2 চিন চিং চীনের একজন সাধারণ মেয়ে, একজন সাধারণ প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদ । ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল ছিল তার জীবনে একটি কষ্টকর সহনীয় সময় । পেইচিং অলিম্পিক গেমসের একজন মশালবাহক হিসেবে চিনচিং ফ্রান্সের প্যারিসে মশাল রিলের সময় তথাকথিত স্বাধীন তিব্বতী ব্যক্তিদের আক্রমণেরসম্মুখীন হয়েছিলেন । তারা চিনচিংয়ের হাত থেকে মশাল ছিনিয়ে আনার অপচেষ্টা চালিয়েছিল । কিন্তু চিনচিং নিজের প্রতিবন্ধী দেহ দিয়ে মশালটা রক্ষা করেছেন । সেই মুহুর্তে চিনচিং বিশ্বের সকল শান্তিকামী ও অলিম্পিক গেমস সমর্থনকারীকে বিস্মিত ও মুগ্ধ করেছেন । অনেকে আন্তরিকতার সঙ্গে মনের কথা ব্যক্ত করে বলেন, চিনচিং হুইলচেয়ারের সবচেয়ে সুন্দরী মশালবাহক ।
মশাল রিলের কাজ সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসার দ্বিতীয় দিন অর্থাত ১১ এপ্রিল চিনিচং সি আর আইর অফিস ভবনে এসে এক সাক্ষাত্কার দিয়েছেন । মশাল রক্ষা করার সেই মুহুর্তের কথা স্মরণ করে চিনচিং বলেন , সেই মুহুর্তে আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হলাম । আমার মনে হয় , অলিম্পিক গেমসের পক্ষে এবং বিশ্বের এই মহা সম্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য চার বছর ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এমন ক্রীড়াবিদদেরকেও স্বাধীনতাকামী তিব্বতী ব্যক্তিরা অবমাননা করছে ।
৭ এপ্রিল পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মশাল রিলে প্যারিসে হচ্ছিল, হাতে গোনা কয়েকজন স্বাধীন তিব্বতীব্যক্তি তা বানচাল করার অপচেষ্টা চালায় এমন কি মশাল ও মশালবাহকের ওপরও আক্রমণ চালায় । প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদ চিনচিং চীন থেকে আসা মশালবাহক ,তিনি হুইলচেয়ারে বসে মশাল রিলে সম্পন্ন করেন । কিন্তু যখন তিনি অন্য একজন মশালবাহকের হাতে মশাল হস্তান্তর করতে যান তখন তিনি স্বাধীন তিব্বতীব্যক্তিদের আক্রমণের শিকার হন । আকস্মিক হামলার সম্মুখে চিনচিং বিন্দুমাত্র ভয় পাননি । হামলাকারী যখন তার বাহু ও চুল ধরে টানাটানি করে তখন তিনি আপ্রাণে মশালটাকে কোলে চেপে রাখেন যাতে মশালটাকে ছিনিয়ে নেয়া না যায় ।
চিনচিংয়ের আচরণ শুধু উপস্থিত সকল ন্যায়পরায়ণকারীকেই মুগ্ধ করেনি বরং বিশ্বের সকল শান্তিপ্রিয় এবং অলিম্পিক গেমসের সকল সমর্থনকারীকেও মুগ্ধ করেছে । স্থানীয় পুলিশের কাছে মুষ্টিমেয় স্বাধীন তিব্বতীব্যক্তি বশ হয়েছে দেখে চিনচিং মৃদু হাসি দিয়ে তাকে সমর্থন করেছেন এমন উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন । তিনি বলেন , স্বাধীন তিব্বতপন্থী এবং যারা অলিম্পিকের বিরোধিতা করে তাদের ওপর আমি ক্ষুব্ধ চোখে তাকিয়ে থাকি এবং হাসিমুখে আমাদের ছাত্রছাত্রী এবং অলিম্পিক গেমসকে সমর্থন করা আন্তর্জাতিক বন্ধুদের কাছে আমার অনুভূতি ব্যক্ত করি ।
এখন অধিক থেকে অধিকতর মানুষ এই সত, ন্যায় এবং সুন্দরী চীনা মেয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে । নেটব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে চিনচিংয়ের মশাল রক্ষার আচরণের প্রশংসা করেন এবং চিনচিংকে হুইলচেয়ারের সবচেয়ে সুন্দর মশালবাহক হিসেবে নির্বাচন করেন ।
মশালবাহক নির্বাচিত হওয়ার আগে চিনচিং এক পেশাদারী হুইলচেয়ার অসি খেলোয়াড় ছিলেন । ১৯৮৯ সালে পায়ের গোড়ালি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়ার সময় চিনচিংয়ের পা হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয় । দৃঢ় চরিত্রের চিনচিং পরাজিত হননি এবং ২০০১ সালে সাংহাই হুইলচেয়ার অসি দলে ভর্তি হয়ে একজন প্রতিবন্ধী খোলোয়াড় হন । কেন অসি চালনা খেলাটি বেছে নিয়েছেন প্রশ্নের উত্তরে চিনচিং বলেন , ছোট বেলা থেকেই আমি ন্যায়পরায়ন মানুষ হতে চেয়েছি । "জোরো" ও "তিন অসি যোদ্ধা"সহ বেশ কয়েকটি ছবি দেখেছি বলে অসি চালনা খেলাটি আমার কাছে ন্যায় ও শান্তির প্রতীক ।
চিনচিং বারবার বলেন , তার আচরণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বা প্রশংসিত হচ্ছে ,এটা কোনো কিছু নয় । কারণ যে কোনো একজন ন্যায়পরায়ন ও অলিম্পিকপ্রিয় ব্যক্তি এমন মুহুর্তে তার মতো পথ বেছে নেবেনই।
সাক্ষাত্কারে তিনি আশা ব্যক্ত করেন যে , যারা পেইচিং অলিম্পিক গেমসের পবিত্র অগ্নির হস্তান্তর সমর্থন করেন সি আর আইয়ের মাধ্যমে সেই সব বন্ধুদেরকে তিনি ধন্যবাদ জানান ।তিনি বিশ্বের সকল শান্তিকামী বন্ধুকে অলিম্পিক গেমসের মশাল রিলে সমর্থন করতে এবং পেইচং প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমসের ওপর গুরুত্ব আরোপের আবেদন জানিয়েছেন । যাতে আরও বেশি লোক আমাদের সঙ্গে অলিম্পিক আন্দোলনে বয়ে আনা সৌন্দর্য্য ও আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন । তিনি বলেন , শ্রোতা বন্ধুরা , সবাই আমাদের সঙ্গে ২০০৮ পেইচিং প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমসের ওপর গুরুত্ব দেবেন বলে আমি আশা করি ।
|