v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-14 18:12:01    
চীনের ১৮তম বই মেলা(ছবি)

cri
    বর্তমানে মধ্য চীনের হোনান প্রদেশে চীনের ১৮ তম বই মেলা চলছে। এ মেলায় "পঠন জনপ্রিয়করণ" বিষয়ক প্রায় শতাধিক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের পাঠক এসব অনুষ্ঠান থেকে সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য উপভোগ করছেন। এবার শুনুন এ সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন:

    ২৬ এপ্রিল ছিল বিশ্ব মেধাস্বত্ব অধিকার দিবস। এ দিন চীনের ১৮তম বই মেলা হোনান প্রদেশের রাজধানী জেং চৌ শহরে উদ্বোধন হয়। প্রায় ২৬০০ প্রকাশনা সংস্থা বিক্রি ও প্রদর্শনের জন্য ৩ লক্ষাধিক বই নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে। বই মেলার সাংগঠনিক কমিটির উপ পরিচালক ও চীনের জাতীয় তথ্য ও প্রকাশনা সাধারণ বিভাগের প্রকাশনা অবমুক্তি পরিচালনা বিভাগের মহাপরিচালক ফ্যান ওয়েই পিং বলেন, আকার, প্রকাশনার সংখ্যা ও বইয়ের বৈচিত্র্য ইত্যাদি দিক থেকে এ বই মেলার সঙ্গে আগে বইমেলাগুলোর তুলনা করা যায় না। "জাতীয় বই বাজার" থেকে এর নাম "বই মেলায়" রূপান্তরিত হয়েছে। ফ্যান ওয়েই পিং বলেন, ১৯৮০ সালে প্রথম বই মেলার পর থেকে মেলার আকার দ্রুত বেড়েছে। এ থেকে চীনের প্রকাশনা শিল্পের উন্নতি বোঝা যায়। তিনি আরও বলেন,

    গত ২৮ বছর ধরে, বই মেলার আকার বাড়ছে, বইয়ের ধরণ সমৃদ্ধ হচ্ছে, সেবার পদ্ধতিও বৈচিত্র্যময় হচ্ছে এবং সমাজের ওপরে মেলার ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। প্রথম বই মেলায় শুধুমাত্র ২০টি স্টল ছিল। আজ এ সংখ্যা বেড়ে ২৩০০টিতে দাঁড়িয়েছে। প্রথম দিকে ১৩৩০ ধরণের বই ছিল। এখন এ সংখ্যা ৩     লক্ষাধিক। আগে এ বই মেলায় শুধু বই বেচাকেনা হতো। আজকের বই মেলায় প্রকাশনা প্রদর্শনী, তথ্য আদান-প্রদান, বিষয়বস্তু আলোচনা ও পাঠে পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী থাকে। এতে চীনের তথ্য ও প্রকাশনা শিল্পের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা তুলে ধরা হচ্ছে। প্রকাশনা শিল্পে সংস্কারের ফলাফল প্রদর্শন, উন্নয়ন অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান, ব্যাপক পুস্তকপঠণ ও সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতি গঠনে এ বই মেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে রূপ নিয়েছে।

    এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রকাশনা মহল ব্যাপক পাঠকের কাছে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য নানা প্রকাশনা সংস্থা এ বই মেলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। চীনের শিল্প ও বাণিজ্য যৌথ প্রকাশনার বিপণন ব্যবস্থাপক ছাওরোং বলেন,

    গত ১৫ বছর ধরে, ক্রমশ আমাদের প্রকাশনা শিল্পের উন্নতি হচ্ছে। এবার আমরা বড় আকারে এই বই মেলায় অংশ নিয়েছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা প্রকাশনা মহলকে জানাতে চাই. চীনের শিল্প ও বাণিজ্য যৌথ প্রকাশনা লিমিটেড গড়ে তোলা হবে। আমরা প্রধানত আর্থ-বাণিজ্য, পরিচালনা ও উত্সাহব্যঞ্জক বই প্রকাশ করবো যাতে আমাদের ব্র্যান্ডের প্রভাব আরও বাড়ে এবং বাজারের কিছু অংশ দখল করতে পারে।

    গণ সাহিত্য প্রকাশনালয় চীনের একটি বিখ্যাত প্রকাশনালয়। তাদের আমদানিকৃত বিখ্যাত উপন্যাস "হ্যারি পটার" বই বিক্রিতে শীর্ষে রয়েছে। এ প্রকাশনালয়ের মহাপরিচালক প্যান খ্যাই সিয়োং মনে করেন, প্রকাশনা মহল ও পাঠকদের মধ্যে বই মেলা একটি প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা পালন করে।তিনি বলেন,

    আমরা আশা করি, পাঠকদের সঙ্গে আমাদের সুষ্ঠু আদান-প্রদান গড়ে উঠবে। আমাদের লক্ষ্য শুধু বিক্রি ও বই বুকিং দেওয়া নয়। এটি পাঠকদের মহা সম্মেলন বলে আমরা সবচেয়ে নতুন বইগুলো নিয়ে আসি।

    তাইওয়ানের গ্রন্থ প্রকাশনা উন্নয়ন সমিতি দশটিও বেশি প্রকাশনালয়ের বই এনে মূলভূভাগের প্রকাশনা মহলের সঙ্গে বিনিময়ের সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। এ সমিতির সচিব মিস উ মেং পিং বলেন,

