v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-04-23 22:03:07    
চীনের বিখ্যাত অভিনেতা ফু ছুন সিন(ছবি)

cri

    ফুন ছুন সিন চীনের একজন বিখ্যাত অভিনেতা । তাকে চীনের নাট্যাঙ্গনেরবিশিষ্ট প্রতিনিধিও বলা যায়। অভিনয় ছাড়াও তিনি সক্রিয়ভাবে জন সেবার কাজেও অংশ নেন। তিনি চীনে এইডস রোগ প্রতিরোধ , স্বেচ্ছায় রক্তদান ও অলিম্পিক গেমস প্রচারের কাজ করেন । তাই সমাজে ফু ছুন সিনের অবস্থান ও প্রভাব ব্যাপক ।

    ফু ছুন সিন ১৯৫৩ সালে পেইচিংয়ের একটি শিল্পী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার জন্মের এক বছর আগে পেইচিং গণ থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয় । ফু ছুন সিনের বাবা এ থিয়েটারের একজন প্রবীন অভিনেতা । গত ৫০ বছরে পেইচিয়ের গণ থিয়েটার চীনের জাতীয় পর্যায়ের একটি থিয়েটার হিসেবে প্রাচীন ও আধুনিককাল মিলিয়ে চীন ও বিদেশের তিন শ'টিরও বেশি নাটক পরিবেশন করেছে । পেইচিং গণ থিয়েটারে অনেক শিল্পীও কলাকুশলী রয়েছেন । এই থিয়েটার চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের সংস্কৃতির অন্যতম প্রতিনিধি হয়ে দাঁড়িয়েছে । ফু ছুন সিন এখন এই থিয়েটারের উপপ্রধান। পেইচিং গণ থিয়েটার সম্পর্কে তিনি বলেন , আমি এ থিয়েটারের একজন মধ্যবয়সী অভিনেতা । আমার বাবাও এ থিয়েটারে অভিনয় করতেন । চীনের অনেক প্রবীণ নাট্য শিল্পী আমার বাবার সহকর্মী ছিলেন । আমি তাদের নাটক দেখে বড় হয়েছি । আমার উপর এ সব প্রবীণ শিল্পীর প্রভাব খুব বেশি । আমি তাদের মতো অভিনেতা হতে চাই। তাদের গুণ ধারণ করতে চাই ।

    ফু ছুন সিনের শৈশব কেটেছে পেইচিং গণ থিয়েটারে । তার বাবা প্রায়ই তাকে থিয়েটারে নিয়ে যেতেন । সেখানে ফু ছুন সিন মঞ্চের পাশে বা নীচে বসে নাটক দেখতেন । বাবার অনুরোধে ছু ছুন সিন ছোট বেলায় চীনের ঐতিহ্যিক হস্তলিপি ও চিত্র শিল্প শেখেন এবং মঞ্চের দৃশ্যপটের ছবি আকঁতেন । নাট্য পরিচালক ও অভিনেতারা মাঝেমধ্যে নাটক নিয়ে আলোচনা করার জন্য তাদের বাড়িতে আসেন । এই সময় তার বাবা ফু ছুন সিনকে ইচ্ছা করে পাশে বসে শোনার জন্য বলতেন । ফু ছুন সিন দেখেছেন বড়রা কখনও বিনীত কন্ঠে কথা বলছেন , আবার কখনও ঝগড়ার মতো চিত্কার করছেন । এ ধরনের দৃশ্য ফু ছুন সিন প্রায়ই দেখতে পেতেন । এ অভিজ্ঞতা সূর্যের কিরণ ও পানির মতো আপন করে ফু ছুন সিনের শিল্পী মন লালন করেছে । বিশেষ কারণে ফু ছুন সিন প্রাথমিক স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে আর স্কুলে লেখাপড়া করেন নি । তবু তিনি মনে করেন , তার জীবনে শেখার সুযোগের অভাব নেই । তিনি বলেন , আমার বাবা বাড়িতে আমাকে শেখানোর দায়িত্ব নিয়েছেন । ছোট বেলায় আমি বাবা মার পক্ষ থেকে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুর কাছে চিঠি লিখতাম । প্রত্যেকবার চিঠি লেখা শেষ হলে বাবা আমার চিঠির ভুল শব্দ ও বাক্যের নীচে দাগ দিয়ে আমাকে ফেরত দিতেন , তখন আমাকে অভিধান থেকে সঠিক শব্দ খুঁজে বের করতে এবং ভুল বাক্য ঠিক করতে হতো । ফু ছুন সিন বলেন , তার বয়স যখন দুই বছর , পোলিও রোগে তখন তার পা পঙ্গু হয়ে যায়। ছোট বেলায় প্রতিবেশী ও সহপাঠীদের বিদ্রুপ তিনি সহ্য করতে পারতেন না । এটাও তার প্রাথমিক স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর আর স্কুলে ভর্তি না হওয়ার অন্যতমকারণ। ফু ছুন সিন সহজে পরাজয় স্বীকার করার লোক নন । স্বাভাবিক মানুষের মতো হাঁটা ও খেলাধুলার জন্য তিনি পঙ্গুত্বকে অস্বীকার করে বাস্কেটবল খেলা ও সাঁতার কাটার চেষ্টা করতেন এবং অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতেন। তার বয়স যখন ১৬ বছর , তখন চীনে তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লব চলছিল । তিনি অনেক তরুণ-তরুণীর মতো উত্তর-পূর্ব চীনের গ্রামাঞ্চলে গিয়ে আট বছর শারীরিক শ্রম দেন । সেই আট বছরে তিনি জমি চাষ করেন , ঘোড়া পোষেন এবং নাটকে অভিনয় করেন ।

