চীনের সিছুয়ান প্রদেশের ওয়েনছুয়ানে ভূমিকম্প হওয়ার পর ছোট আকারের পরাঘাত এবং সড়কযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা অবস্থায় চীনের বিভিন্ন চিকিত্সা দল বিমানযোগে কিংবা জলপথে অথবা পায়ে হেঁটে দুর্গত এলাকায় গিয়ে ত্রান কাজে যোগ দিয়েছেন । চীন সরকার জরুরীভাবে দুর্গত এলাকায় ওষুধ ও চিকিত্সা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে । ১৫ মে সকাল ১০টা পর্যন্ত চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের দশ হাজারেরও বেশি চিকিত্সক দুর্গত এলাকায় চিকিত্সা এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের কাজ করেছেন। তারা ঘটনাস্থলে ২৩ হাজার আহতকে চিকিত্সা করেন । তাদের প্রচেষ্টায় দুর্গতএলাকায় কোনো সংক্রামক রোগ ও অন্য কোনো আকস্মিক স্বাস্থ্য হানিকর ঘটনা ঘটেনি ।
ওয়েনছুয়ান ভূমিকম্প আঘাত হানার রাতেই চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক শ্রেণীর জরুরী মোকাবেলা ব্যবস্থাচালু করেছে । দ্বিতীয় দিন ৭০০ সদস্য বিশিষ্ট একটি জরুরী চিকিত্সক দল ওষুধ ও চিকিত্সা সরঞ্জাম নিয়ে দুর্গত এলাকায় রওয়ানা হয়ে যায় । এর পরের দিনগুলোতে কয়েক হাজার চিকিত্সক দুর্গত এলাকায় পৌঁছান। ১৫ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত চিকিত্সা দল সিছুয়ান প্রদেশের ক্ষতিগ্রস্ত সব জেলা ও শহরে পৌঁছেছে । নানা উদ্ধার ও ত্রান কাজ সুষ্ঠুভাবে চালানো হচ্ছে । ওষুধ ও চিকিত্সা সরঞ্জামকেনার জন্য কেন্ত্রীয় সরকার বিশেষভাবে ৬০ কোটি রেনমিনপি বরাদ্দ করেছে ।
চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের ভূমিকম্প উদ্ধার ও ত্রাণ পরিচালনা বিভাগের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ দলের কর্মকর্তাকাও ছিয়াং ১৫ মে পেইচিংয়ে বলেন , চিকিত্সার ত্রানকাজ , স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও সামগ্রী গুরুতর দুর্গতপ্রতিটি জেলা ও শহরে পৌঁছাতে হবে । সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও বিমান পরিবহন বা পায়ে হেঁটে চিকিত্সক এবং ত্রান সামগ্রী গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি কোণে পাঠাতে হবে । যাতে গুরুতর আহতরা মরে না যায় বা প্রতিবন্ধী না হয়ে পড়ে এবং দুর্গত এলাকায় সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধ নিশ্চিত করা যায় ।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের ত্রাণ দল ও চিকিত্সার সরঞ্জামছাড়া চীনের সেনাবাহিনীও তাদের নিজস্ব ভান্ডার থেকে দুর্গত এলাকায় ওষুধ ও সরঞ্জাম পাঠিয়েছে । চীনা গণ মুক্তি ফৌজের সাধারণ সরবরাহ দপ্তরের স্বাস্থ্য বিভাগের ওষুধ ও সরঞ্জাম ব্যুরোর প্রধান রেন কোছুয়েন বলেন , সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে পাঁচটি বিমান বন্দর থেকে জরুরী ত্রাণ, সংক্রমণপ্রতিরোধ এবং সংক্রামক রোগের বিস্তাররোধ সম্পর্কিত ওষুধ ও সাজসরঞ্জাম ছেংতু শহরে পাঠিয়েছে । এইসব সামগ্রী ১৫ মে সকালে দুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে ।
ওষুধ সহ নানা ত্রাণ সামগ্রী সময়মতো দুর্গতদের হাতে পৌঁছে দিতে চীনের সেনাবাহিনী বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার কাজে লাগিয়েছে । সড়কপথ থেকে যে দুর্গত এলাকায় যাওয়া যাচ্ছিল না সেখানেও হেলিকপ্টারে করে আহতদের পরিবহন করার দায়িত্বও পালনকরেছে । চীনের বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার ১৫ মে ওয়েনছুয়ান জেলার ইনসিউচেন থানা থেকে ১০জন গুরুতর আহতকে নিয়ে আসে । এদের মধ্যে একজন বলেন , আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি । বিমান দেখে আমি বুঝেছি , আমি রক্ষা পেয়েছি । গতপরশু রাতেই মরে যাচ্ছি বলে মনে হয়েছিল । কারণ আমার গায়ের ক্ষত মারাত্মক, অনবরত রক্ত ঝরেছে ।
মিঃ কাও ছিয়াং বলেন , " উত্তম ত্রাণের স্বর্ণসময়" ৭২ ঘন্টা পার হলেও চীন সরকার কখনোই আটকে পড়া জনসাধারণকে উদ্ধার ও ত্রাণকাজের হাত ছেড়ে দেবে না । এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যেপানির উত্স ও পরিবেশ রক্ষা এবং সংক্রামকরোগ প্রতিরোধমূলক কাজ শুরু করেছে । যাতে দুর্যোগপূর্ণ সময়ের পর কোনো সংগ্রামক রোগ না ছড়ায় । তিনি বলেন , আমরা সিছুয়ান প্রদেশের দুর্গত এলাকার স্বাস্থ্যও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছি । চিকিত্সার প্রকৌশল দিক থেকে যারা অভিজ্ঞ ও যোগ্য আমরা তাদেরকে দুর্গত এলাকায় পাঠিয়েছি । তারা স্থানীয় চিকিত্সকদের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে কাজ করছেন । ১২ মে বিকেলে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াপাও ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার ও ত্রান কাজ পরিচালনা করেন । ১৬ মে সকালে প্রেসিডেন্ট হু চিনথাও বিমান করে সিছুয়ান প্রদেশের দুর্গম এলাকার ক্যাডার ও জনসাধারণ এবং ত্রাণ কর্মীদেরকে দেখতে গেছেন । --চুং শাওলি
|