v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-20 21:23:29    
সীমাহীন ভালোবাসা

cri
    ১২ মে চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের ভয়াবহ ভূমিকম্পে শুধু চীনারা মর্মাহত তা নয় , বরং সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হৃদয়বান মানুষ এই ঘটনার দিকে উদ্বেগ চেয়ে আসছেন । ১৫ মে চীনের চিয়াং সি প্রদেশের চিং কাং সানে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের পবিত্র মশাল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে দু'জন মার্কিন নাগরিক সি ছুয়ানের দুর্গত মানুষের জন্য বিশেষ প্রার্থণা করেন । তারা ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিস্কোয় ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষদর্শী । 

    চীনের চিয়াং সি প্রদেশের নর্মাল ইন্সটিটিউটের শিক্ষক গ্রেগরি ব্রুবেকার যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রানসিস্কো থেকে এসেছেন । ১৯৮৯ সালে সেখানকার ভয়াবহ ভূমিকম্পের কথা তিনি কখনই ভুলতে পারবেন না । তিনি বলেন , সান ফ্রানসিস্কোয় ভূমিকম্পের সময় তিনি ছাত্র ছিলেন । তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ঐ ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে । বহু মানুষ গৃহহীন হয়েছে । ব্রুবেকার , সে বেদনাদায়ক স্মৃতি এখনও তার মনে আছে , তারপরও চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের গুরুতর ভূমিকম্পে তিনি হতবাক হয়ে গেছেন । তিনি বলেন :

    এখনও ১৯৮৯সালের ভূমিকম্পের ঘটনা আমার স্মৃতিতে টাটকা । তবে সি ছুয়ানের ভূমিকম্প সান ফ্রানসিস্কোর চেয়েও ভয়াবহ এবং তীব্রতর । আমি শুনেছি একটি মাধ্যমিক স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে আছে । এটা সত্যিই খুব বেদনাদায়ক । তবে যারা এবার ভূমিকম্পে বেচে আছেন , তাদেরকে আমি বলতে চাই , ১৯৮৯ সালের সান ফ্রানসিস্কো ভূমিকম্পে অনেকেই নিহত হয়ে ছিলেন এবং অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু পুণর্নির্মাণ কাজ শুরু করার পর আস্তে আস্তে সান ফ্রানসিস্কো আগের চেয়ে আরো সুন্দর হয়েছে ।

    ব্রুবেকার বলেন , পুণর্নির্মাণের পর সি ছুয়ানের দুর্গত এলাকা নিশ্চয়ই ভূমিকম্পের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসবে । তিনি আশা করেন দুর্গত এলাকার জনগণ সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে দুর্ঘটনা মোকাবেলা করবেন । চিয়াং সি নর্মাল ইন্সটিটিউটের আরেক শিক্ষক মার্কিন নাগরিক পল প্রোভোস্ট ১৯৯৯ সালে চীনে এসেছেন । তিনি মনে করেন , দুর্ঘটনা মোকাবিলার জন্য আত্মবিশ্বাস খুব জরুরি । তিনি বলেন :

    আমি জানি এবারের ভূমিকম্প একটি বড় বিপর্যয় । বিপর্যয় মোকাবিলার সময় আপনার আরো উজ্জ্বল দিকের প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত । ভূমিকম্পের পর সি ছুয়ানের দুর্গত এলাকার জনগণের জন্য সবাই নিজের ভালোবাসা থেকে সাহায্য দিয়েছেন । বলা যায় , এবারের ভূমিকম্প মোকাবিলায় সবা'র হৃদয় একত্রিত হয়েছে ।

    ৬৭ বছর বয়সী পলের শুধু সান ফ্রানসিস্কোর ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা আছে তাই নয় , তার জন্মভূমি ম্যাসাচুসেজটস অঙ্গরাজ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের "ঘুর্নিঝড় প্রবণ রাজ্য" । ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও পল আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে দুর্ঘটনা সামাল দিয়েছেন । তিনি বলেন , চীনের বিভিন্ন মহল তথা সারা বিশ্বের সক্রিয় ত্রাণ ও সাহায্যের কারণে দুর্গত এলাকার জনগণ উষ্ণ ভালোবাসা বোধ করতে পারবেন । এ দিকে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের পবিত্র মশাল অলিম্পিকের চেতনা প্রকাশ করছে , যা তাদেরকে মানসিক শক্তি যোগাবে । তিনি বলেন :

     এক বিশ্ব , এক স্বপ্ন । যদি আমরা একে আরো সাম্প্রসারিত করতে চাই , তাহলে স্লোগানে "এক মানুষ" যোগ করতে পারি । এখন সি ছুয়ান প্রদেশের দুর্গত এলাকার জনসাধারণ , মোটে একা নয় , সারা চীনের মানুষ তাদের সাথে আছে । হয়তো অনেকেই ভূমিকম্প দুর্গত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ দিতে পারেন নি এবং সরাসরি সাহায্য দিতে পারেন নি । তারপরও তারা অর্থ ও সামগ্রী দিয়ে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করেছে । এটি সি ছুয়ান , চীন , তথা সারা বিশ্বের জন্য একটি ভালো ব্যাপার ।

    এ দিকে ভূমিকম্পের পর বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরাও দুর্গত এলাকায় গিয়ে সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । তারা নিজের চোখে দেখেছেন চীনাদের ত্রাণ তত্পরতা । আমাদের সংবাদদাতা কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিকের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । তারা আমাদেরকে তাদের অনুভূতি জানিয়েছেন ।

ব্রিটিশ সাংবাদিক লিন সি বলেন :

    এবারকার ভূমিকম্প চীনের জন্য বিরাট বিপর্যয় । চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের জনগণ এত গুরুতর বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে দেখে আমি ভীষণ মর্মাহত । আমি দেখেছি চীনের সৈনরা দ্রুত ত্রাণ কাজ শুরু করেছে এবং সর্বোচ্চ চেষ্টায় হতাহতদেরকে উদ্ধার করছে । আরো অনেক স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ মানুষ খাদ্য ও পানি নিয়ে ত্রাণ কাজে অংশ নিয়েছে , যা আমার মনে খুব গভীর দাগ কেটেছে ।

    সুইজারল্যান্ডের ফরাসী ভাষার টি ভি স্টেশনের সাংবাদিক ফ্রিড বলেন , তিনি তু চিয়াং ইয়ান , দ্য ইয়াং , মিয়ান ইয়াং এবং ছেং তু শহরে গিয়ে খবর সংগ্রহ করেছেন সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । তিনি প্রধানত উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকের পরিচালিত অনুষ্ঠানের খবর প্রকাশ করেছেন । তিনি বলেন :

    আমি দেখেছি এবার চীন সরকার খুব দ্রুত সাড়া দিয়েছে । খবর সংগ্রহের সময় আমরা পথে পথে দেখেছি অনেক সামরিক গাড়ি এবং অন্যান্য গাড়ি ত্রাণ সামগ্রী পরিবহন করছে । চীন সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছে । আমার মনে হয় চীন সরকার বিরাট চাপের মধ্যে রয়েছে । তবে আগামী কিছু দিনের মধ্যে চাপ আরো বেড়ে যাবে । শুধু বিধ্বস্ত বাড়িঘর আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে তাই নয় , বরং আজ মিয়ান ইয়াং স্টেডিয়ামে অনেক মানুষের সাহায্য ও শিশুদেরকে খেলতে দেখে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছি ।

ফ্রিড সি আর আইয়ের মাধ্যমে তার দেশের সজনদেরকে কিছু বলতে চেয়েছেন , তিনি বলেন :

    আমি দুর্গত এলাকায় সাক্ষাত্কার নিচ্ছি বলে আমার বাবা মা কিছুটা উদ্বিগ্ন। কারণ এখানে এখনো মাঝে মাঝে ভূমিকম্প হয় । আমার বাবা মাকে বলতে চাই , তাদের কথা আমার খুব মনে পড়ছে । বিশেষ করে দুর্গত এলাকায় এত বেশি পরিবার তাদের স্বজন হারিয়েছে , যা দেখে আমি আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি যে স্বজনের সাথে থাকা কত সুন্দর ব্যাপার ।