v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-07 19:37:44    
চীনের তরুণ অভিনেতা ওয়াং পাও ছিয়াং(ছবি)

cri

   ওয়াং পাও ছিয়াং   

    দশ –বারো বছর আগে চীনের হোপেই প্রদেশের একজন তরুণ কৃষক একটি চলচ্চিত্র দেখে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন । সেই তরুণই এখন চীনের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা । নিরলস চেষ্টা চালিয়ে তিনি চলচ্চিত্র অভিনেতা হয়েছেন এবং চলচ্চিত্র ও টি ভি নাটকে বেশ কয়েকটি সরল ও অকপট চরিত্রে নিপুণ অভিনয় করেছেন । এই তরুণ অভিনেতার নাম ওয়াং পাও ছিয়াং ।

    ২০০৭ সালর সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ' সি পিন থু চি 'তে চীনের সৈনিকের জীবন কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে । এ নাটকে কোনো নারী চরিত্র নেই , তবুও দশর্করা দেখতে খুব পছন্দ করেন । ওয়াং পাও ছিয়াং নাটকের প্রধান চরিত্র সুই সান তোওর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন । সৈনিক সুই সান তোও গ্রামাঞ্চল থেকে আসে । প্রথম দিকে তিনি ট্রেনিংর সময় অন্য সৈন্যদের মতো পারতেন না এবং আধো আধোভাবে কথা বলতেন । তবে তিনি সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন । তার আন্তরিকতা , অকপটতা ও যে অবস্থায় হোকনিজের স্বপ্ন বিসর্জননা দেয়ার গুণের কারণে তিনি অবশেষে মুক্তি ফৌজের বিশেষ বাহিনীর সদস্য হন এবং সৈন্যদেরমধ্যে দৃষ্টান্তে পরিণত হন ।

    গত বছর টি ভি নাটক ' সিপিন থু চি ' চীনের বিভিন্ন টি ভি কেন্দ্রে প্রচার করা হয় । এ নাটকের প্রধান চরিত্র সুই সান তোওর ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য ওয়াং পাও ছিয়ানের নাম রাতারাতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে । এ টি ভি নাটকে অভিনয়ের সময় ওয়াং পাও ছিয়ান সব সময় নিজেকে সুই সান তোও মনে করেন । অনেক দশর্ক ওয়াং পাও ছিয়াংকে দেখলে এখনও সুই সান তোও বলে ডাকেন । এ চরিত্রের সঙ্গে অনেক তার মিল থাকায় তিনি সুই সান তোওকে খুব পছন্দ করেন। তিনি বলেন ,এ চলচ্চিত্রে প্রথম দিকে সুই সান তোও অন্য সৈন্যের মতো কাজ করতে পারতেন না বলে কোম্পানির সুনাম ক্ষুন্নহয় । এ জন্য কোম্পানির নেতা খুব রাগ করতেন এবং প্রায়ই সুই সান তোওকে সমালোচনা করতেন। গ্রামে থাকার সময় আমারও একই অবস্থা ছিল । আমিও অন্য লোকের হাসাহাসি ও তাচ্ছিল্যের মধ্যে দিন কাটাতাম । আমি অভিনেতা হতে চাই শুনলে আশেপাশের লোক হেসে উড়িয়ে দিতো এবং কেউ তা বিশ্বাস করতো না । তারা মনে করতো , আমার এ স্বপ্নঅলীক ও হাস্যকর । তাদের ধারণায় আমি বোকার মতো কথা ও কাজ করি । আমি মনে করি , নিজের স্বপ্নের জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া মোটেও বোকামি নয় , বুদ্ধিমানের কাজ ।

    ১৯৮৪ সালে ওয়াং পাও ছিয়াং মধ্য চীনের হোপেই প্রদেশের নান হো জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । আট বছর বয়সে তিনি ' সাও লিন সি ' নামে একটি চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ পান । সেটি ছিল চলএকটি কুংফু ছবি । চীনের নামকরা কুংফু তারকা লি লিয়েন চিয়ের চমত্কার অভিনয় ওয়াং পাও ছিয়ানকে মুগ্ধ করে । তখন থেকে ওয়াং পাও ছিয়ান মনে মনে কংফু শিখে লি লিয়েন চিয়ের মতো অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন । তিনি মনে করেন , কুংফু শেখার জন্য সেই চলচ্চিত্রের বৌদ্ধমন্দির শাও লিন সি যেতে হবে । বাবা মার অনুমতি পেয়ে তিনি একা হোনান প্রদেশের শাও লিন মন্দিরে গেলেন । তিনি সেখানে বেশ কয়েক বছর কুংফু শেখেন । এ সময়ের মধ্যে তিনি এক অবুঝ ছেলে থেকে কিশোরেপরিণত হন । তবে একদিন তিনি বুঝতে পারেন যে শুধু কুংফু শিখে অভিনেতা হওয়া সম্ভব নয় ।

    ১৯৯৭ সালের শেষ দিকে ওয়াং পাও ছিয়াং হতাশ হয়ে জন্মস্থানে ফিরে যান। তিনি কংফু শিখে অভিনেতা হওয়ার কথা বলে বাড়ি ছাড়লেও শেষে বিফল হয়ে তাকে ফিরে আসতে হল । তার সমবয়সী বন্ধুরা তাকে নিয়ে খুব ঠাট্টা করা শুরু করলো । ওয়াং পাও ছিয়াং সহজে পরাজয় মেনে নেওয়ার মানুষ নয়। বাড়ি ফিরে তার মনে নতুন একটা ভাবনা জাগল । তিনি পেইচিংয়ে গিয়ে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন । গ্রামবাসীরা যখন শুনলেন ,অজ পাড়া গাঁয়ের একটি ছেলে চলচ্চিত্র অভিনেতার হওয়ার জন্য পেইচিং যাচ্ছে তখন তারা তামাশা করে বলতে লাগলেন , এ ছেলে দিবা স্বপ্নদেখছে । ১৯৯৯ সালে ওয়াং পাও ছিয়ান স্বপ্ন নিয়ে পেইচিং এলেন , সেই বছর তার বয়স ১৫ বছরও পূর্ণ হয় নি ।

