি। তবে একই অবস্থা হচ্ছে চীনের এবারের ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও ত্রাণকর্মে নিজেদের গতি, যোগ্যতা, কর্মক্ষমতা ও আস্থা যেন এক দিনেই হয়েছে। এবার হচ্ছে চীনের উন্নয়নের বিভিন্ন পক্ষের একটি অংশ।
১৯৭৮ সালে চীনে সংস্কার ও মুক্তদ্বার নীতি বাস্তবায়নের পর চীনের অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতদিন শুধু চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের দিকটাই দেখেছে। আপনি চীনের বাস্তবমুখিনতা দেখলে , চীনাদের সঙ্গে আরো বেশি যোগাযোগ করলে ও মিশলে আপনি খুব সহজেই চীনকে আরো সার্বিকভাবে জানতে ও বুঝতে পারবেন।(লিলু)
|