v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-14 21:07:56    
চীনের নামকরা চলচ্চিত্র পরিচালক সিয়াও ফোং(ছবি)

cri

    সম্প্রতি চীনের নামকরা পরিচালক সিয়াও ফোং পরিচালিত চলচ্চিত্র ' উ খে চি তান ' পেইচিংয়ের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে প্রদর্শিত হয়েছে । চলচ্চিত্র সমালোচকরা এ ছবির গভীর মূল্যায়ন করেছেন । তারা বলেন , এ ছবিকে চীনের হলিউডের ছবি বলা যায় । সাংবাদিককে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে চলচ্চিত্র পরিচালক সিয়াও ফোং বলেন , তিনি এই প্রথমবার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র তৈরী করেছেন । নানা ধরনের প্রতিকূলতা অতিক্রম করেই তিনি এ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।

    চলচ্চিত্র ' উ খে চি তান ' এর কাহিনী রচয়িতার কল্পনা নয় , বরং একটি বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে রচনা করা হয়েছে। দক্ষিণ চীনের একটি জেলখানায় এ ঘটনা ঘটেছিল । কোন এক বছর সেখানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয় । এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জেলখানার দশ হাজার বন্দী অপরাধীকে নিরাপদ স্থানে সরাতে হবে । স্থানান্তরের পথে দশ হাজার অপরাধীর মধ্যে একজনও পালিয়ে যায় নি। তারা সবাই নিরাপদে গন্তব্য স্থলে পৌছেছে । এ ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । এ চলচ্চিত্র দেখার সময় একটি প্রশ্নে সব সময় দর্শকের মনে জাগে , প্রশ্নটি হলো প্রবীন পুলিশ মা কাকে লক্ষ্য করে তার বন্দুকের পাঁচটি বুলেট ছুড়েছে । ছবিটি দেখে অনেক দর্শক পুলিশদের অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থায় বন্দী অররাধীকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টার জন্য মুগ্ধ হয়েছেন । এ চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে তিন বছর সময় লেগেছিল । যথেষ্ট অর্থের অভাবে নির্মাণের কাজ সাত বার বন্ধ রাখতে হয়েছিল । পরিচালক সিয়াও ফোংয়ের পক্ষে এ চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ । কষ্ট হলেও সিয়াও ফোং এ চলচ্চিত্র নির্মাণে হাল ছেড়ে দেন নি । তিনি এ চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু পছন্দ করেন । তিনি বলেন , আমি সব বিষয়ের ওপরই চলচ্চিত্র তৈরী করতে পারি । তবে আজ পর্যন্ত সত্যিই নিজেকেও মুগ্ধ করতে পারে এমন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারি নি । ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুশৃঙ্খলভাবে দশ হাজার বন্দী সরানোর চেষ্টা সবাইকে মুগ্ধ করেছে ।

উ খে চি তান

   সিয়াও ফোং বলেন , এ ছবিতে বন্যার দৃশ্য উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরী করা হয়েছে । এ চলচ্চিত্রে গুরুতর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে মানুষের চিন্তাভাবনা ও বন্যার হাত থেকে বাঁচার আকাংখা চমত্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে । এ ছবিতে সব অভিনেতাদের প্রবল বন্যার পানিতে ডুবে মরিয়া হয়ে বাঁধে ওঠার অভিজ্ঞতা আছে , তাই দর্শকরা একে প্রকৃতই মনে করেন । এ ছবিতে দর্শকরা দেখতে পাবেন , বন্দীবহনকারী গাড়ী পানিতে ডোবার পর পুলিশ বন্দীদের খোঁজার সময় সেতু টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যায় । বন্যায় পাহাড়ের মাটির ধ্বসে পড়ায় পুলিশ ও বন্দী অপরাধীরা অত্যন্ত বিপদজনক অবস্থায় পড়েছিল । এই সব বাস্তব দৃশ্য দর্শকদের মনে গভীর রেখাপাত করে । এ চলচ্চিত্রের ৯০ শতাংশ ছবি বৃষ্টির মধ্যে তোলা হয়েছে । নির্মাণের সময় বন্যার পানি ও বৃষ্টির পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন । আসল প্রয়োজন বাজেটকে অনেক ছাড়িয়ে যায়। তাই এ চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য পর্যায়ে অর্থাভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়েছিয়েছিল । পরিচালক সিয়াও ফোং তার জমানো সব অর্থ ছবি নির্মাণে ব্যবহার করেছেন এবং স্ত্রীর অজান্তে একটি বাড়িও বিক্রি করেছেন। অর্থ জোগাড়ের জন্য এ চলচ্চিত্র নির্মাণ সাত বার বন্ধ করা হয়েছিল এবং অভিনেতাদের একাধিকবার বদল করা হয়েছে। এ চলচ্চিত্র নির্মাণের কাহিনী নিয়ে একটি ছবি তৈরী করলে চমত্কার একটি ছবি হবে ।

