চীনের সিছুয়ান প্রদেশে ১২ মের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর পাকিস্তানের প্রেসিডেণ্ট পারভেজ মুশাররফ, প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানিসহ বহু নেতা দ্রুত তাঁদের সমাবেদনা বাণী পাঠিয়েছেন। বানীতে তাঁরা ভূমিকম্পের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দুর্গতদের প্রতি সমাবেদনা জানান। ১৪ মে প্রেসিডেণ্ট মুশাররফ পাকিস্তানে অবস্থিত চীনা দূতাবাসে গিয়ে সি ছুয়ান প্রদেশের ভূমিকম্পে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর সমাবেদনা জানান। একই দিন, প্রধানমন্ত্রী গিলানি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সংবাদদাতাকে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে আমন্ত্রণ জানান এবং দুর্যোগ পীড়িত চীনা ভাইবোনের প্রতি সমাবেদনা জানান।
১৪ মে বিকেলে পাকিস্তানের প্রেসিডেণ্ট পারভেজ মুশাররফ পাকিস্তানের চীনা দূতাবাসে গিয়ে একটি সমাবেদনা খাতায় তিনি লেখেন, ভূমিকম্পে ব্যাপক হতাহত ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিতে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পাকিস্তানের জনগণ চীনা ভাইবোনদের প্রতি সমাবেদানা জানায়।আমি আশা করি, চীনা জনগণ দ্রুত এ দুর্যোগ অতিক্রম করতে পারবেন। এর পর দূতাবাসের কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, এ দুর্যোগে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে চীনা জনগণের পাশে দাঁড়াবে। তিনি বলেন,
'চীন সরকার ও জনগণ এ আকম্মিক দুর্যোগ আতিক্রম করতে সক্ষম হবে বলে আমাদের দৃঢ় আস্থা রয়েছে। পাকিস্তানে ভূমিকম্প আঘাত হানার পরপরই আমি যে কথাটা বলেছিলাম, সেটা আমি আবারো বলতে চাই, আমাদের মতো আপনারাও চ্যালেঞ্জকে সুযোগে রূপান্তর করে দুর্গতদের সুন্দর ভবিষ্যত জীবন গড়ে তুলতে পারবে বলে আমি আশাবাদী। পাকিস্তানের সরকার ও জনগণ সবসময় আপনাদের পাশে আছে। যে কোনো প্রয়োজনে আমরা প্রস্তুতি আছি।
২০০৫ সালে ৮ অক্টোবর পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। ভূমিকম্পের পরপরই চীন সরকার অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে পাকিস্তানে ত্রাণসামগ্রী এবং ত্রাণ দল পাঠিয়েছিল। এ কথা স্মরণ করে মুশাররফ বলেন, "পাকিস্তানের ভূমিকম্পে চীন যে ত্রাণসাহায্য দিয়েছিল, তা আমাদের চিরদিন মনে থাকবে। আমি খুব খুশি হয়েছি যে, এবারের ভূমিকম্পে চীন পাকিস্তানের ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করছে। ত্রাণসামগ্রী বহনকারী পাকিস্তানী বিমান উড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং যে কোনো সময় চীনে পৌঁছতে পারে। চীনা দুর্গতদের সাহায্যে পাকিস্তান যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
একই দিন বিকেলে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সংবাদদাতাকে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে তার কাছে পাকিস্তান সরকার চীনের ভূমিকম্পে যথাসাধ্য ত্রাণসাহায্য দিতে প্রস্তুত বলে জানান। তিনি বলেন, পাকিস্তান-চীন মৈত্রী সময়ের পরিক্ষায় উত্তীর্ণ। এ দুর্যোগে পাকিস্তানের জনগণ চীনের জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করে যাবে। তিনি বলেন, "পাকিস্তান সরকার, আমার দল ও মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে চীনের ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিতে আমি গভীর সমাবেদনা জানাই। আমরা দুর্গত অঞ্চলে ওষুধ ও কম্বলসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী পাঠাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা একটি হাসপাতালের চিকিত্সক দলকে ত্রাণ কাজে অংশ নেওয়ার জন্য পাঠাবো। এ মন এক দুঃসময়ে আমরা তাঁদের জন্য কিছু করতে চাই।
একই দিন, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাদিক ইসলামাবাদে চীনের কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরকে আমন্ত্রণ জানান। তাদের কাছে চীনা জনগণের প্রতি তিনি সমাবেদনা জানান। তিনি বলেন, তিনি আত্মবিশ্বাসী যে, চীনা জনগণ এ দুর্যোগ অতিক্রম করতে সক্ষম হবে। মোহাম্মদ সাদিক বলেন, সি ছুয়ান প্রদেশে ভূমিকম্পের পর, পাকিস্তানের প্রেসিডেণ্ট, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বহু নেতা দ্রুত সমাবেদনা বানী পাঠিয়েছেন। এ থেকে পরিস্কার যে, চীনের জনগণের প্রতি পাকিস্তানের জনগণের অনুভূতি অত্যন্ত গভীর। চীন সরকারের ত্রাণকাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, "দুর্গত অঞ্চলে ত্রাণসাহায্য ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানোর ক্ষেত্রে চীন সরকারের গতি খুবই দ্রুত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এ দুর্যোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পেরেছে। ত্রাণকাজ চলাকালে চীনের জনগণ সংযম ও শৃংখলা বজায় রেখেছে। চীন সরকার এখন অত্যন্ত সক্রিয় ও দ্রুততার সঙ্গে ত্রাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মহান চীনের জনগণ এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্রুত অতিক্রম করতে পারবে বলে আমাদের আস্থা রয়েছে।
|