বন্ধুরা, আপনারা এখন শুনচ্ছেন উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশের ছাংশুন শহরের ফেনচিন থানার একটি সাধারণ মাধ্যমিক স্কুলের একজন ছাত্রী ছাং ইউয়ের বই পড়ার কন্ঠ স্বর। কিন্তু মাত্র এক বছরের আগেও এসব ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই দারিদ্রের কারণে শিক্ষার ফি দিতে পারতো না বলে শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। গত বছর থেকে চিলিন প্রদেশের গ্রামে বাধ্যতামূলক শিক্ষা পর্যায়ে সব শিক্ষা ফি আর দিতে হবে না এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর ফলে এখন অনেক বেশি শিশুই পুনরায় তাদের স্কুলে ফিরে এসেছে। তারা শিক্ষার মুখ দেখছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে এ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সম্পর্কে কিছু কথা জানাবো।
চাং ইউয়ে ফেনচিন থানার ইচিয়ান গ্রামের ২৭তম মাধ্যমিক স্কুলের একজন ছাত্রী। পরিবারের দরিদ্র ক্লিষ্ট ও কঠিন জীবনযাত্রা সম্পর্কে ১৫ বছর বয়সী ছাং ইউয়ে বয়স্কের মত করে বলেন, 'আমার এখনও মনে আছে আমার বয়স যখন মাত্র ৫ ও ৬ বছর তখন আমার বাবা ও মা বিবাহ বিচ্ছেদ করেন। বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যান। তখন আমার মা একাই আমাকে পালন করতে থাকেন। আমি লেখা পড়া করতে চাই। কিন্তু আমার মার স্বাস্থ্য ভাল না। তার তেমন একটা রোজগারও নেই। আমার সবসময় তখন মনে হতো আমি এ বাড়ির একটি বোঝা।'
এরপর চাং ইউয়ের মা অন্য আরেক কৃষককে বিয়ে করেন। চাং ইউয়ের সতবাপ বাইরে কাজ করে বেশি আয় করতে পারেন না। সেজন্য চাং ইউয়ে স্কুলে তারা শিক্ষা গ্রহণ করবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
চাং ইউয়ের শিক্ষক ইয়াং শাওসিং চাং ইউয়ের বাসার পরিস্থিতি জানার জন্য তিন বারের মত চাং ইউয়ের বাসায় আসেন। তিনি বলেন, 'আমি চাং ইউয়ের বাসা পরিদর্শনের পর জানিয়েছি, দরিদ্র শিশু হলেও সে শিক্ষা গ্রহণ করতে চায়। চাং ইউয়ের স্কুলে নেয়া পড়া করার প্রত্যাশ্যার কথা আমি ভুলে যাবো না। চাং ইউয়ে দিনলিপিতে লিখেছে আমি আশা করি, আমি তাড়াতাড়ি বড়ো হয়ে উঠে মাকে পরিবারের সবার কঠিন সমস্যা সমাধানের সহায়তা করবো।
২০০৭ সাল থেকে সারা চীনের গ্রামে বাধ্যতামূলক শিক্ষা পর্যায়ে এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষা ফি তুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া গ্রামগুলোয় দরিদ্র পরিবারের ছাত্রছাত্রীদেরকে বার্ধ্যতামূলকভাবে বই সরবরাহ ও আর্থিক সহায়তা দেয়াও শুরু হয়েছে। এর ফলে সারা চীনের ১৫কোটি গ্রামীন ছাত্রছাত্রী বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে।
এ সুখবর পেয়ে চাং ইউয়ের বাড়ির সবাই অনেক আনন্দিত। চাং ইউয়ের মা ছি সিউফিং কল্পনা করেন নি যে, কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষকদেরকে বোঝা কমানোর নীতি এত তাড়াতাড়ি তাদের মধ্যেও বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি বলেন, 'আমরা সবাই কেন্দ্রীয় সরকারকে শিশুদের প্রতি মনোযোগ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এ নীতিতে দরিদ্র শিশুদের পুনরায় স্কুলে লেখাপড়ার প্রত্যাশ্যা রয়েছে।'