    ২৮ বছরে সিয়াও ফোং চলচ্চিত্র নির্মাণ করে অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন । চীনের সব গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র পুরস্কার তিনি পেয়েছেন । তিন সব বিষয়ের ওপর ছবি তৈরী করতে পারেন । ১৯৯২ সালে তার পরিচালিত ' লাই পা , ইয়োন চিয়াও সুও হুয়া ' চীনের শিশু চলচ্চিত্র পুরষ্কারর--থোং নিউ পুরষ্কার পান । ১৯৯৩ সালে তার রচিত ও পরিচালিত চলচ্চিত্র ' ও গে পা পা চিয়া খে সিং ' চীনের অভিনয় পুরষ্কার পেয়েছে , ১৯৯৫ সালে তার পরিচালিত চলচ্চিত্র ' কিশোর সুন ইয়াত সেন ' চীনের 'গোন্ডেন কক' পুরস্কার পেয়েছে । ১৯৯৭ সালে তার রচিত ও পরিচালিত ' সিয়া পেই চি হুয়ান চুয়ো মু চি ' চীনের হুয়া পিয়াও পুরস্কার পেয়েছে । এ চলচ্চিত্র যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র উত্সবেও অংশ নিয়েছে । ১৯৯৮ সালে তার নির্মাণ করা ' চে সান কেন পি না সান কাও' আর ২০০২ সালে তৈরী ' পেই সুই ই চান ' চীনের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে । অনেক পুরস্কার পাওয়া সিয়াও ফোং বলেন, তিনি পুরস্কারের চেয়ে দর্শকের প্রতিক্রিয়ার ওপর বেশি গুরুত্ব দেন । তিনি বলেন , ভালো পুরস্কার টাকা ও গৌরব নয় , চলচ্চিত্রের বাজারকে আমি বেশি গুরুত্ব দিই । দর্শক সংখ্যা , বিশেষ করে দর্শকদের মন জয় করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিচালকদের পক্ষে দর্শকদের মন জয় করা খুব কঠিন কাজ । আমি জানি আমাকে জোর চেষ্টা করতে হবে , নইলে আমি দর্শকের মন জয় করতে পারবো না এবং বাচার পাবো না । চলচ্চিত্রের বাজারকে আমি পাহাড় মনে করি । পালানোর পরিবর্তে আমাকে এ পাহাড়ে উঠতে হবে । আমি মনে করি ' উ খে চি তান ' ছবি নির্মাণ পাহাড় আরোহনের মতো কঠিন ।

    সিয়াও ফোং নানচিং শিল্পকলা ইন্সটিটিউটের চিত্রকলা বিভাগের স্নাতক । অনেকেই মনে করেন , তিনি ভালো চিত্রশিল্পী হতে পারতেন । তবে তিনি মনে করেন ,একটি ছবি তার মনের সব ভাবনা প্রকাশ করতে পারে না । তার চোখে চলচ্চিত্র এক এক চলমান ছবি । প্রথম দিকে তিনি চলচ্চিত্র স্টুডিওতে ছবি আঁকার কাজ করেন । পরে তিনি মনে করেন চলচ্চিত্র পরিচালক তার কাছে বেশি পছন্দনীয় । প্রথমে তিনি একটি ধারাবাহিক টি ভি নাটক নির্মাণের সুযোগ পান। তিনি নাটকের কাহিনী লেখার পরিবর্তে ৫৮০টি ছবি এঁকে কাহিনী বর্ণনা করেন ।তার পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলোতে চীনাদের বাস্তব জীবন এবং সমাজের প্রতি শিল্পীর দায়িত্ব প্রতিফলিত হয়েছে । সিয়াও ফোং বলেন , আমি সাহিত্য পছন্দ করি । আমি অনেক কবিতাও লিখেছি । আঁকা ছবি আমার মনের ভাবনাকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারে না । চলচ্চিত্র প্রচুর ছবি নিয়ে গঠিত । একটি চলচ্চিত্রে ছয় শ' থেকে সাত শ'টি ছবির সর্ট আছে । এতে আমি অনেক অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি , তাই আমি চলচ্চিত্রকে বেশি পছন্দ করি ।

    সিয়াও ফোংয়ের বয়স চল্লিশের কিছু বেশি । দেখতে ক্লান্ত মনে হয় । তিনি বলেন , চলচ্চিত্র নির্মাণ পাহাড় উঠার মতো কঠিন কাজ । চলচ্চিত্র' উ খে চি তান ' নির্মাণ তার পক্ষে এক বড় কঠিন কাজ, পাহাড় সমান । এ পাহাড় ডিঙ্গানোর জন্য তিনি তার সব কিছু উত্সর্গ করেছেন । চলচ্চিত্র পরিচালকের কাজ সত্যিই কঠিনকাজ । সিয়াও ফোং কাজ করলে থামতে চান না । তিনি প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা করজ করেন । এবছর তিনি তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন । তিনি বলেন , পরিবারপরিজনের কাছে তিনি ঋণী। তিনি খুব কম সময় বাড়িতে থাকে । চলচ্চিত্র নির্মাণ তার জীবনের প্রধান কাজ । এ জন্য তিনি মাঝে মাঝে কষ্ট পান । তিনি বলেন , তিনি সত্যিই নিজের পছন্দ করজ ছেড়ে দিতে পারে না ।(ফাং সিউ ছিয়েন)