v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-08 20:09:03    
লা সা'র জেলে গ্রামের আনন্দ জীবন

cri
বন্ধুরা, জেলে গ্রামের নদনদী এলাকার দৃশ্য উল্লেখ করলে অধিকাংশ পর্যটকরা ভাবতে পারেন তীরবর্তী এলাকাগুলোর কথাই বলা হচ্ছে। কিন্তু আসলে তা নয়। আজকের 'চলুন বেড়িয়ে আসি' অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদেরকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে গেলেই বুঝবেন দেখার কত কিছু আছে। আমরা এখন যাচ্ছি চীনের অন্তর্দেশীয় পর্বতশোভিত তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী লাসা শহরের উপকণ্ঠের একটি জেলে গ্রামে।চুন বা গ্রামটি লাসা নদীর নিম্ন অববাহিকার পূর্ব তীরে এবং ইয়ারলুং জাংবো নদী ও লাসা নদীর মিলন স্থলে অবস্থিত। সেখানের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও দৃশ্য খুব সুন্দর ও মনোহর, বড় ও ছোট ছোট নদী অনেক আছে। গ্রামবাসীরা বংশপরম্পরায় এখানে মত্স্য শিল্পকে অবলম্বন করে জীবন-যাপন করছেন। এ জন্যই এটি তিব্বতের প্রথম জেলে গ্রাম বলে পরিচিত। এটাই তিব্বতের একমাত্র জেলে গ্রাম। চুন বা গ্রামবাসীদের মাছ-ধরার জীবন প্রায় ৩ শতাধিক বছরের উত্কৃষ্ট চামড়ার তৈরি ভেলা এবং বৈশিষ্টময় গরুর চামড়া তৈরি নৌকা থেকে তিব্বতের একমাত্র প্রাচীন ও তিব্বত জাতির বিশেষ জেলে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। চুন বা গ্রাম হচ্ছে তিব্বতের একমাত্র জেলে গ্রাম, এর কারণ হচ্ছে তিব্বতে পানি খুব কম। এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তিব্বতে অধিকাংশ মানুষ মাছ খান না। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সামাজিক বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির তিব্বত জাতি গবেষক ছিয়োং তা বলেন,সাধারণত তিব্বত জাতির মানুষ মাছ খায় না। তবে সাধারণভাবে এটি সত্য নয়। ইতিহাসের নথিপত্র অনুযায়ী, তিব্বতের কিছু কিছু এলাকা বিশেষ করে নদী তীরের গ্রামে তাদের পিতৃপুরুষের মধ্যে মাছ খাওয়ার চল ছিলো। এর মধ্যে চুন বা গ্রামও রয়েছে। বর্তমানে তিব্বতের সামাজিক অর্থনীতির উন্নয়ন বিশেষ করে বৈদেশিক যোগাযোগ দিন দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু বাইরের জাতির প্রথা ও জীবন যাপনে সাধারণ মানুষের জীবন-যাপনের রীতিনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। তিব্বতীদের মাছ না খাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব। তারা তিব্বতের হ্রদকে পবিত্র হ্রদ বলে সম্মান করেন। হ্রদে গোসল করা বা মাছ ধরাকে পবিত্র হ্রদকে অপবিত্র করা হিসেবে দেখা হয়। তাহলে কেন শুধু চুন বা গ্রামের মানুষদের মধ্যে মাছ ধরার ঐতিহ্য আছে? স্থানীয় কিংবদন্তী অনুযায়ী, চুন বা গ্রামের তিব্বতী মানুষ মাছ ধরা বা খাওয়ার জন্য 'দেবতা'র সম্মতি পেয়েছেন। চুন বা গ্রামের সাবেক গ্রাম কমিটির পরিচালক বৃদ্ধ সুও নান আমাদেরকে এখানকার