    এবার আমরা দশটিও বেশী প্রকাশনালয়ের দু থেকে তিন হাজার ধরণের বই নিয়ে এসেছি। তাইওয়ানের কিছু বই খুবই ভালো। এ মেলার মাধ্যমে আমরা মূলভূভাগের পাঠকের কাছে বইগুলো তুলে ধরবো।

    হোনান প্রদেশ চীনের সভ্যতা এবং চারটি বড় আবিস্কারের অন্যতম মুদ্রণ প্রযুক্তির জন্মস্থান। খাই ফেং ও লুও ইয়াং ছিল চীনের পুরোনো রাজধানী ও প্রাচীন পুস্তক শিল্পের কেন্দ্র। " বইয়ের গন্ধে হোনান" সংস্কৃতি সম্প্রসারণের জন্য এ বই মেলা জেং চৌ শহরে যেমন শীর্ষ স্থান দখল করেছে তেমনি খাই ফেং, লুও ইয়াং এবং আন ইয়াং শহরে শাখা গড়ে তোলা হয়েছে। পাঠক সম্মেলন, নতুন বই স্বাক্ষর ও বিক্রয় অনুষ্ঠান ও ভালো বই প্রদর্শনী এবং ভালো বই প্রতিটি পাঠকের ঘরে প্রবেশ" বিষয়ক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতাসহ প্রায় ১২০টি অনুষ্ঠান হয়েছে। ১১ বছর বয়সী পাঠক ওয়াং সিউ ছুন "পঠণ জনপ্রিয় করণ" ও পেইচিং অলিম্পিক গেমসকে সম্পৃক্ত করে দেখে। সে বলে,

    "প্রত্যেকে পাঠ করে বেশি জ্ঞান অর্জন করলেই কেবল ২০০৮ সালে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের জন্য আসা বিদেশীদের সঙ্গে ভালোভাবে আদান-প্রদান করতে পারে।

    বই মেলার চীন প্রকাশকদের উচ্চ ফোরামে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির হোনান প্রাদেশিক কমিটির সম্পাদক স্যুই কুয়াং ছুন, চীনের তথ্য ও প্রকাশনা সাধারণ বিভাগের মহাপরিচালক লিউ বিন চিয়ে আর অনেক বিশেষজ্ঞ "পঠণ জনপ্রিয়করণ" বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন। লিউ বিন চিয়ে তার মূল বক্তৃতায় গণ সংস্কৃতি সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এবং কৃষকদের জন্য বই ঘর গঠন ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন,

    সবার পাঠাভ্যাস গ্রামীণ গণ সংষ্কৃতি সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সহায়ক। পাঠের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরী করা, কৃষকদের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা, পাঠের মাধ্যমে কৃষকদের জ্ঞান চর্চা ত্বরান্বিত করা, কৃষকদের সাংস্কৃতিক জীবন-যাত্রা উন্নত করা, সাংস্কৃতিক চরিত্র উন্নীত করা এবং জ্ঞানের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করা উচিত। কৃষকদের জন্য গ্রামে লাইব্রেরি গড়ে তুলতে হবে, যাতে "পঠন জনপ্রিয়করণের" মর্ম পুরো গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। গ্রামীণ ও সংখ্যালঘু জাতি এলাকায় বই ও পত্রিকা পাওয়া এখনো দুরূহ। এ সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কৃষকদের পাঠ করার অভ্যাস লালন করা এবং তাদের জ্ঞানের মান ও সংস্কৃতির মান ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করা গ্রামীণ সংস্কৃতি গঠন কাজের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।

    লিউ বিন চিয়ে উল্লেখিত "গ্রামীণ বই ঘর"-এর মানে হচ্ছে গ্রামের কাছাকাছি লাইব্রেরি গড়ে তোলা। প্রতিটি বই ঘরে ২০ হাজার ইউয়ান মূল্যের প্রকাশনা থাকবে। তাতে ১৫০০টি বই, ৩০ টি পত্রিকা ও ১০০টি অডিও-ভিডিও থাকবে। বর্তমানে হোনান প্রদেশে এমন ৩৮০০টি বই ঘর গড়ে উঠেছে। সারা চীন গ্রামীণ গ্রন্থাগারের ওপরে গুরুত্ব আরোপ এবং গ্রামীন সংস্কৃতি গঠনে আরও বেশী বরাদ্দ পাওয়ার জন্য এ বই মেলা কর্তৃপক্ষ প্রকাশকদের প্রতি "গ্রামীণ বই ঘর", গ্রামীন শ্রমিকদের স্কুলগামী ছেলেমেয়ে এবং পাহাড়ী গ্রামে বই উপহার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

    লিউ বিন চিয়ে তাঁর বক্তৃতায় বলেন, যে কোনো মহান জাতি পাঠ পছন্দ করে। যে কোনো মহান দেশ জ্ঞানের ভক্ত। এ বই মেলায় পঠন জনপ্রিয়করণে অংশগ্রহণ থেকে পরিস্কার যে, পাঠ ও পাঠে উত্সাহ যোগানো এ বই মেলার মূল নীতি।