দক্ষিণ-পূর্ব চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের রাজধানী ফু চৌ শহরে নিজেকে "ফু চৌ'র নাগরিক" মনে করেন এমন একজন কানাডিয়ান আছে । তাঁর নাম ব্রায়ান এ হোজ। ৭২ বছর বয়সী ব্রায়ান ক্যানাডার রকি মাউন্টেইন ফু চৌ ওষুধ কোম্পানীর প্রধান । অনেক বছর ধরে তিনি চীন ও ক্যানাডার শিল্প প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । এ কারণে তিনি চীন সরকারের দেয়া রাষ্ট্রীয় মৈত্রী পুরস্কারও পেয়েছেন । কোম্পানীর কাজ ছাড়াও তিনি চীনের শিক্ষা ব্রতে নিজেকে উত্সর্গ করেছেন । চীনা ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজী ভাষার মান উন্নত করার জন্য ফু চৌ শহরে তিনি বেশ কয়েকটি স্কুল খুলেছেন । ব্রায়ান বলেন , তাঁর অনেক ছাত্র বন্ধু আছে । তারা আন্তরিকতার সঙ্গে তাকে চাচা বলে ডাকে ।
যদিও ব্রায়ানের বয়স অনেক হয়েছে। তারপরও তিনি তার নিজের কোম্পানী সম্পর্কে অনেক কিছুই বলতে চান , তিনি বলেন :
আমাদের কোম্পানী প্রধানত ওষুধের ব্যবসা করে । আমাদের প্রধান ব্যবসা হল ক্যানাডার জিনসেং চীনে আমদানি করে উত্পাদনের পর চীনের বাজারে বিক্রি করা ।
ব্রায়ানের রকি মাউন্টেইন ফু চৌ ওষুধ কোম্পানী হল ক্যানাডার রকি মাউন্টেইন জিনসেং কোম্পানীর শাখা কোম্পানী । এ কোম্পানীটি বিশ্বের বিখ্যাত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি । গত শতাব্দীর ৮০'র দশকে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের প্রথম পর্যায়েও ব্রায়ান চীনে এসেছেন । সংস্কারের কারণে চীনের পরিবর্তন তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করেছে। তিনি বলেন :
১৯৮৪ সালে আমি প্রথমবারের মত চীনে আসি । তখনকার চীন খুব দরিদ্র এবং ততটা উন্নত ছিলনা । আমি তা বিশ্বাস করতে পারতাম না । ১৯৮৭ সালে যখন আমি আবার চীনে আসি , তখন আমি দেখেছি অল্প সময়ের মধ্যে চীনের বিরাট পরিবর্তন হয়েছে । ৯০ দশকের প্রথম দিকে দেখি পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে ।
গত শতাব্দীর ৯০ দশকে অবসর নেয়ার পর ব্রায়ান ক্যানাডার রকি মাউন্টেইন জিনসেং কোম্পানীর এশিয়া বিভাগের ম্যানেজার নিযুক্ত হন । তিনি আবারও চীনে এসেছেন । পূর্ব চীনের সমুদ্রবর্তী প্রদেশগুলোর জিনসেং-এর বাজার পরিদর্শন করেছেন তিনি । পরিদর্শনের পর ব্রায়ান মনে করেন ফু চিয়ান প্রদেশ হল চীনের জিনসেং শিল্পের কেন্দ্র । তাই তিনি ক্যানাডার বাণিজ্যিক অংশীদারীদেরকে ফু চিয়ানকে জিনসেং-এর উত্পাদন কেন্দ্র হিসেবে বাছাই-এর প্রস্তাব দিয়েছেন । তিনি বলেন :
আন্তরিকভাবে বলি , সাংহাইয়ে কাজ করার সময় আমি ফু চিয়ান প্রদেশে গিয়ে কারখানা খুলতে চেয়েছিলাম । কারণ এ স্থানের বাজার খুব ভালো , অবকাঠামোও খুব উন্নত , শ্রমিক শক্তির ভিত্তি সুগভীর । সর্বপ্রথমে ফু চিয়ান প্রদেশের সরকার ও ফু চৌ শহরের সরকার আমাকে অনেক সহায়তা করেছে । তারা আমাকে প্রযুক্তি উপদেষ্টা হওয়া এবং বিভিন্ন নীতি ও আইন উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে । তা ছাড়া , তারা আমাকে বিপুল প্রেক্ষাপট ও তথ্য দিয়েছে । আমি এসব দলিল ক্যানাডায় নিয়ে গেছি । আমার অংশীদাররা এ থেকেও বুঝেছেন যে পুঁজি বিনিয়োগের জন্য চীন একটি উত্তম দেশ ।