    ১৯৭৭ সালে ফু ছুন সিন পেইচিং ফিরে এলেন । প্রথম দিকে তিনি একটি ছোট নাট্য দলে ঢোকেন । তার চমত্কার অভিনয়ের জন্য পেইচিং গণ থিয়েটার তাকে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণজানালো । পেইচিং গণ থিয়েটারের আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি খুব খুশি হন। জীবনের এ অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে ফু ছুন সিন বলেন ,আমি নাট্যপরিবেশে বড় হয়েছি । আমার ওপর এ পরিবেশের প্রভাব খুব বেশি । আমি নাট্য শিল্পকে ভালোবাসি , তাই আমি প্রবীন অভিনেতা অভিনেত্রীদের মতো মঞ্চে অভিনয় করতে চাই ,চরিত্র সৃষ্টি করতে চাই । যদিও দীর্ঘ আট বছর পর এই মঞ্চ ফিরে পেয়েছি , তবুও আমি খুব খুশি । ছোটবেলায় আমি মঞ্চের নীচে বা পাশে দাঁড়িয়ে নাটক দেখতাম , মঞ্চে ওঠার কোনো সুযোগ আমার ছিল না । আজ থিয়েটারের অভিনেতা হিসেবে মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি সত্যিই আনন্দ বোধ করি। প্রথম দিকে আমি আনন্দে এতোই আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম যে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না সত্যিই আমি পেইচিং গণ থিয়েটারের অভিনেতা হয়েছি । তখন থেকে বিশ বছর পার হয়ে গেছে ,এ বিশ বছরে আমি এ থিয়েটারের প্রধান অভিনেতা হিসেবে অনেক নাটকে অভিনয় করেছি ।

    ৩৩ বছর বয়স থেকে ফু ছুন সিন এ থিয়েটারের প্রধান অভিনেতা হিসেবে নাটকে অনেক চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । তাদের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন চীনের বিখ্যাত কবি লি পাই ,প্রাচীন চীনের বিখ্যাত সমরবিদ ও কবি ছাও ছাও ও শেক্সপিয়রের নাটক অবলম্বনে রচিত নাটক ' কোরিওলানুর বিয়োগান্তক কাহিনী'তে প্রাচীন রোমের বীর ইত্যাদি চরিত্র। পেইচিং গণ থিয়েটারের বিখ্যাত নাটক ' টি হাউস' ও ' বজ্রপাত'-এও ফু ছুন সিন প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন । ফু ছুন সিন বলেন , সাহিত্য , বিশেষ করে বিখ্যাত লেখকদের রচিত সাহিত্যকর্ম শিল্পীদের পুষ্টি । আমরা ' টি হাউস '-এ অভিনয়ের সময় প্রবীন লেখক লাও সের লেখা নাটকের কথা বলতে বলতে মনে তৃপ্তি পাই । প্রতি দিনই আমরা নাটক থেকে নতুন অনুভূতি পাই । গত বছর ছিল চীনের নাট্যশিল্পের শততম বার্ষিকী । এক বছরে ফু ছুন সিন আটটি নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন । এই আটটি নাটকের এক শ' ২০টি প্রদর্শনী হয়েছে । নাটক ছাড়া ফু ছুন সিন চলচ্চিত্র ও টি ভি নাটকেও অভিনয় করে পুরস্কার পেয়েছেন । তিনি বলেন , শিল্পীরা সাহিত্য ও নাট্যকারেররচনা উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন , দর্শকরা আমাদের অভিনয় থেকে শক্তি ও প্রেরণা পান ।

    চীনে ফু ছুন সিনের কর্মপরিধি অভিনয়ে সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি মাদক পাচার দমন,স্বেচ্ছায় রক্তদান ও এইডস প্রতিরোধ অভিযানে অংশ নিয়েছেন । সাবওয়ে স্টেশন , বাস স্টেশন ও রাস্তার বিল বোর্ডে প্রায়ই তার বিজ্ঞাপন দেখা যায়। এ সম্পর্কে ফু ছুন সিন বলেন ,আমি এ সব কাজ করে আনন্দ পাই। এ সব জনসেবামূলক কাজে অংশ নেয়া আমার জীবনের একটি অংশ , ব্যস্ততা বাড়লেও এতে আমি মানসিক তৃপ্তি পাই।

    এ বছরের মার্চ মাসের শেষ দিকে ফু ছুন সিন পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মশালবাহক হিসেবে অলিম্পিক গেমসের পবিত্র আগুন পেইচিংয়ে নিয়ে আসার জন্য গ্রীসে গিয়েছিলেন । ফু ছুন সিন পেইচিং প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমসের একজন স্বেচ্ছাসেবক । তিনি অলিম্পিক গেমসের সাংস্কৃতিক কর্মসূচীতেও অংশ নেবেন । (ফাং সিউ ছিয়েন)