পেইচিং সময় ১২ মে বেলা ২টা ২৮ মিনিটে চীনের দক্ষিণ-পূবার্ঞ্চলের সিচুয়ান প্রদেশের উয়েছুন জেলায় রিখটার স্কেল দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। চীনের বেশ কয়েকটি প্রদেশেও ভূকম্পন অনুভূত হয়। চীনের বে-সামরিক প্রশাসন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ১৩ মে সকাল ৭টা পযর্ন্ত সিচুয়ান , গানসু, শানসি ও ছংছিং সহ আটটি প্রদেশ ও শহরে এবারের ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৯২১৯ জনে দাঁড়িয়েছে ।৫ লাখেরও বেশী বাড়িঘর ধসে পড়েছে। বতর্মানে চীন সরকার পুরোদমেত্রাণ কাজ শুরু করে দিয়েছে। এখন শুনুন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিজস্ব সংবাদদাতার লেখা একটি রেকডিংভিত্তিক রিপোর্ট।
এবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্রীয় স্থান ছিল সিচুয়ান প্রদেশের উয়েছুন জেলা। সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী চেংডু থেকে এ জেলা মাত্র এক শো কিলোমিটারের একটু বেশি দূরে অবস্থিত । এই জেলার জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার। ভূমিকম্পের পর চীনের ভূমিকম্প ব্যুরোর মুখপাত্র জেন হং ওয়ে সাংবাদিকদের সংশ্লিষ্ট তথ্য অবহিত করেছেন। তিনি বলেন,
" এবারের ভূমিকম্প ছিল প্রচন্ড শক্তিশালী । চীনের নিনশা, গানসু, ছিংহাই, সেনসি, শানসি, শেনডং , হোনান, হোপেই, হুনান, ছংছিন , গুয়েযৌ, ইয়েন্নান , তিব্বত ও চিয়াংসু সহ বেশ কয়েকটি প্রদেশ ও শহরে ভূকম্পন অনুভূত হয়। "
ভূমিকম্প হওয়ার পর, চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি অবিলম্বে আহতদেরকে উদ্ধার ও দুর্গত এলাকায় জনসাধারণের জীবনযাত্রানিশ্চিত করার আদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি চীন সরকার একটি বিশেষ পরিচালনা কমিশন গঠন করেছে। প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও এই কমিশনের প্রধান পরিচালক ।
ভূমিকম্পের পর পরই প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও অবিলম্বে দুগর্ত এলাকায় গিয়েছেন। তিনি সরজমিনে ত্রাণ কাজ পরিচালনা করেন। তিনি ত্রাণ কাজে অংশ গ্রহণকারী সৈন্যদেরকে বলেন,
" আমাদের সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল মানুষকে উদ্ধার করা । যেখানে দুযোর্গ সবচেয়ে গুরুতর , বাইরে থেকে যোগাযোগ বিছিন্ন সেই সব স্থানের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের তত্পরতা যতই দ্রুত হবে ততই ভাল। এক সেকেন্ড আগে হলে একজন মানুষকে উদ্ধার এবং বাঁচানো সম্ভব হবে। "
প্রধান মন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও হাসপাতাল ও স্কুলে দুগর্তদের দেখতে গিয়েছেন।তিনি জনসাধারণকে দুযোর্গের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি বলেন, বিন্দু মাত্র আশা না থাকলেও উদ্ধারকারীরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালাবে ।
১২ মে রাতে চীনের কমিউনিষ্ট পাটির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর স্থায়ী কমিটির একটি অধিবেশনে ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও ত্রাণ কাজ সম্পর্কে বিশদ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অধিবেশনে জানানো হয়েছে যে, আহতদের চিকিত্সার জন্য চিকিত্সা কর্মীদের অবিলম্বে দুগর্ত এলাকায় যেতে হবে; যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুগর্ত এলাকায় খাদ্য, পানীয় জল, ওষুধ ও তাবু সহ নানা ধরনের ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে হবে; দুগর্ত এলাকার বিদ্যুত, টেলিযোগাযোগ ও পানি সরবরাহ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুনরুদ্ধার করতে হবে।
ভূমিকম্পের পর চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ অবিলম্বে ত্রাণ কাজে ঝাপিয়ে পড়েছে । বতর্মানে গণ মুক্তি ফোজের প্রায় বিশ হাজার অফিসার ও সৈন্য দুগর্ত এলাকায় পৌঁছেছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় ভূমিকম্প দুযোর্গ সম্পর্কীত জরুরী ত্রাণ দলও দুগর্ত এলাকায় পৌঁছেছে। চীনের রেড ক্রস সমিতির প্রথম দফা ত্রাণ সামগ্রী দুগর্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। সিচুয়াং প্রদেশের রেড ক্রস সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান জেন পু ব্যাখ্যা করে বলেন,
এ সব ত্রাণ সামগ্রী ওয়েছু দুগর্ত এলাকায় পাঠানো হবে । আমাদের জানা মতে সেখানে রাস্তাগুলো বাইরে থেকে বিছিন্ন । কিন্তু এ সব সামগ্রী যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুগর্ত এলাকায় পৌছানো যায় সে জন্য আমরা সবর্শক্তি দিয়ে চেষ্টা করবো । সিচুয়ান প্রদেশের রেড ক্রস সমিতি , চীনের বিভিন্ন প্রদেশের রেড ক্রস সমিতি ,আন্তর্জাতিক ফেডারেল ইউনিয়ান এবং হংকং ও ম্যাকাও –এর রেড ক্রস সমিতি যৌথভাবে সাহায্যের জন্য জরুরী আহ্বান জানিয়েছে। এ পযর্ন্ত প্রায় ৩০ লাখ রেন মিন পি সংগৃহীত হয়েছে ।
এ ছাড়া, চীনের বিভিন্ন মহল বতর্মানে দুগর্ত এলাকার জন্য চাদা সংগ্রহ করছে ।
|