রহস্যময় কিংবদন্তীর কথা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, এখানকার মাছের বংশবৃদ্ধির গতি খুব দ্রুত। নদীতে এতো মাছ যে নতুন মাছ থাকার কোনো জায়গা নেই। এ অবস্থায় অনেক মাছের পাখা গজিয়ে যায় এবং আকাশে নতুন জায়গা খুঁজে বের করে চলে যায়। ধীরে ধীরে আকাশেও মাছ বাড়তে থাকে এবং সুর্য ও চাঁদ ঢেকে ফেলে। মাটির প্রাণী সূর্য ও চাঁদের আলো না পেয়ে আস্তে আস্তে মারা যেতে থাকে। দেবতা এই অবস্থা দেখে মর্ত্যলোকে নেমে আসেন। তিনি চুন বা গ্রামের মানুষদেরকে মাছ ধরা ও খাওয়ার অনুমতি দিয়ে এ সংক্রান্ত অপরাধ ক্ষমা করে দেন। এরপর থেকে এখানকার সকল জীবন্ত প্রাণী আবার মাটিতে নেমে আসে। চুন বা গ্রামের মানুষের মাছ ধরা বা খাওয়ার রীতি এখনও ধারাবাহিকভাবে চলছে। ইয়ারলুং জাংবো নদী ও লাসা নদীর মিলন স্থলে অবস্থানের থাকার কারণে চুন বা গ্রামের মাছ সম্পদ খুব সমৃদ্ধ। মাছ খেতেও টাটকা ও সুস্বাদু। দীর্ঘ দিন ধরে মাছ খাওয়ার কারণে গ্রামের মানুষ অনেক ধরনের মাছ রান্নার প্রণালী তৈরি করেছেন। এখানে এসে পর্যটকরা তিব্বতী জাতির ঐতিহ্যবাহী খাবার সু ইয়ো চা ও জান বা ছাড়াও নিজের মতো করে মাছ দিয়ে রান্না করা বিভিন্ন ধরনের খাবারও খেতে পারবেন। চুন বা গ্রাম কমিটির পরিচালক বা জু উত্সাহের সঙ্গে বলেন,আমাদের এখানে মাছ খাওয়ার অনেক পদ্ধতি আছে। প্রায় কয়েক ডজন। সাধারণত ভাপে বা পানিতে সিদ্ধ কিংবা ভাজা মাছ বেশি খাওয়া হয়। চু বা মানুষের জীবন মাছের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। এমনকি তাদের বিনোদনও মাছ। চু বা গ্রামে এসে পর্যটকরা আবিষ্কার করবেন যে, প্রায় প্রতি পরিবারের ফটকের সামনে গরুর চামড়ার তৈরি নৌকা রাখা আছে। আগে, চুন বা গ্রামে সড়ক ছিল না। গ্রামে আসা-যাওয়া এক মাত্র বাহন ছিল গরুর চামড়ার তৈরি নৌকা। বর্তমানে এই নৌকা মাছ ধরার বাহন ছাড়াও নাচগানের প্রপস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গরুর চামড়ার তৈরি নৌকা নাচকে তিব্বতী ভাষায় বলা হয় 'কুও জি'। তিব্বতী ভাষার কুও অর্থ হচ্ছে গরুর চামড়া তৈরি নৌকা এবং জি মানে নৃত্য। জানা গেছে, তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী 'চমরী গাই নৃত্য' থেকে এই নাচ এসেছে। স্থানীয় রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছরের মার্চ মাসের 'মত্স্য শিকার দিবস'-এ গরুর চামড়ার তৈরি নৌকা নৃত্যের অনুষ্ঠান হয়। এখানকার মানুষ একে মাছ ধরার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হিসেবে দেখেন। বর্তমানে গরুর চামড়ার তৈরি নৌকা নৃত্য পরিবেশনা এক ধরনের বিনোদন মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। গ্রামের প্রতিটি সদস্য ভালোভাবে নাচ-গানের পাশাপাশি মত্স্য শিকারেও সুদক্ষ। চুন বা গ্রামের মানুষ অতিথিবত্সল। পর্যটকদের অনুরোধে তারা তাত্ক্ষণিকভাবে নৌকা নৃত্য পরিবেশন করে। মাছ শিল্প সম্পদ ছাড়া, চুন বা