এর ফলে চাং ইউয়ে পুনরায় স্কুলে ফিরে এসেছে। আরেকজন ছাত্রী ইয়াং ওয়েনও দরিদ্র পরিবারের একজন শিশু। তার বাবা মা দুই জন প্রতিবন্ধী মানুষ। বড় ভাই বাইরে লেখাপড়া করেন। তার দাদাও তার বাসায় থাকেন। প্রতি মাসে সারা পরিবারের আয় মাত্র ৭শো ইউয়ান রেনমিনপি। ইয়াং ওয়েন ছোট বেলা থেকে নিজের বাসায় বেশি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, 'প্রতি দিন ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে যাই। আমি যথাসম্ভব পাগির কাজ করার চেষ্টা করি। এর মধ্যে কৃষি কাজও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।'
ইয়াং ওয়েনের মা একজন তৃতীয় পর্যায়ের প্রতিবন্ধী মানুষ। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় আশা হল দুই ছেলে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে পারা। কিন্তু দুই ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করার জন্য তিনি নিজের পরিচিত মানুষের কাছ থেকে ঋণ নেন। ইয়াং ওয়েন জানে, নিজের বাড়ির আয় শুধু মাত্র শিশুর শিক্ষা ফি দিতে সক্ষম। ইয়াং ওয়েন পাড়ির বোঝায় সপরিবারের হতে চায় না। সেজন্য ইয়াং ওয়েন মাকে বড় ভাইর শিক্ষা ফি দেয়ার সুযোগ দিয়ে সে বাইরে কাজ খোঁজার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ইয়াং ওয়েনের এ অবদান স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদেরকে মুগ্ধ করেছে। ছাত্রছাত্রীরা নিজের হাত খরচ সংগ্রহ করে তাকে দিয়েছে। তারা আশা করে, ইয়াং ওয়েন অব্যাহতভাবে তাদের সঙ্গে লেখাপড়া করবে।
ছয় মাসের পর চিলিন প্রদেশে গ্রামে বাধ্যমূলক শিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষা ফি বাতিলের নীতি বাস্তবায়িত শুরু হয়। ইয়াং ওয়েন এ তথ্য পেয়ে অনেক আনন্দিত। তিনি বলেন, 'তখন আমার মন হাঠত্ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সে মনে করে, নিজের আশা বাস্তরবায়িত হবে। ভবিষ্যতে মার সুখ জীবন হবে।'
ফেনচিন থানার ২৭তম মাধ্যমিক স্কুলের অধ্যক্ষ চাং আনহুই বলেন, চাং ইউয়ে ও ইয়াং ওয়েনের মত শিশু স্কুলে আরো বেশি রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামে শিক্ষা ফি বাতিল নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব শিশুরা শহরের শিশুদের মতই লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে। চাং আনহুই মনে করেন, এ নীতির বাস্তবায়ন গ্রামীনবাসীদের গুণগতমান উন্নয়নের জন্য অনুকূল। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'চীন আসলে একটি বৃহতর কৃষি প্রধান দেশ। চীনের বেশির ভাগ লোক গ্রামেই বসবাস করে। শিক্ষার পর্যায় গ্রামবাসীর গুণগতমান নির্ধারণ করে। গ্রামের উন্নয়ন চীনের উন্নয়ন ও শিক্ষার পর্যায়ের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়। সেজন্য আমি মনে করি গ্রামীন শিশুদেরকে ন্যায়্য, ভারসাম্য ও উত্কৃষ্ট প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত।'
চিলিন প্রদেশের শিক্ষা ব্যুরোর সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০০৮ সাল থেকে বাধ্যমূলক শিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষা ফি বাতিল করা ছাড়াও চিলিন প্রদেশ গ্রামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ২০লাখেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে বই দেবে। পাশাপাশি গ্রামে দরিদ্র পাড়িগুলোকে সরকার আগের চেয়ে দ্বিগুণ ভর্তুকি দেবে।
|