v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-05-08 16:23:58    
হাইনান প্রদেশের কার্যকর গ্রীষ্মমন্ডলীয় কৃষি শিল্প

cri
    হাইনান প্রদেশকে চীনের সবজি ও ফলের বাস্কেট বলা হয় । গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল ও সবজির প্রচুর উত্পাদনের কারণে এই নামকরণ করা হয়েছে । হাইনানের কৃষি পণ্য চীনের মূলভূভাগের ১০০টিরও বেশি বড় ও মাঝারি শহরে সরবরাহ করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ২০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে রপ্তানী করা হয় । ২০০৭ সালে হাইনান প্রদেশের কৃষি পণ্যের মোট রপ্তানীর পরিমাণ ছিল ৪৫ লাখ টন এবং মূল্য ৪০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি । বর্তমানে হাইনানের কার্যকর কৃষি হাইনানের অর্থনীতি উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলে পরিণত হয়েছে । হোনান প্রদেশের নাগরিক কুও চি ইয়াও গত শতাব্দীর শেষ দিকে নিজের ব্যবসা শুরু করেন । ব্যাপক বাজার জরিপের পর তিনি বুঝতে পারেন, হাইনান প্রদেশের সবজি ও ফলের গুণগতমান ভালো এবং মূলভূভাগের বাজারে অবদান রাখা সম্ভব। এসব কথা বিবেচনা করে তিনি হাইনান প্রদেশে এসে ব্যবসা শুরু করেন । তিনি বলেন,

    আসার আগে মূলভূভাগের কৃষি পণ্যের বাজার জরিপের সময় আমি জানতে পারি যে, হাইনান প্রদেশের সূর্যালোক সমৃদ্ধ এবং শীতকালে তাপমাত্রা বেশি থাকায় সেখানকার সবজি ও ফলের মান ভালো। সেখানকার কাঁচা মরিচ ও বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির দাম কুয়াংতুং প্রদেশের চেয়ে ৩০ শতাংশেরও বেশি । হাইনানের কৃষি পণ্যের এই প্রাধান্য দেখে এখানে এসে আমি পুঁজি বিনিয়োগ করি ।

    ১৯৯৯ সালে কুও চি ইয়াও হাইনানে এসে তাঁর প্রথম কৃষি উন্নয়ন কোম্পানি খোলেন। চীনের মূলভূভাগের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তিনি স্থানীয় কৃষকদেরকে সেই সব কৃষি পণ্য উত্পাদনের কথা বলেন এবং তাঁর ব্যবসাও সুষ্ঠুভাবে এগোতে থাকে । বর্তমানে তাঁর কোম্পানির উত্পাদন কেন্দ্র প্রায় ২০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে ।শীতকালে সবজি উত্পাদনের পাশপাশি তিনি নানা ধরনের গ্রীষ্মমন্ডলীয়ফলও উত্পাদন করেন এবং ফ্রান্স, জার্মানী, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে বাজার তৈরি করেছেন ।

    হাইনান প্রদেশের কৃষি বিভাগের মুখপাত্র ছেন ইয়োং ওয়াং বলেন, কুও চি ইয়াও'র মতো কৃষি শিল্পের ব্যবসায় নিয়োজিত কোম্পানির সংখ্যা এখানে অনেক । অধিকাংশ কোম্পানি গত শতাব্দীর ৯০ দশকে খোলা হয় ।ততদিনে প্রাদেশিক সরকার কার্যকর গ্রীষ্মমন্ডলীয় কৃষি উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং শীতকালে কৃষকদেরকে নানা ধরনের সবজি ও ফল চাষ করতে উত্সাহিত করে । তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে হাইনান প্রদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সরকার উপলব্ধি করতে পারে, হাইনান প্রদেশের স্থানীয় ভোক্তা বাজার ছোট এবং ক্রেতা সংখ্যাও কম । তখন আমরা চিন্তা করি শীতকালের কৃষি উত্পাদনকে কীভাবে একটি বড় শিল্পে পরিণত করা যায় । তখন মূলভূভাগের বাজারে সবজি বাস্কেট সরবরাহে ভাটা মৌসুম চলছিল এবং চীনের উত্তরাঞ্চলে ব্যবস্থাপনার ততোটা উন্নয়ন হয় নি এবং কৃষি পণ্য সরবরাহ অনেক কম ছিল । হাইনান প্রদেশ শীতকালে সূর্যালোক ও বর্ষার কারণে কৃষি নীতির সংস্কার করে । শীতকালীন কৃষি উন্নয়নকে কৃষকদের আয় বাড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হিসেবে তাদেরকে অনেক সহায়তা দেওয়া হয় ।

    প্রথম দিকে কৃষকদের সংখ্যা যেমন দ্রুত বেড়েছে তেমনি অনেক সমস্যাও হয়েছে । এ জন্যে হাইনান প্রদেশ পেশাগত কৃষি সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে । চীনের ১০টি শক্তিশালী কৃষি জেলার অন্যতম হিসেবে হাইনান প্রদেশের ছেংমাই জেলায় কয়েকটি পেশাগত সহযোগিতা সংস্থা গড়ে তোলা হয় । তারা ফরমাশ অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর কৃষি পণ্য ক্রয়, প্রক্রিয়াকরণ ও বিক্রির মাধ্যমে কৃষকদেরকে চাষ ও কীটপতঙ্গ ও রোগ প্রতিরোধ করাসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেয় । ছেংমাই জেলার ফল ও সবজি পরিবহন ও বিক্রয় সমিতির মহাপরিচালক ওয়াং চি মে ২০ বছর ধরে কাজ করছেন। তিনি বলেন,