তবে পুঁজি বিনিয়োগ এখানে ততটা সুষ্ঠু নয় । ব্রায়ান প্রথম দিকে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হন । তিনি জানেন না কীভাবে চীনে ব্যবসা করবেন , তাই প্রথমে তার কোম্পানী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । তিনি বলেন :
প্রথমে আমার কোম্পানীর বেশ ক্ষতি হয়েছে । আমার ক্যানাডার মালিক আমাকে জিজ্ঞেস করেন , চীনে আমার কী হয়েছে ? তিনি আমাকে বলেন , চীনের প্রযুক্তি নিয়ে চীনে কাজ করার জন্য যথেষ্ট নয় , কীভাবে চীনে ব্যবসা করা যায় তা জানতেও হবে , চীনের ব্যবসায়ীরা কী ভাবে তাও জানতে হবে ।
পরে ব্রায়ানের সঙ্গে তাঁর কোম্পানীর বর্তমান ম্যানেজার চিয়াং শাও সু'র পরিচয় হয় । চিয়া শাও সু'র সাহায্যে তার একটি শ্রেষ্ঠ কর্মী দল গঠিত হয়েছে। কোম্পানীর ব্যবসা ক্রমেই ভালো হচ্ছে । ব্রায়ান বলেন :
আমার ম্যানেজার খুব অভিজ্ঞ । তার ১৭ বছরের পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে । আমাকে একটি শ্রেষ্ঠ কর্মী দল গঠনে তিনি সাহায্য করেছেন । এখন আমাদের কোম্পানী নতুন জমি কিনে একটি নতুন কারখানা নির্মাণ করবে । চীনে আমাদের ভবিষ্যত্ আরো উজ্জ্বল হবে ।
ব্যবসা ছাড়াও বহু বছর ধরে ব্রায়ান চীন ও ক্যানাডার অর্থনৈতিক বিনিময় ত্বরান্বিত করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন । ব্রায়ান ফু চৌ শহরের বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োজিত শিল্প প্রতিষ্ঠান কমিটির উপ মহাসচিব , আঞ্চলিক সরকারের বৈদিশিক পুঁজি বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে তিনি ফু চৌ শহরের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে বৈঠক করেন এবং তাদেরকে আরো বেশি বৈদেশিক পুঁজি আকর্ষণের প্রস্তাব দেন । যতবারই বিদেশি ব্যবসায়ীরা ফু চৌ শহর পরিদর্শনে আসেন , ফু চৌ শহর সরকার ততবারই ব্রায়ানকে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করার আমন্ত্রণ করে । ব্রায়ানও এসব বিদেশি ব্যবসায়ীদেরকে নিজের কোম্পানীতে নিয়ে তাদের সঙ্গে নিজের পুঁজি বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন । তা ছাড়া , ব্রায়ান আঞ্চলিক সরকারকে বিনিময় দল গঠন করে ক্যানাডা পরিদর্শন করার ব্যাপারেও সাহায্য করেন । তিনি বলেন :
আমার অনুভুতি হচ্ছে : আমি ফু চৌ'র মানুষ , আমার কোম্পানী এখানে , আমার বাসাও এখানে । আমার মনে হয় আমি ফু চৌতেই থেকে যাবো , আমার এ শহরকে সাহায্য করতে হবে । তাই আমি খুব খুশি আঞ্চলিক সরকারের উপদেষ্টা হতে পেরে ।
ব্রায়ানের অবদানের জন্য । ১৯৯৯ সালে তাকে ফু চিয়ান শহরের মৈত্রী পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে । ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা তিন বছর ফু চৌ শহরের আন্তর্জাতিক মৈত্রী পুরস্কার পেয়েছেন । ২০০৩ সালে ব্রায়ান চীন সরকারের প্রদান রাষ্ট্রীয় মৈত্রী পুরস্কারও পেয়েছেন । এ পুরস্কার হল চীন সরকার চীনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও বন্ধুদের দেয়া সর্বোচ্চ পুরস্কার ।
|