v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-21 19:28:58    
চীনের প্রাচীন টেরাকোটা জাদুঘরের প্রধান লু তোং চি(ছবি)

cri

    ১১ বছর আগে লু তোং চিয়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন টেরাকোটা সমৃদ্ধ একটি জাদুঘর পেইচিংয়ে টেরাকোটার প্রদর্শন করে যাচ্ছে । চীনের অন্যতম বেসরকারী জাদুঘর হিসেবে প্রাচীন টেরাকোটা জাদুঘরটি চীনের টেরাকোটা সমৃদ্ধ জাদুঘর মহলের বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকষর্ণ করেছে । ১১ বছর পার হয়েছে গেছে , লু তোং চি এখনও তার আশা ও প্রত্যয়ে অটল রয়েছেন । আজকের অনুষ্ঠানে পেইচিংয়ের প্রাচীন টেরাকোটা জাদুঘরের প্রধান লু তোং চির সঙ্গে শ্রোতাবন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দেবো ।

    প্রাচীন টেরাকোটা জাদুঘর পেইচিংয়ের দক্ষিণাঞ্চলের একটি হু থুং-এ অবস্থিত । জাদুঘরের প্রদর্শনী ভবন প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত । এখন এ প্রদশর্নী ভবনের দেওয়ালের রং কিছুটা উঠে গেছে , দেখতে পুরনো মনে হয়। দরজার সামনে পাইন গাছগুলোর পাশে আগাছা দেখা যায় । প্রাচীন স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত শান্ত এ জাদুঘরটি আশেপাশের সুন্দর পার্ক ও মানুষের গন্ডোগোলের সঙ্গে যেন সামজঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ জাদুঘরের দশর্ক সংখ্যাও তেমন বেশি নয় । পথচারীদের মধ্যে কম লোকই এ জাদুঘরে ঢোকেন । এ ধরনের পরিবেশেই লু তোং চি দিন কাটান । তবে এর জন্য তার মন খারাপ হয় না । তিনি বলেন ,তিনি নিস্তব্ধতায় নিজের অবস্থানে অটল থাকবেন । তিনি বলেন , আমি একজন জেদী মানুষ । যা করতে চাই , সহজে ছেড়ে দেবো না । আমি প্রাচীন টেরাকোটা সংগ্রহের কাজ পছন্দ করি , তাই যে কোনো অবস্থাতেই আমি এ কাজ করে যাবো । আমি মনে করি , কোনো কাজ করতে চাইলে মনের প্রত্যয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । প্রাচীন টেরাকোটা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার মতো কাজ দৃঢ সংকল্প ছাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয় ।

    লু তোং চি'র প্রাচীন টেরাকোটা জাদুঘর চীনের একটি পেশাদার বেসরাকরী জাদুঘর । এ জাদুঘরে প্রদর্শীত তৈজসপত্রের সংখ্যা অন্য জাদুঘরের চেয়ে বেশি । এ জাদুঘরে চার থেকে পাঁচ হাজার বছরের আগের নতুন প্রস্তর যুগ থেকে দশম শতাব্দীর থান রাজবংশ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়পর্বের তিন হাজার টেরাকোটা আছে । এ সব মূল্যবান প্রাচীন টেরাকোটাকে চীনের প্রাচীন টেরাকোটা সভ্যতার ইতিহাস বলা যায়। ১৯৯৭ সালে চীনে ৪টি বেসরকারী জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। লু তোং চির প্রাচীন টেরাকোটা জাদুঘর এর অন্যতম । জাদুঘর উদ্বোধনের সময় দেশের অনেক টেরাকোটা মহলের বিশেষজ্ঞতা জাদুঘর পরিদশর্ন করতে আসেন । লু তোং চির তৈজষপত্র দেখে তারা অবাক হলেন । সেই সময়ের কথা স্মরণ করে লু তোং চি বলেন , জাদুঘর উদ্বোধনের সময় আমার বয়স ছিল মাত্র ৩৫ বছর । বিশেষজ্ঞরা আমার সংগ্রহ টোরাকোটা দেখে অবাক হলেন । একজন তরুন যে এমন এক পেশাদার প্রদশর্নী আয়োজন করতে পারেন , তা' তাদের কল্পনার বাইরে ছিল। আসলে এ কাজ সত্যিই খুব কঠিন ছিল । চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির উপর তার আগ্রহ ও তার জেদী চরিত্র লু তোং চি'র সফলতার মূল কারণ। 

    গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিক স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির চেষ্টা করেন । হৃদরোগের কারণে লু তোং চি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন নি । তার পক্ষে এটা একটা বড় আঘাত । তিনি ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য ও শিল্পকলা পছন্দ করেন । অনেক চিন্তা করে তিনি আত্মশিক্ষার মাধ্যমে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিলেন । তিনি বলেন ,আমি দেখতে দুর্বল , কিন্তু আসলে আমি একটি দৃঢমনের মানুষ । আমি প্রবন্ধ ও কবিতা লিখতে পছন্দ করি এবং হস্তলিপি পছন্দ করি । আমি আমার লেখা কবিতা ,প্রবন্ধ ও হস্তলিপি সঙ্গে নিয়ে নামকরা শিক্ষকদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য চেষ্টা করেছি । সেই সময়ের অভিজ্ঞতা স্মরণীয় । আমি কখনও নিজের সংকল্প ছেড়ে দেই নি । এই সময়ের মধ্যে তিনি চীনের বিখ্যাত হস্তলিপিকার ওইয়ান চুনসি ,চিত্রশিল্পী ও কবি সিয়াও লাওসহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হলেন । তাদের সাহায্যে লু তোং চির হস্তলিপি ও সাহিত্য কর্ম একাধিবার পুরষ্কার পেয়েছে । তখন তার বয়স মাত্র ২৩ বছর । তিনি চীনের লেখক সমিতির সদস্য হলেন এবং পরীক্ষা দিয়ে উত্তর পশ্চিম বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখক প্রশিক্ষণ ক্লাসে ভর্তি হন ।

    চীনের উত্তর পশ্চিম বিশ্ববিদ্যালয় সানসি প্রদেশের রাজধানী সি আন শহরে অবস্থিত । সি আন চীনের একটি বিখ্যাত প্রাচীন শহর । এ শহরের পুরানিদশর্ন বেশি । লু তোং চি এ ধরনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির পরিবেশ পছন্দ করেন এবং পুরাকীর্তি সংগ্রহ করতে আগ্রহী। তখন উত্তর পশ্চিম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নিমার্ণ প্রকল্প চলচ্ছিল। লু তোং চি প্রতিদিন ব্যাগ নিয়ে নিমার্ণ স্থানে যান । সেখান থেকে তিনি প্রচুর ভাঙা টেরাকোটার টুকরো কুড়িয়ে নেন এবং তার পড়ার টেবিল ও বিছানায় রাখেন ।

    গত শতাব্দীর আশির দশকে চীনে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার পর অথর্নীতি ও সংস্কৃতির দ্রুত উন্নয়ন হয়। অনেকেই পুরাকীর্তি সংগ্রহের কাজ করতে শুরু করেন । লু তোং চি তাদের মধ্যে একজন । দশ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তার বিশ বগর্মিটারের ঘর তার সংগ্রহ করা পুরাকীর্তির গুদামে পরিণত হয় । এগুলোর মধ্যে প্রাচীন টেরাকোটা তিনি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন ।

   চীনে টেরাকোটার ইতিহাস সুদীর্ঘ । আট হাজার বছর আগে চীনের নলুদ নদী অববাহিকা অঞ্চলে রঙিন টেরাকোটার উত্পত্তি । তখন থেকেই মাটির পাত্র তৈরী ও পোড়ানোর প্রযুক্তি ক্রমে ক্রমেই উন্নত হতে থাকে ।এটা চীনের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । খৃষ্টীয় দশম শতাব্দীর থান রাজবংশ থেকে চীনা মাটির পাত্র তৈরী শিল্প ধীরে ধীরে টেরাকোটা শিল্পের স্থলাভিষিক্ত হয় । অধিবাসীদের কাছে চীনা মাটির পাত্র বেশি সুন্দর ও পছন্দনীয় । তবে লু তোং চি প্রাচীন টেরাকোটা সংগ্রহের কাজ বন্ধ করেন নি এবং আগের মতো সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন । তিনি বলেন , যদিও এখন চীনা মাটির পাত্র টেরাকোটার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় , তবুও আমি আমার চেষ্টায় অটল থাকবো । আমি জানি প্রাচীন টেরাকোটার ওপর গবেষণা ও সংগ্রহের কাজ তাত্পর্যপূর্ণ । ১৯৯৭ সালের ১৫ই জুন তার প্রাচীন টেরাকোটা জাদুঘর পেইচিংয়ে চালু হয়। বেসরকারী জাদুঘর বলে জাদুঘরের সব ব্যয় তাকেই করতে হবে । জাদুঘরের স্মারক বস্তু বিক্রি ও বন্ধুদের আর্থিক সাহায্য ছাড়া লু তোং চি নিজের হস্তলিপি বিক্রি করে জাদুঘর চালান । অসুবিধা হলেও তিনি তার একটি তৈজসপত্রও বিক্রি করেন নি। তিনি বলেন ,তার তৈজষপত্র তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস , তিনি এ দিয়ে ব্যবসা করবেন না । তিনি বলেন , এ জাদুঘর আমার স্বপ্ন ও সারা জীবনের সবচেয়ে বড় শিল্পকর্ম । আমি আমার সারা জীবন দিয়ে এ জাদুঘরের তৈজষপত্র বাড়ানোর চেষ্টা করে যাবো ।

    গত বছর এ জাদুঘরের দশম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রাজধানী জাদুঘরে একটি প্রাচীন টেরাকোটা প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে । এক লাখ দশর্ক এ প্রদশর্নী দেখেছেন । লু তোং চি আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , পেইচিং অলিম্পিক গেমসের পর এ প্রদশর্নী ম্যাকাও , তাইওয়ান ও জাপানে প্রদর্শীত হবে । (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)