v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-19 18:45:16    
শোক দিবসে প্রাণের প্রতি চীনের শ্রদ্ধা

cri

     সিছুয়ান প্রদেশের ওয়েনছুয়ানের ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় ঠিক সাত দিনের মাথায় ১৯ মে দুপুর ২টা ২৮ মিনিট থেকে সারা চীন তিন মিনিটের জন্য স্তব্ধ থেকে নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করেছে। এ সময় চীনজুড়ে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি ও জাহাজগুলো স্ব স্ব স্থানে দাঁড়িয়ে ভেঁপু বাজায় এবং বিমান হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়। সকল মানুষ যে যেখানে ছিলেন সেখানেই দাঁড়িয়ে এ সময় নীরবতা পালন করেন। হু চিন থাও, উ পাং কুও ও ওয়েন চিয়া পাওসহ চীনের রাষ্ট্রীয় শীর্ষ নেতারাও সারা দেশের জনগণের সঙ্গে তিন মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালনের মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন। এ সময় চীনজুড়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারনা হয়। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ ১৯ থেকে ২১ মে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করে। জাতীয় শোকের প্রথম দিনে ভূমিকম্প আঘাত হানার সময় অর্থাত্ ঠিক ২টা ২৮ মিনিটে সারা দেশের জাতিবর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ ভূমিকম্পে নিহতদের এই গভীর শোক প্রকাশ করলো। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিহতদের জন্য শোক দিবস পালিত হচ্ছে। এটি মানুষের প্রাণের ওপর চীন সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক। একই সঙ্গে সরকারের মানুষকে সর্বাধিক মুল্য দান সংক্রান্ত তত্ত্বের বাস্তব প্রতিফলন।

    তিন দিনব্যাপী শোক দিবসে সারা চীন ও বিদেশে চীনা সংস্থাগুলো জাতীয় পতাকা অর্ধ-নমিত রাখছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশে চীনা দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো শোকবই খুলেছে। এ ক'দিনে চীনে সকল ধরনের বিনোদনমূলক কর্মসূচী বন্ধ রাখা হয়েছে। চীনের অভ্যন্তরে অলিম্পিক মশাল হস্তান্তর অনুষ্ঠানও স্থগিত রাখা হয়েছে।

    ১৯৯০ সালে গৃহীত 'চীন গণ প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকা আইনে' নিহতদের জন্য পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই আইনের ১৪ ধারার দ্বিতীয় উপধারায় বলা হয়েছে, 'বিশেষ গুরুতর প্রাণহানিকর দুর্ঘটনা অথবা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে গুরুতর হতাহতের ঘটনা ঘটলে শোক প্রকাশের জন্য পতাকা অর্ধ-নমিত রাখা যাবে।'

    সিছুয়ানের ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্পে নিহতদের জন্য পতাকা অর্ধ-নমিত রাখার মধ্য দিয়ে প্রথম বারের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিহতদের জন্য জাতীয় পতাকা আইনের ঐ ধারাটি বাস্তবে রূপ নিন। প্রাণের প্রতি সম্মান ও মানুষকে সর্বোচ্চ মূল্য দেয়ার ঘটনা এবারের ভূমিকম্প উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের পুরো প্রক্রিয়ায় প্রতিফলিত হয়েছে।

    চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও ১৮ মে ভূমিকম্প অঞ্চল শিফাং শহরের রাস্তার পাশে স্থাপিত একটি অস্থায়ী দুর্গত শিবির পরিদর্শনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সমবেদনা জানানোর সময় বলেছেন, 'আমি জানি, আপনারা দুর্যোগের শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ তার স্বজনকে হারিয়েছেন। আমরাও আপনাদের মত শোকার্ত ও মর্মাহত বোধ করি। আমরা ১ লাখ মুক্তি ফৌজ, সশস্ত্র পুলিশকে আপনাদের প্রতিটি গ্রামে পাঠিয়েছি। তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সামান্যতম আশা থাকা পর্যন্ত আমরা উদ্ধারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবো।'

   'ক্ষীনতম আশা থাকা পর্যন্ত আমরা প্রাণ বাঁচানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবো' এই কথাটা হচ্ছে ভূমিকম্পের পর উদ্ধার প্রক্রিয়ায় আমাদের বহুশ্রুত একটি বাক্য। সিছুয়ানের ওয়েনছুয়ানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর চীন সরকার সবসময় প্রাণ বাঁচানোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এটা হচ্ছে প্রাণের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার নিদর্শন।

    ভূমিকম্প পীড়িত অঞ্চলে আমরা নানা পদ্ধতিতে প্রাণের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদাহরণ দেখেছি। উদ্ধারকারীরা হাত দিয়ে নিহতের শরীরের ধুলো ঝেড়ে দিচ্ছেন এবং তাদের কাপড় ঠিক করে দিচ্ছেন এমন দৃশ্যও আমরা দেখেছি। শিক্ষকদেরকে নিহত শিশুদের মৃত দেহের পাশে তাদের স্কুল ব্যাগ রেখে স্বজনদের জন্য প্রহর গুনতেও দেখেছি। অনেক চিকিত্সকদের দুর্গত অঞ্চলে গিয়ে জীবিতদের পাশে বসে মানবিক সমবেদনা মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দিতেও আমরা দেখেছি।

    প্রাণের অধিকার হচ্ছে মৌলিক মানবাধিকার। প্রাণের অধিকারকে সম্মান ও রক্ষা করা হচ্ছে মানবাধিকারকে সম্মান ও রক্ষা করা। এবারের উদ্ধার তত্পরতা 'মানুষকে মুল্য দেয়া' হচ্ছে চীন সরকারের প্রশাসনিক চিন্তাধারার বাস্তব প্রতিফলন। ২০০৪ সালের ১৪ মার্চ চীনের দশম জাতীয় গণ কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে 'চীন গণ প্রজাতন্ত্রের সংবিধান সংশোধনী বিল' গৃহীত হয়। এতে প্রথম বারের মতো 'রাষ্ট্র কর্তৃক মানবাধিকারকে সম্মান ও নিশ্চিত করা' কথাটি সংবিধানে সংযোজিত হয়। তখন থেকে 'রাষ্ট্রের মানবাধিকারকে সম্মান ও নিশ্চিত করা' কথাটি সংবিধানের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের 'নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও কর্তব্য' সংক্রান্ত ৩৩ ধারার তৃতীয় উপধারায় পরিণত হয়েছে। এই বাক্যটি মানবাধিকার ক্ষেত্রে চীনের বিরাট অগ্রগতিকে প্রমাণ করেছে।

    ১৭ মে বিকালে পেইচিংয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও রাষ্ট্রীয় পরিষদের ভূমিকম্প উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ সম্পর্কিত পরিচালনা বিভাগের অধিবেশনে পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, ভূমিকম্পের উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে সর্বদাই মানুষকে প্রাধান্য দেয়ার নীতি মেনে চলতে হবে। সিছুয়ানের ওয়েনছুয়ানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর চীন সরকারের কর্ম তত্পরতা মানবাধিকারের প্রতি চীনের উপলব্ধি এবং প্রাণের ওপর চীনের শ্রদ্ধা পুরোপুরি ফুটে উঠেছে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)