v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-13 21:10:40    
দক্ষিণ কোরিয়ান চো সাং হুয়ে'র চীনের জীবন

cri

    চো সাং হুয়ে মধ্য চীনের আন হুই প্রদেশের রাজধানী হো ফেই শহরে ১২ বছর ধরে আছেন । তিনি বরাবরই চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি ও আর্থ-বাণিজ্যিক বিনিময় ত্বরান্বিত করার জন্য ভূমিকা পালন করে আসছেন । এর কারণে তিনি চীনের রাষ্ট্রীয় মৈত্রী পুরস্কারও পেয়েছেন এবং পেইচিং অলিম্পিকের মশাল হস্তান্তরের মশালবাহকদের একজন । তিনি বলেন , এখন তিনি হো ফেই নাগরিকে পরিণত হয়েছেন ।

    ৫০ বছর বয়সী চো সাং হুয়ে সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , চীনে আসার আগে তিনি একটি শিশুদের স্কুলের প্রধান ছিলেন , তার স্বামী একটি কম্পিউটার বাজার পরিচালনা করতেন । তাদের জীবন সচ্ছল ও আরামদায়ক হওয়া সত্বেও ১৯৯৬ সালে তার পরিবার হো ফেই শহরে বসবাস করার এবং এ শহরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত নেন ।

    তিনি বলেন , তখন অনেক দক্ষিণ কোরিয়ান চীনের সমুদ্রতীরবর্তী শহরগুলোয় বসবাস ও কাজের সুযোগ খুঁজছিলেন । তিনি দ্বিধা না করে নিজের ছেলের প্রস্তাব গ্রহণ করে বাস করার জন্য মধ্য চীনের আন হুই প্রদেশের হো ফেই শহরকে বেছে নেন । তিনি ও তার স্বামী এ শহরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরীয় ভাষার শিক্ষক । তিনি বলেন :

    যদিও সমুদ্রতীরবর্তী শহর দক্ষিণ কোরিয়ার খুব কাছাকাছি । সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ানও অনেক বেশি , জীবনযাপনের জন্য বেশ সুবিধাজনক । তবে আমার ছেলে মনে করে , হো ফেই থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত খুবই সুবিধাজনক , হো ফেই একটি বিজ্ঞানসম্মত শহর , প্রাচীণকাল থেকেই দেশের অনেক বরেণ্য ব্যক্তি এখানে জন্ম গ্রহণ করেছেন । তা ছাড়া , এখানে বসবাসের খরচও বেশ কম । বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আমরা উপলব্ধি করতে পারি , এ শহরের উন্নয়নের সম্ভাবনা অনেক বেশি ।

    প্রথমে চীনে এসে চো সাং হুয়ের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে ভাষা । তাই তিনি ও পরিবারের সবাই একসঙ্গে চীনা ভাষা শিখতে শুরু করেন । তিনি বলেন , এখন স্থানীয় ভাষাও বলতে পারেন । এসব কথা তিনি সবজি বাজার থেকে শিখে ফেলেছেন । চীনা ভাষা শেখার পাশাপাশি তার মনে একটি বড় পরিকল্পনাও আছে । তিনি বলেন :

    ১৯৯৬ সালে যখন আমরা প্রথম চীনে আসি , তখন দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের পণ্য কিনতে পাওয়া যেতো । তাই আমি আশা করছিলাম যে চীনে দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যও কিনতে পারবো ।

    শুরু থেকেই চো সাং হুয়ের পরিকল্পনা ছিল হো ফেই শহরে একটি "দক্ষিণ কোরিয়া নগরী" প্রতিষ্ঠা করা । এ নগর থেকে হো ফেইয়ের নাগরিকরা সহজেই দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্য কিনতে পারবে । এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চো সাং হুয়ে সক্রিয়ভাবে হো ফেই শহরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং অনেক দক্ষিণ কোরীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন । তিনি বলেন :

    হো ফেই'র পুঁজি আকর্ষণ ব্যুরো ও উন্নয়ন এলাকার পরিচালকের সঙ্গে আমরা দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে চার বার পুঁজি বিনিয়োগ নিয়ে বৈঠক করেছি । আমি এ কাজ করছি তার প্রধান কারণ হল আমার বিশ্বাস , হো ফেই শহর পুঁজি বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো বিকল্প । এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব সুবিধাজনক , এ শহর বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সহায়ক নীতিও প্রণয়ন করেছে । তা ছাড়া , অন্যান্য শহরগুলোয় অনেক বিদেশি আছে , তবে তখন এ শহরে বিদেশি ব্যবসায়ীর সংখ্যা খুব কম ছিল । তাই সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এর ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেন এবং অনেক সহযোগিতা করেছেন ।

    গত বছর চো সাং হুয়ে'র উদ্যোগে হো ফেই শহরের প্রথম "দক্ষিণ কোরিয়া পণ্যদ্রব্য নগরীর" আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে । এ নগরের নির্বাহী ব্যবস্থাপক ম্যাডাম সি সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , এখানে দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন ধরনের কাপড়চোপড় ও রেস্তরাঁ আছে । হো ফেইয়ে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ান হোক কিংবা চীনের ক্রেতা হোক , সবার জন্য এখানে জিনিস কেনাকাটা করা অনেক সুবিধার । তিনি বলেন :

    এ বাজারের জিনিস সবই দক্ষিণ কোরীয় বৈশিষ্টের। বাজার পরিচালনার পদ্ধতি কিংবা চিন্তাধারা সবই চো সাং হুয়ের মস্তিষ্কজাত।

    চো সাং হুয়ে মনে করেন , দক্ষিণ কোরীয় পণ্য নগরী থেকে শুধু বিরাট অর্থনৈতিক লাভ পাওয়া যাবে তাই নয় , বরং তা চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্যও সহায়ক হবে ।

    এ ছাড়া চো সাং হুয়ে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষা বিনিময়ে ভূমিকা পালন করেছেন । তার প্রচেষ্টায় হো ফেই'র দশ বারোটি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুল দক্ষিণ কোরিয়ার স্কুলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছে । আন হুই প্রদেশের ঐতিহ্য চিকিত্সা ইন্সটিটিউট ও দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ।

    এসব অবদানের কারণে চো সাং হুয়ে ২০০২ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় মৈত্রী পুরস্কার পেয়েছেন । তা ছাড়া , তাকে পেইচিং অলিম্পিকের মশাল হস্তান্তরের মশালবাহক হিসেবে নির্বাচিত করা হয় । এসব পুরস্কার সম্পর্কে তিনি বলেন :

    আসলে আমার একটু লজ্জা লাগে , কারণ আমার মনে হয় আমি সামান্য কিছু করেছি , সেই তুলনায় অনেক বেশি পুরস্কার পেয়েছি । তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আরো ভালো করে এসব কাজ করবো ।