    পেইচিংয়ে তার কোনো বন্ধু ও আত্মীয় নেই । একদিন তিনি পেইচিং চলচ্চিত্র স্টুডিওতে যান । স্টুডিওর বিভিন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা গ্রুপের কাছে অপেশাদার অভিনেতা হওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেন । সেই সময়ের কথা স্মরণ করে ওয়াং পাও ছিয়ান বলেন ,তখন আমরা পাঁচজন ছোট একটি ভাড়া করা ঘরে থাকতাম । রাতে বড় একটা খাটে আমরা পাঁচজন থাকতাম । পাশেই দুগর্ন্ধযুক্ত নালা । সকালে আমি স্টুডিওর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতাম। কোনো গ্রুপ ডাকলে আমি চলচ্চিত্রে সবচেয়ে ছোট চরিত্রে অভিনয় করে বিশ ইউয়ান কামাই করতাম । সেই সময় ওয়াং পাও ছিয়ানের সবচেয়ে বড় আশা ছিল গ্রামবাসীরা চলচ্চিত্রে তার মুখের দু একটা কথা শুনতে পাবেন এবং চলচ্চিত্রে তার চেহারা স্পষ্টভাবে দেখতে পাবেন । তবে এক বছর পর এ ধরনের সুযোগ পাওয়াও কঠিন । খাওয়া ও থাকার টাকা জোগাড় করার জন্য ওয়াং পাও ছিয়ানকে নির্মাণ স্থানে শারীরিক পরিশ্রম করতে হত । তখন তার মনে হতো , শারীরিক শ্রমের কাজ করলে তিনি নিজের জন্মস্থানেও করতে পারেন , পেইচিংয়ে আসার কোনো প্রয়োজন নেই । পেইচিংয়ে এ ভাবে দিন কাটানো সময় নষ্ট মাত্র । তিনি পেইচিং ত্যাগ করার কথাও চিন্তা করে ফেলেন। এ সময় তিনি বাবার একটি চিঠি পেলেন। বাবা চিঠিতে লিখেছিলেন , আমি জানি তুমি পেইচিংয়ে কষ্ট ভোগ করছো , ফিরে আসতে চাইলে যে কোনো সময় আসতে পারো । আমার সামর্থ্য নেই বলেই তুমি কষ্ট ভোগ করছো । এ চিঠি পড়ে তিনি খুব দুঃখ পান । বাবার কথা তাকে নতুন অনুপ্রেরণা এনে দেয় । তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন ,পেইচিংয়ে কিছু করতে না পারা পর্যন্ত আমি বাড়ি ফিরবো না ।

    ষোষো বছর বয়সে ওয়াং পাও ছিয়ান ' মান চিং ' নামে একটি চলচ্চিত্রে এক গ্রামীণ ছাত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেন । তিনিই নিজেই গ্রাম থেকে এসেছেন বলে চলচ্চিত্রের চরিত্রটি তার কাছে খুব পরিচিত । তার অভিনয়ে পরিচালক সন্তুষ্টহলেন । এ চলচ্চিত্র ৫৩তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে রৌপ্য ভাল্লুক পুরস্কার পেল , ওয়াং পাও ছিয়ান শ্রেষ্ঠ নবীন অভিনেতার পুরস্কার পেলেন । বিশ বছর বয়সে ওয়াং পাও ছিয়ান চীনের নামকরা পরিচালক ফোং সিয়াও কানের আমন্ত্রণে ' থিয়েন সিয়া উ চেই' নামে একটি চলচ্চিত্রে গ্রামীণ তরুণ সান কেনের ভূমিকায় অভিনয় করেন । এ চলচ্চিত্রে অনেক নামকরা অভিনেতা –অভিনেত্রী অভিনয় করেছিলেন ,তবে ওয়াং পাও ছিয়ানের রূপায়িত চরিত্র দশর্কদের মনে গভীর ছাপ ফেলে । অনেক দর্শক রাস্তায় দেখে তাকে সান কেন বলে ডাকতে থাকে । গত বছর টি ভি নাটক ' শি পিং থু চি ' প্রচারের পর ওয়াং পাও ছিয়ান চীনের জনপ্রিয় তারকায় পরিণত হন । তিনি বলেন ,চলচ্চিত্রে অভিনয় করার প্রথম দিকে আমার সবচেয়ে বড় আশা ছিল বাবা মা ও গ্রামবাসীরা চলচ্চিত্রে আমাকে দেখতে পাবেন । এবার ধারাবাহিক নাটক ' সি পিন থু চি' সব গ্রামবাসী দেখেছেন , জমিতে কাজ করার সময় তারা আমার বাবাকে বলেন , আগে চলচ্চিত্র দেখার সময় ছবির চরিত্রকে তারা খুব দূরের মনে করতেন , এবার প্রতি দিন ধারাবাহিক নাটকে নিজ গ্রামের ছেলে অভিনয় করছে দেখে তারা বিশ্বাস করেন চলচ্চিত্র ও নাটক নিজের জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত । এতে চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিক নাটকের সঙ্গে সাধারণ মানুষের ব্যবধান কমেছে । ওয়াং পাও ছিয়ান বলেন , তিনি আরো বেশি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাবেন ।(ফাং সিউ ছিয়েন)