গ্রামে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ শিল্পও আছে। ছোট নৌকা, ব্যাগ, মোবাইলফোন ব্যাগ বা চা'য়ের ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের চামড়ার হস্তশিল্পের কাজও গ্রামবাসীরা করেন। এ সব হস্তশিল্পের ডিজাইন বিশেষ ধরনের এবং তিব্বতী জাতির গভীরসম্পন্ন বৈশিষ্ট্য। এছাড়া এ সব হস্তশিল্পের দামও বেশি নয়। দেশী-বিদেশী পর্যটকরা এগুলো খুব পছন্দ করেন। বন্ধুরা, আপনারা এখানে এলে বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের জন্য এগুলো কিনে নিতে যেতে পারবেন। বৃদ্ধ সুও নান গ্রামে গরুর চামড়ার হস্তশিল্প সম্পর্কে সংবাদদাতাকে বলেন,এখন আমি যেটা তৈরি করছি সেটা গরুর চামড়ার ব্যাগ। আমি মোবাইলফোন বা খাবারের ব্যাগও বানাতে পারি। সরকারের সাহায্যে আমাদের গ্রামে পর্যটন বা কুও লিন খা'র জন্য আসা পর্যটকের সংখ্যা খুব বেশি। আমাদের জীবন আগের চেয়ে অনেক ভালো। বন্ধুরা, এইমাত্র বৃদ্ধ সুও নান যে 'লিন খা'য়ের কথা বললেন সেটা তিব্বতীদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাশ বিনোদন উত্সব। তিব্বতী ভাষায় 'লিন খা' মানে বাগান। 'কুও লিন খা' হচ্ছে বাগানের মতো সুন্দর জায়গায় খেলাধুলা, অথবা সাধারণভাবে আমরা যাকে বলি পিকনিক বা ভ্রমণ। চুন বা গ্রামে কুও লিন খা'র বিশেষ রীতিনীতি আছে। ছেলে বা মেয়ে আলাদা আলাদাভাবে খেলাধুলা করে। এক সঙ্গে বসতে পারে না। পর্যটকরা যদি চুন বা গ্রামে আসেন, তাহলে নিজেই 'কুও লিন খা'-য় অংশ নিতে পারবেন। এই উত্সবে পর্যটকরা স্থানীয় জেলেদের বৈশিষ্ট্যময় গান ও নাচ পরিবেশনা উপভোগ করার পাশাপাশি তাদের মজার খেলাধুলায়ও অংশ নিতে পারবেন। বন্ধুরা, এখন আমি চুন বা গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার জন্য আপনাদেরকে কয়েকটি টিপস দিচ্ছি। চুন বা গ্রাম লাসা শহরের ছু শাই জেলায় অবস্থিত। পর্যটকরা বিমানে করে তিব্বত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের রাজধানী লাসায় পৌঁছে বিমানবন্দর সড়ক থেকে গ্রামটিতে যেতে পারেন। গ্রামটি লাসা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এবং ছু শাই জেলা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে। যদি আপনারা সেখানকার সুস্বাদু মাছ খেতে চান, তাহলে বসন্তকালে যাবেন। প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, যদি আপনাদের ইচ্ছা থাকে, আপনারাও চুন বা গ্রামে নিজ চোখে দেখে আসতে পারেন। আজকের 'চলুন বেড়িয়ে আসি' অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর অপেক্ষা করুন আগামীতে আপনাদেরকে কোন দর্শনীয় স্থানে নিয়ে যাই সেটা জানার জন্য। আগামী অনুষ্ঠান থেকে আমরা আপনাদের জন্য 'কুয়াং সি'য়ে সৌন্দর্য্য' নামে বিশেষ একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করবো এবং এই বিষয় নিয়ে পর্যটন সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার আয়োজন করবো। আপনাদের অংশ গ্রহণকে স্বাগত জানাই।