v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-20 20:25:36    
সূচিকর্মপ্রিয় লি জাতির নারীরা

cri
লোকসংখ্যার দিক থেকে লি জাতি চীনের হাইনান প্রদেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘুজাতি। চীনের অন্যান্য সংখ্যালঘুজাতির মতো লি জাতির নিজের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রীতিনীতি ও সংস্কৃতি রয়েছে । লি জাতির নারীদের হাতে তৈরি সুন্দর সূচিকর্মমূল্যবান শিল্পকর্ম ।

লি জাতির মেয়েরা লুঙ্গির মতো লি জাতির সুন্দর স্কার্ট পরে মধুর গান গেয়ে বিশিষ্ট অতিথিদেরকে স্বাগত জানাতেন । রঙবেরঙের ও নানা ডিজাইনের পোশাক তারা নিজেরাই লি জাতির বিশেষ রেশমী কাপড় দিয়ে বানান । এই রেশমী কাপড় চীনের প্রাচীনতম তুলোর বস্ত্র । একে চীনের বস্ত্রবয়ন ইতিহাসের জীবন্ত জীবাশ্ম । লি জাতির নারীরা সাধারণত চরকার মাধ্যমে সরল রেখা ,সমান্তরাল রেখা এবং ত্রিভুজসহ নানা ডিজাইনে লি জাতির পোশাক বানিয়ে দেন ।

৩২ বছর বয়সী ওয়াং সুয়েবিন হাইনান প্রদেশের উচিশান শহরের পরিচালনাধীন ছুংশান থানার চাইনান গ্রামে বসবাস করেন । দশ-বারো বছর বয়স থেকে তিনি লি জাতির সূচিকর্ম শুরু করেন । এখন তিনি গ্রামের সবচেয়ে বেশি দক্ষ সূচিশিল্পী ।

ওয়াং সুয়েবিনের বাড়ির বৈঠকখানায় প্রবেশ করলে প্রথমে চোখে পড়ে দেয়ালে ঝোলানোলি জাতির সূচিকর্মের একটি সুন্দর ছবি । ছবিটির রং নরম, মূর্তি জীবন্ত । বৈঠকখানার এক কোণে সুশৃঙখলভাবে নানা রঙের সুতি ও একটি অসমাপ্ত স্কার্ট রাখা ছিল । ওয়াং সুয়েবিন বলেন , ছোটবেলায় সূচিকর্মতাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে এবং শিগগিরই তিনি মা ও আতীয়স্বজনদের কাছ থেকে বানানোর পদ্ধতি শিখে নিয়েছেন । তিনি বলেন , দশ বছর বয়সে বয়স্কদেরকে সূচিকর্ম করতে দেখে আমিও শেখা শুরু করি । আগ্রহের কারণে আমি মাত্রএক সপ্তাহের মধ্যে তা শিখে ফেলি।

ওয়াং সুয়েবিনের মতো মাত্রএক সপ্তাহের মধ্যে লি জাতির সূচিকর্ম শিখে ফেলতে পারেন এমন লোক খুব বেশি নেই । বেশির ভাগ লোক ধাপেধাপে এক মাস ধরে শিখলে কেবল সত্যিকারভাবে লি জাতির সূচিকর্মের কৌশল আয়ত্ত করতে পারেন ।সূচিকর্ম অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ । তবে ওয়াং সুয়েবিন বলেছেন , ছোট বেলায় সূচিকর্ম শুরু করলে তিনি সহজে ছাড়তে পারতেন না । সারা দিন বানিয়েও তিনি ক্লান্তি অনুভব করতেন না ।

তিনি বলেন , ডিজাইন যত সুন্দর ততই আমি শিখতে চাইতাম । কাজ শুরু হলে আর থামতে চাইতাম না । বয়স কম হওয়ার কারণে আমি ক্ষুধা ও ক্লান্তি অনুভব করতাম না ।

ওয়াং সুয়েবিনের জীবন লি জাতির বেশির ভাগ নারীর প্রতিচ্ছবি । কৃষি মৌসুমে তারা জমি চাষ করেন এবং হাঁসমুর্গি পালন করেন । মৌসুম শেষ হলে তারা বাসায় সূচিকর্ম করেন । এক দিকে সূচিকর্মেতারা আগ্রহী, অন্য দিকে সূচিকর্ম বিক্রি করেও কিছু উপার্জন করতে পারেন । তারা কোম্পানির ডিজাইন অনুযায়ী বাসায় সূচিকর্ম করতে পারেন অথবা সবাই একসঙ্গে কোম্পানিতে বসেও কাজ করতে পারেন । তাদের সূচিকর্ম যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশে বিক্রিহয় । ওয়াং সুয়েবিন এক সময় হাইনান প্রদেশের জাতীয় সূচিশিল্প গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করেছিলেন ।

উ চিশান সংস্কৃতি উন্নয়ন লিমিডিট কোম্পানি লি জাতির সূচিকর্ম সংগ্রহকারী একটি প্রতিষ্ঠান । কোম্পানির উদ্যোগে সূচিকর্ম করতে পারেন এমন নারীদেরকে একত্রিত করা হয় । তারা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় কোম্পানিতে সূচিকর্ম করতে আসেন । সূচিকর্মের পরিমান অনুযায়ী কোম্পানি তাদেরকে বেতন দিয়ে থাকে । কোম্পানির ব্যবস্থাপক মাদাম লু শাওসুই জানান ,একজন নারী দিনে চার ঘন্টা কাজ করলেমাসে হাজার ইউয়ানেরও বেশি বেতন পান । তিনি বলেন, বেশির ভাগ সূচিকর্ম অন্য প্রদেশে বিক্রি হয় এবং হাইনান প্রদেশের বৈশিষ্টসম্পন্ন উপহার হিসেবে বিশিষ্ট অতিথিদের দেওয়া হয় । কোম্পানি বিক্রি করার দায়িত্ব পালন করে । তাই সূচিকর্ম বিক্রির জন্য নারীদের কোনো চিন্তা করতে হয় না ।

লি ছুনইং এই কোম্পানির অন্যতম স্থায়ী কর্মী । সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল ছ'টা পর্যন্ত তিনি কোম্পানিতে কাজ করেন । তিনি অন্য বোনদের সঙ্গে কোম্পানিতে সূচিকর্ম করতে পছন্দ করেন । একা করতে তার ভাল লাগে না । তিনি বলেন , ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী অথবা তারা যে ডিজাইন পছন্দ করেন আমরা তা বানাই । আমরা বোনেরা এক সঙ্গে কাজ করি একসঙ্গে গান গাই , খুব মজা লাগে ।

জানা গেছে , এ ধরণের চরকা ব্যবহার করতে জানেন এমন লোকসংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে বলে লিজাতির সূচিকর্মও পড়তির দিকে । দু'বছর আগে লি জাতির সূচিকর্মকে চীনের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রথমদফা বিষয়গত সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয় । লিজাতির সূচিকর্মেরজনপ্রিয়তা দিনদিন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে । উচিশান এলাকায় আশি বছরবয়সী বুড়িমায়েরাও এই কৌশল ছেড়ে দিতে চান না । তারা দিনে কমপক্ষে তিন-চার ঘন্টা কাজ করেন । এই সূচিকর্মে দক্ষদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠের বয়স মাত্র ৬ বছর ।

চার বছর আগে উচিশান এলাকায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় । লিজাতির সূচিকর্ম শেখানো কেন্দ্রের প্রশিক্ষণের অন্যতম বিষয় । প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যেমন জাতীয় সংস্কৃতি সম্প্রসারিত হবে তেমনি কৃষকদের আয়ও বাড়বে ।