    আমরা কৃষকদের বীজ দেই ,তাদের চাষের পদ্ধতি শেখাই । ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় এবং বৃষ্টির সময় কীভাবে উত্পাদন তত্ত্বাবধান করতে হবে আমরা সে সম্পর্কে অনেক প্রযুক্তি শিখিয়েছি ।এছাড়া নানা ধরনের সবজি ও ফল চাষের সময় নির্ধারণও গুরুত্বপূর্ণ । কখন চাষ করতে হবে এবং কখন ফসল হবে তাও আমরা শিখিয়েছি । মূলভূভাগের চাহিদার সময় এবং কুয়াংতুং ,কুয়াংশি'র অন্য কৃষি ক্ষেত্রগুলোর ফসলের সময় সঠিকভাবে হিসাব করতে হবে । তারপর চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের ফল ও সবজি পরিবহন করা হয়।

    বর্তমানে হাইনানের উত্পাদিত ফল ও সবজির ৯০ শতাংশেরও বেশি বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হয় । প্রাদেশিক সরকার মনে করে, কৃষি সহযোগিতা সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে । ছেংমাই জেলার কৃষি ব্যুরোর প্রধান ওয়াং সি রুই বলেন, প্রাদেশিক সরকার কৃষি সহযোগিতা সংস্থার উন্নয়নে পুঁজি বিনিয়োগ করেছে ।

    শীতকালীন ফল ও সবজি চাষ শুরুর সময়ে কৃষকরা কি কি চাষ করবে এবং কোথায় বিক্রি করবে তা সমিতির মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়েছে । গত বছর থেকে জেলা সরকার কৃষকদের ব্যবসায় সাহায্য করার জন্য প্রতি মাসে সমিতিকে ৩ হাজার ইউয়ান দিচ্ছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সরকার পুঁজি সহায়তা দেয় । চলতি বছর ঠাণ্ডা আবহাওয়া দীর্ঘ হওয়ার কারণে সবজি ও ফল পরিবহনে ঝামেলা দেখা দেয় । সরকার ২০ লাখ ইউয়ান পুঁজি দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করেছে ।

    ছেংমাই জেলার প্রধান ইয়াং সি থাও বলেন, গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে চীনের কৃষি ক্ষেত্রের মানদন্ড ধীরে ধীরে নির্ধারিত হয়েছে । স্থানীয় কৃষি পণ্যের দূষণহীন চাষের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে ।

    এ পর্যন্ত চীনের মানদন্ডের পরীক্ষায় পাস করা ছেংমাইয়ের কৃষি পণ্যের সংখ্যা ৯টি , যা হাইনান প্রদেশ ও চীনে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ।আমরা ফল ও সবজির মান আর কেন্দ্রের মানদন্ড এ দুই ক্ষেত্রেই মাপকাঠি নির্ধারণ করি । বর্তমানে দূষণহীন ফল ও সবজি চাষ হচ্ছে ১০ হাজারেরও বেশি হেক্টর জমিতে ।

    এর পাশাপাশি হাইনান প্রদেশ সক্রিয়ভাবে কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সেবা দেয় । বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষি প্রযুক্তি সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে । ছেংমাই জেলার একটি সেবা কেন্দ্রে আমাদের সংবাদদাতা তাদের কম্পিউটারে নানা ধরনের ছবি দেখেছেন । অধিকাংশ ছবি কীটপতঙ্গ ও সংক্রামক রোগ সম্পর্কিত । ফসল কীটপতঙ্গে আক্রান্ত হলে কৃষকরা স্পষ্টভাবে রোগের ধরণ ও প্রতিকারের উপায় বুঝতে পারেন । সেবা কেন্দ্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি স্যু ছুয়ান বলেন, তারা সাম্প্রতিক কীটপতঙ্গ বা আবহাওয়া জনিত রোগে কৃষকদের জন্য কার্যকর সেবা দিচ্ছে।

    আমাদের কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ প্রকল্প আছে । প্রতি মাসে এক বা দুই বার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । যেমন কীটপতঙ্গ জনিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা । প্রশিক্ষণের আগে আমরা একটি বিজ্ঞপ্তি দেই । এতে কৃষকরা প্রশিক্ষণের আগে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবে ।

    গত বছরে হাইনান প্রদেশে বড় অংকের পুঁজি বিনিয়োগ করে উত্পাদন ও বিক্রয় স্থলের ভিডিউ তথ্য ব্যবস্থা চালু করেছে । এতে বিভিন্ন বড় কৃষি উত্পাদন বাজার ও হাইনান প্রদেশের প্রধান বাজারের তথ্য জানা সহজ হয়ে গেছে । হাইনান প্রদেশ বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কৃষি শিল্পের কাঠামো সমন্বয় করবে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ জোরদার করবে এবং কৃষকদের জন্য আরও বেশি কল্যাণ বয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালাবে ।