তিব্বতের ইতিহাস সম্পর্কিত একটি প্রদর্শনী পেইচিংয়ে প্রদর্শিত হয়েছে । তিব্বতের অতীত ও বর্তমান নামক এ প্রদর্শনীতে প্রচুর দলিলপত্র , আলোকচিত্র ও তৈজসপত্রের মাধ্যমে ১৯৫৯ সালের আগের সামন্ত ভূমিদাস ব্যবস্থা আমলের তিব্বতের পশ্চাত্পদ অবস্থা একং আজকের তিব্বতের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে । এ প্রদর্শনী দর্শকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে ।
এ প্রদর্শনীতে তিব্বতের ভূমি দাস ব্যবস্থা আমলে ভূমিদাসদের শাস্তি দেওয়ার যন্ত্রের ছবি ও তৈজসপত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এ সব তৈজসপত্র ও ছবিতে বোঝা যায় ভূমিদাসের প্রতি শাসকের শাস্তির মধ্যে ছিল চোখ উপড়ে ফেলা , কান ও হাত-পা কাটা । এ সব আলোকচিত্র ও তৈজসপত্র থেকে বোঝা যায় , পুরনো তিব্বতে ভূমিদাসের কোনো সামাজিক মর্যাদা ছিল না , তাদের জীবন কষ্টকর ছিল । দর্শক চৌ ছান ফেং বলেন , পুরনো তিব্বতের পশ্চাত্পদ অবস্থার প্রধান কারণ হলো অনুন্নত সামাজিক ব্যবস্থার কারণে উত্পাদন শক্তি অত্যন্ত কম ছিল । ভূমিদাসদের জীবন অত্যন্ত কষ্টকর ছিল । তাদের থাকার বাড়ি ছিল না বলে বাথরুম বা খোলা মাটিতে শুয়ে থাকতেন । সব ভূমি দাসমালিকের নিয়ন্ত্রনে ছিল । ভূমিদাসকে বন্দীর মতো ভাঙা বাড়িতে বা গবাদি পশুর সঙ্গে থাকতে হতো , ভূমিদাসরা খাবার না পেলে না খেয়ে থাকতে হতো । ১৯৬৫ সালে একজন ভূমিদাস আমাকে তাদের আগের জীবন সম্পর্কেবর্ণনা করেছেন , বলার সময় তিনি খুব কেঁদেছিলেন।
প্রদর্শনী দেখে আমরা এটাও জানতে পেরেছি যে , পুরনো তিব্বতে ভূমিদাসকে সারা দিন পরিশ্রম করতে হত । সারা দিন পরিশ্রম করেও দাসমালিকের কাছে তারা চিরদিন ঋণী থাকতো। কারণ দাসমালিকের আদেশে একজন ভূমিদাসের মৃত্যু হলে সকল গ্রামবাসীকে তার ঋণ পরিশোধ করতে হত । দর্শক ইয়াং ছি চি বলেন, ৫০ বছর আগে তিব্বত মধ্য শতাব্দীর ইউরোপের মতো পশ্চাত্পদ ছিল । কিন্তু দালাই এখনও এ ধরনের অন্ধকার শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান । মাদাম ইয়াং বলেন , আগের শাসন পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য দালাই তিব্বতে ফিরে আসতে চান । ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা দুটি ব্যাপার । ধর্মীয় নেতা হলে রাজনীতিতে জড়িত হওয়া উচিত নয় । দালাই এখন শুধু ধর্মীয় নেতা নয় , রাজনৈতিক ভিক্ষুও ।
প্রদর্শনীতে ১৯৫৯ সালের গণতান্ত্রিক সংস্কারের পর , বিশেষ করে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকরী করার পর তিব্বতের পরিবর্তন তুলে ধরা হয়েছে । কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থনে তিব্বতের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি বিরাট । দর্শক ই পো একজন রেল শ্রমিক , তিনি ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ ও লাসা রেলস্টেশনের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন । তিব্বতের পরিবর্তন তিনি নিজের চোখে দেখেছেন । তিনি বলেন , আমি তিব্বতের নির্মাণ কাজে অংশ নিয়েছি । ছিংহাই রেলপথ এক আধুনিক রেলপথ , রেলস্টেশন ও রেলগাড়ীর সরঞ্জাম বেশ উন্নত । এখন তিব্বতের পর্যটন শিল্প থেকে পাওয়া আয় কয়েক বছর আগের চেয়ে দ্বিগুন বেড়েছে ।
একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , ২০০১ সাল থেকে তিব্বতের উত্পাদন মূল্য টানা সাত বছর ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে ।
প্রদর্শনীতে তৈজসপত্র ও দলিলপত্রের মাধ্যমে তিব্বতে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে । ঐতিহাসিক তথ্যগুলো প্রমাণ করেছে যে তিব্বত প্রাচীনকাল থেকেই চীনের ভূখাভ । দর্শক লিউ শি কুই বলেন , ইতিহাসের ইউয়েন , মিং ও ছিং রাজবংশের দলিলপত্র ও তৈজসপত্রগুলো প্রদর্শিত হয়েছে । এতে প্রমাণিত হয়েছে যে তখন থেকেই তিব্বত চীনের ভূভাগের একটি অংশ । ১৬৫২ সালে ছিং রাজবংশের রাজা সুই চির সঙ্গে পঞ্চম দালাই সাক্ষাত করেন , এর পরের বছর রাজা তাকে দালাই লামা উপাধি দেন । দালাই লামার উপাধি আজ পর্যন্ত প্রচলিত । তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের নেতা , একাদশ পাচেন লামাও এ প্রদর্শনী পরিদর্শন করেছেন । তিনি বলেন , আমি মাতৃভূমির সুখশান্তি ও সকল জাতির ঐক্যের জন্য সসসময় প্রার্থনাকরি । আমি পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সাফল্যের জন্যও প্রার্থনা করি । আমি বিশ্বাস করি ,কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বে তিব্বত আরো সমৃদ্ধ হবে , তিব্বতীদের জীবন আরো সুখী হবে।
|