শ্রীলংকা নির্বাচন কমিটি ১১ মে ঘোষণা করেছে, এটিটিই'র নিয়ন্ত্রণমুক্ত পূর্ব প্রদেশের প্রাদেশিক সরকারের ১০ মে নির্বাচনে ইউনাইটিড পিপলস ফ্রীডম অ্যালায়েন্স-ইউপিএফএ জিতেছে। এবারের নির্বাচন হলো ১৯৮৮ সালের পর পূর্ব প্রদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম স্থানীয় নির্বাচন। জনমত মনে করে চলতি বছরের মার্চ মাসে পূর্ব প্রদেশের বাত্তিকালোয়া অঞ্চলের স্থানীয় নির্বাচনের পর পূর্ব প্রদেশের শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য শ্রীলংকা সরকারের নেয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পূর্ব প্রদেশে প্রধানত বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী সিংহলী ও তামিল ছাড়াও কিছু মসলমান রয়েছে। পূর্ব প্রদেশসহ শ্রীলংকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এলটিটিই এবং সরকারি বাহিনী'র মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। তাই এ এলাকার পরিস্থিতি খুব উদ্বেগজনক থাকায়, অনেক অধিবাসীই সেখান থেকে পালিয়ে অন্যত্র চলে যায়। গত বছর জুলাই মাসে সরকারি বাহিনী এটিটিই'র হাত থেকে পূর্ব প্রদেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরপর শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট প্রতিশ্রুতি দেয় যে, প্রাদেশিক নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে, যাতে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা যায়।
১০ মে'র নির্বাচন হামলার পটভূমিতেই অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন আয়োজনের কয়েক ঘন্টা আগে, এই প্রদেশের উত্তর-পূর্বে ট্রিনকোমালি বন্দরে শ্রীলংকা নৌবাহিনীর একটি পণ্যবাহী জাহাজ হামলার শিকার হয়ে ডুবে যায়। এর আগের দিন সন্ধ্যায় এই প্রদেশের আমপারা অঞ্চলের একটি রেস্তোঁরায় বোমা হামলা হলে ১১জন নিরিহ মানুষ নিহত হয় এবং ২৯জন আহত হয়। শ্রীলংকার সরকার বাহিনী এটিটিই'র বিরুদ্ধে এ দু'টি সন্ত্রাস ঘটনার মাধ্যমে স্থানীয় নির্বাচন নস্যাতের অপচেষ্টার অভিযোগ করেছে। এ দুটি ঘটনার পর সরকারের স্থানীয় স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে নেয়া প্রচেষ্টা স্থানীয় মানুষের স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই সন্ত্রাসের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনে ভোটদান হার ছিল ৬৫.৭৮ শতাংশ।
শ্রীলংকা নির্বাচন কমিটি'র সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউপিএফএ পার্টি স্থানীয় পার্লামেন্টের ৩৭টি আসনের মধ্যে ২০টি পেয়েছে। বৃহত্তম সরকার বিরোধী দল ইউনাইটিড ন্যাশনাল পার্টি ১৫টি আসন পেয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর বিরোধী দল এই নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করে ফলাফল গ্রহণ করেনি। বিরোধী দলের নেতারা বলেছেন যে, তারা সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিয়ে এ ফলাফল প্রতিরোধের চেষ্টা করবে। কিন্তু এর আগে শ্রীলংকা সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, অল্প সংখ্যক ঘটনা ছাড়া, নির্বাচনটি ন্যায় ও অবাধ হয়েছে। শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে বলেন, নির্বাচন থেকে দেখা যায়, জনগণ চান যে স্থানীয় অঞ্চলে শান্তি ও গণতন্ত্র বাস্তবায়িত থোক। তারা সরকারের সন্ত্রাস দমন এবং দেশের উন্নয়নকে সমর্থন করে। শিক্ষা মন্ত্রী সুসিল প্রেমাজয়ন্থা বলেন, নির্বাচনের ফলাফল থেকে বোঝা যায়, বিভক্তিকরণের বিরুদ্ধে সরকারের দমন প্রচেষ্টাকে জনগণ সমর্থন করে। তা সরকারের এটিটিই দমন অভিযানকে জোরদার করবে।
বিংশ শতাব্দীর আশি'র দশকে শ্রীলংকার সরকারি বাহিনী ও এলটিটিই'র মধ্যকার সংঘর্ষে প্রায় ৭০ হাজার লোক প্রাণ হারায়। যুদ্ধের কারণে শ্রীলংকার অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাস থেকে এলটিটিইকে পূর্ব প্রদেশ থেকে উচ্ছেদ করার পর সরকারি বাহিনী উত্তরাঞ্চলে তাদের আঘাত হানার মাত্রা উন্নত করে। জানুয়ারি মাসে শ্রীলংকা সরকার ঘোষণা করে যে তারা ২০০২ সালে এলটিটিই'র সঙ্গে স্বাক্ষরিত যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্থগিত রেখে এলটিটিই'র ওপর আঘাত আরো জোরদার করবে। শ্রীলংকা সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে মোট ৩৫৮৬ জন এলটিটিই'র সদস্য এবং ২৬৯জন সরকারি সৈন্য সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে।
নির্বাচনের আগে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে বলেন, সরকার প্রথমে সন্ত্রাস নির্মূল করবে তারপর রাজনৈতিক পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করবে। বর্তামান সামরিক দমনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলংকা সরকার রাজনৈতিক পদ্ধতিতেও চেষ্টা করছে। শ্রীলংকার শান্তি পক্রিয়া এখনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। (ইয়াং ওয়েই মিং)
|