চীন সরকার সিছুয়ানের ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্পে নিহতদের জন্য ১৯ থেকে ২১ মে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। ১৯ মে জেনেভায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদগণ চীনা প্রতিনিধি দলের আবাস কেন্দ্রে গিয়ে ভূমিকম্পে নিহতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
১৯ মে বিকালে জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ের মহাপরিচালক সের্গেই ওর্দঝনিকিতজে চীনা প্রতিনিধি দলের আবাসিক শোক কেন্দ্রে যান। তিনি দশ বারো মিনিট ধরে নীরবে শোকবইতে একটি লম্বা শোক বাণী লেখেন এবং পরে চীনা রাষ্ট্রদূত লি পাও তুংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি বলেন, 'চীনের এবারের ভূমিকম্প একটি বিশাল বিয়োগান্তক নাটক। এতে বিরাট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক মানুষ প্রাণ ও সম্পত্তি হারিয়েছে। আমি আশা করি, চীনা জনগণ খুব দ্রুত আগের মতোই এবারের দুর্যোগকে জয় করবে।'
দক্ষিণ কেন্দ্র হচ্ছে ৩০টিরও বেশি উন্নয়নশীল দেশ নিয়ে গঠিত একটি সরকারী সংস্থা। এই কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ইয়াস তানদোন দুর্গত অঞ্চলের জনগণকে সমবেদনা ও সহানুভুতি জানানোর পাশাপাশি নিজের অনুভুতি প্রকাশ করেছেন। 'অনেক বিষয় আমাকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। দুর্যোগের পর চীন যাবতীয় শক্তি দিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ করে। এমন কি বিমান থেকে উদ্ধারকর্মীদেরকে দুর্গত অঞ্চলে নামানো হয়েছে। এটা আমাদের মনে গভীর দাগ কেটেছে। দুর্যোগের পর চীনের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণ যে আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন, তাও অতি স্মরণীয়। দুর্যোগের পর দেশে বিদেশে সকল চীনা মানুষের এক যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে।'
শোক কেন্দ্রে আমাদের সংবাদদাতা দেখেছেন যে, মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে সোমালিয়া, জিম্বাবুয়ে, বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কম্পুচিয়া, সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া ও জাপানসহ জেনেভায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের প্রায় দশ জন রাষ্ট্রদূত এসে শোক প্রকাশ করেন।
চীনের ভূমিকম্প দুর্যোগ হওয়ার পর রাশিয়া চীনকে কয়েক দফা ত্রাণ সামুগ্রী এবং ত্রাণকর্মী দল পাঠিয়েছে। রাশিয়ার ত্রাণ দলও জীবিতদের খুঁজে বের করার কাজে যোগদান দিয়েছেন। এ সম্পর্কে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভালেরি লসচিনিন বলেন, 'আমরা ভালো বন্ধু। এ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। অনেক বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী একই। আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্কও স্থায়ীভাবে বিকশিত হবে।'
জাপান চীনের প্রতিবেশী দেশ। জাপানেও প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। জাপানের নাগরিকদেরও চীনের এবারের ভূমিকম্পের প্রতি একই অনুভূতি। জাপান চীনের উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে অনেক সাহায্য করেছে। জাপানের রাষ্ট্রদূত ইচিরো ফুজিসাকি চীনের দুর্গত অঞ্চলের জনগণকে আন্তরিক সহানুভূতি ও সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমি জাপান সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এবারের ভূমিকম্পে চীনের নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও সহানুভূতি জানাচ্ছি।'
১৯ মে ৬১তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন জেনেভার জাতিসংঘ ইউরোপীয় সদর দপ্তর প্লায়েস দাস নেশনসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মেলনের চেয়ারম্যান জেন হলটন সকল প্রতিনিধিদেরকে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের অনুরোধ করেন। তারা মিয়ানমারের প্রবল গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় এবং চীনের ভূমিকম্পে নিহতদের জন্য নিরবতা পালন করেন। তিনি বলেন, 'চীনের সিছুয়ান প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। গুরুতর জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করে এবারের দুর্যোগে নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করার অনুরোধ করি।' (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|