ছেন ইয়েন দক্ষিণ চীনের কুয়াং তুং প্রদেশের তোং কুয়ান শহরের একটি বেসরকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক । সি ছুয়ান প্রদেশের ওয়েন ছুয়ান জেলায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের দ্বিতীয় দিনেই তিনি ও তার স্ত্রী ত্রাণসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে দুর্গত মিয়েন চু শহরে গেলেন । তিনি নিজের হাতে বিশটিরও বেশি ছেলেমেয়ে উদ্ধার করেছেন । স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি মানুষ উদ্ধার করেছেন । তিনি বলেন , আমি সেনা বাহিনীতে উদ্ধার কাজ করেছি । তাই এ কাজে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে । ভূমিকম্প ঘটার পর পর সেনাবাহিনী ও সশস্ত্রপুলিশ বাহিনী দ্রুত দুর্গত অঞ্চল যায় । তারা উদ্ধারের অনেক সরঞ্জামও দুর্গত অঞ্চলে পাঠিয়েছে । আমি তাদের সঙ্গে মিলে জীবিত মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করেছি।
ওয়েন ছুয়ানে ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটার পর দেশের বিভিন্ন স্থানের স্বেচ্ছাসেবকরা দুর্গত অঞ্চলে গিয়েছেন । তারা ধ্বংস স্তুপ থেকে জীবিত মানুষদের উদ্ধার করেন , খাবার ও পানিসহ নানা ধরনের ত্রাণসামগ্রী দুর্গতদের হাতে দেন । চীনের সাধারণ অধিবাসী ও বেসরকারী সংস্থাগুলো উদ্ধারকাজে স্বেচ্ছায় অংশ নেয়ার চেতনা ও দায়িত্ববোধ দেখিয়েছে । তাতে প্রমাণিত হয়েছে যে চীনাদের নাগরিক চেতনা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে ।
নাগরিক চেতনা হলো সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতির সাথে সৃষ্ট একটি চেতনাবোধ । এর মধ্যে রয়েছে নিজের ও অন্যের অধিকার ও মূল্যবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ পোষণ করা । ১৯৯৩ সালে চীনের কমিনিস্ট যুব লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি চীনে যুব সমাজের প্রতি স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে । তখন থেকে স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার চেতনা দ্রুত চীনে ছড়িয়ে পড়ে । অনেকেই স্বেচ্ছাসেবক হতে চান । স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে যুবকযুবতী থেকে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্তনানা পর্যায়ের বয়সের মানুষ আছে । একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , চীনে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা আট কোটিতে দাঁড়িয়েছে । ওয়েন ছুয়ানের ভয়াবহ ভূমিকম্পে চীনের অনেক স্বেচ্ছাসেবক এখন তত্পর রয়েছেন । তারা দুর্গত অঞ্চলে গিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন এবং টাকা ও রক্ত দান করে দুর্গতদের সাহায্য করার মাধ্যমে উচ্চমানের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন
ভূমিকম্পের পর চীনের বিভিন্ন শহরের অনেক মানুষ স্বেচ্ছায় রক্তদান করেছেন । অনেক গণ কল্যাণ সংস্থা দুর্গতদের সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়েছে , কিছু ওয়েবসাইট ইন্টারনেটে দুর্গতদের টাকা দেওয়ার আহ্বান জানালে নেটিজেনের আন্তরিক সাড়া পেয়েছে । তিব্বতের ভিক্ষুরা নিহতদের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন । দুর্গত অঞ্চলে বাবা -মা হারানো ছেলেমেয়েদের মানসিক সাহায্য দেওয়ার জন্য সাংহাইয়ের কিছু স্বেচ্ছাসেবক দুর্গত অঞ্চলে গিয়েছেন । চীনের নামকরা কণ্ঠশিল্পী লি সুয়ান চিয়ান ১৮ মের একটি অনুষ্ঠানে বলেন , শিশুসহ অনেক অধিবাসী এখনো মাটির নীচে আটকা পড়ে আছে। আমরা কি করতে পারি ? আমি শুধু তাদের জন্য সাধ্যমতো আর্থিক সাহায্য দিতে পারি । যাতে এখনো আটকে পড়া ছেলেমেয়ে ও তাদের মা উদ্ধারকরা যায় ।
১৮ মে সন্ধ্যায় চীনের কেন্দ্রীয় টি ভি কেন্দ্রের উদ্যোগে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর সব চেয়ে বড় চাঁদা সংগ্রহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । এ অনুষ্ঠানে মোট ১৫০ কোটি ইউয়ান অর্থসংগ্রহ করা হয়েছে ।
এবারের উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি যথেষ্ট মর্যাদা দেয়া হয়েছে । চীন সরকার ১৯ থেকে ২১ মে পর্যন্ত তিন দিন জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । ১৯ মে বেলা দুটো ২৮ মিনিটে ভেঁপু বাজার সঙ্গে সঙ্গে পথিকরা যেখানেই ছিল , সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে , শ্রমিকরা হাতের কাজ বন্ধ করে দেয় । সবাই ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতিশোকে তিন মিনিট নীরবতা পালন করেন । সেদিন সন্ধায় চীনের অনেক স্থানে মোম বাতি জ্বালিয়ে ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেন ।
এবারের উদ্ধার ও ত্রাণকাজে চীনারা নিজের বাস্তব কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে প্রমান করেছে যে উদ্ধার ও ত্রাণকাজ শুধু সরকার নয় , নাগরিকদেরও দায়িত্ব । চীনের সমাজের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকদের চেতনা ক্রমেই উন্নত হচ্ছে ।
|