v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-13 20:39:35    
মাও চিনফাংয়ের কাহিনী

cri
  চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি ২৮ বছর বয়সী মাও চিনফাং ই জাতির লোক । তিনি গ্রামে নারী বিষয়ক পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন । গত ৮ মার্চ শনিবার ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস । সে দিন ভোরবেলা থেকে মাও চিনফাংয়ের কক্ষে বারবার টেলিফোন রিংয়ের আওয়াজ হতে থাকে । টেলিফোনের আওয়াজের মধ্য দিয়েই মাও চিনফাংয়ের ব্যস্ততমদিন শুরু হয় ।

  ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণকারীমাও চিনফাং সিছুয়াং প্রদেশের সিমিয়েন জেলার আনসুন থানার চিছপিং গ্রামের নারী বিষয়ক পরিচালক । আশির দশকের পর জন্মগ্রহণ করে জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের মতোই মাও চিনফাং দেশ বিদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর একচেটিয়া দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছেন । একবার তিনি একসঙ্গে ৬টি বার্তাসংস্থার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন ।

  ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে সব তরুণতরুণীর জন্ম হয় তারা চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সাথেসাথে বড় হয়েছে । স্পষ্ট ব্যক্তিত্বসম্পন্ন তারা সাহসের সঙ্গে কাজ করে ও সাহসের সঙ্গে কথা বল। ২০০২ সালে চীনের দশম জাতীয় গণ কংগ্রেসের সময় আশির দশকে যাদের জন্ম হয় তাদের মধ্যে জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধির সংখ্যা মাত্র একজন ছিল । কিন্তু পাঁচ বছর পর অর্থাত ২০০৮ সালে এই প্রজন্মের দশ-বারোজন তরুণ-তরুণী একটি দলের মতো চীনের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক মঞ্চে প্রবেশ করেছেন ।

  মাও চিনফাংয়ের জন্মস্থান ই জাতি অধ্যুষিত একটি পাহাড়ী গ্রাম। ই জাতি দক্ষিণপশ্চিম চীনের একটি সংখ্যালঘুজাতি । ই জাতির লোকেরা গান ও নাচ করতে পারদর্শী । তারা কালো রংয়ের পোশাক পরতে পছন্দ করে । ই জাতির মেয়েরা সাধারণত বিশ-বাইশ বছর বয়সে বিয়ে করে । মাও চিনফাংয়ের মতো ২৮ বছর বয়সেও যাদের বিয়ে হয়নি এমন মেয়ের সংখ্যা স্থানীয় এলাকায় খুব কম দেখা যায় । মাও চিনফাংয়ের ছেলে বন্ধুও ই জাতীয় । তিনি চিচপিং গ্রাম থেকে কয়েক দশক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লিয়াং শান জেলায় কাজ করেন । দুজনের মধ্যে খুব কম দেখা-সাক্ষাত হয় । মাও চিনফাংয়ের কাজে সাহায্য করার জন্য তিনি তার কাছে নতুন কাজে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।

  ই জাতির রীতিনীতি অনুযায়ী তিনটি বিয়ের অনুষ্ঠানের পর নতুন দম্পতি বৈধ দম্পতি হতে পারে । মাও চিনফাং ও তার ছেলে বন্ধুর মধ্যে দুবার বিয়ের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল । কিন্তু শেষ বিয়ের অনুষ্ঠানটি হয়নি বলে তারা এখনো সত্যিকারের দম্পতি নন । তারা বিবাহ বিষয়ক সংস্থায় বিবাহ সনদ আনতে যাননি ।

  গ্রামের নারী বিষয়ক পরিচালক নিম্নতম নারী বিষয়ক দায়িত্ব পালন করেন । গোটা গ্রামবাসীদের ভোটে তিনি তা নির্বাচিত হন । ৪ বছর আগে ২৪ বছর বয়সী মাও চিনফাঙ গ্রামবাসীদের নির্বাচনে সবচেয়ে কম বয়সী গ্রামীন নারী পরিচালক হলেন । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, শুরুতে মাঝেমাঝে আমি কিছু লজ্জার ব্যাপারের সম্মুখীন হতাম । তখনও আমার বিয়ে হয়নি । তাই প্রসবসহ নানা বিষয়ের সম্মুখে লজ্জায়আমার মুখ লাল হয়ে যেতো। কিন্তু এখন আমি অভ্যস্ত এবং এ ধরণের কাজ করতে সক্ষম হয়েছি । নারী বিষয়ক কাজ ছাড়াও মাও চিনফাং অর্থনীতিরউন্নয়নে গ্রামকে সহযোগিতাও করেন । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি মনে করি , অর্থনীতি উন্নয়ন করতে চাইলে স্থানীয় এলাকার অবস্থা অনুযায়ী তা করা উচিত । স্বেচ্ছায় তা করা উচিত নয় ।

  প্রথমবার জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর মাও চিনফাং চাপ অনুভব করেন । তিনি মনে করেন, এখন তিনি কৃষক এবং ব্যাপক গ্রামীণ মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন । তাই তাকে গ্রামাঞ্চল উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে । পেইচিং আসার আগে তিনি দীর্ঘসময় ধরে গ্রামাঞ্চলেগবেষণা চালিয়েছেন । তিনি গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা , চিকিত্সা ও বুনিয়াদি ব্যবস্থার নির্মাণসহ ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রস্তাব পেশ করবেন ।

  মাও চিনফাংয়ের জন্মভূমি অপেক্ষাকৃত দরিদ্র । কিন্তু জন্মভূমি ত্যাগ করে শহরে যাওয়ার ইচ্ছা তার নেই । তিনি গ্রামাঞ্চলে থেকে গ্রামবাসীদের অর্থনীতি উন্নয়ন ও সম্মিলিত সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সাহায্য করাকে বেছে নিয়েছেন । তিনি বলেন, আগে আমি বাইরের বড়বড় শহরে মজুরী করতে চেয়েছিলাম । মজুরী করে যে আয় হয় তা দিয়ে যা করতে চাই তা সবই করতে পারি । কিন্তু বারবার চিন্তাভাবনা করার পর আমি মনে করি, মজুরী করে বেশি বেশি টাকাপয়সা উপার্জন করায় আমার পক্ষে কোনো তাত্পর্য নেই । আমার জন্মভূমি গরিব । যুব সম্প্রদায়ের সবাই চলে গেলে কে আমাদের গ্রাম নির্মাণ করবে ? নিজের প্রচষ্টার মাধ্যমে স্থানীয় এলাকার পশ্চাতপদ অবস্থা পরিবর্তনে কিছু অবদান রাখব বলে আমি আশা করি ।

  ৮ মার্চ জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াং চাওকো বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকল নারী সদস্যদের নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানান । মাও চিনফাং বলেন , তার পক্ষে এটা একটি সবচেয়ে তাত্পর্যসম্পন্ন নারী দিবস । বুনিয়াদী পর্যায়ের নারী ক্যাডার হিসেবে তিনি প্রথমবার জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন , প্রথমবার পেইচিং আসেন । প্রথমবার পেইচিং মহা গণ ভবনে নারী দিবস পালন করেন । এই সব তার কাছে যেনো একটা স্বপ্ন ।