v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-04-22 15:30:31    
উজবেক জাতির নারী আইনজীবী ফাতেমা মাহমুতি

cri
    উত্তর পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উজবেক জাতির ফাতেমা মাহমুতি চীনের জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের একজন সদস্যা । তিনি চীনের সংখ্যালঘূজাতির প্রথম আইনজীবী অফিস প্রতিষ্ঠা করেছেন । পাশাপাশি তিনি জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনে সিনচিয়াংয়ের আইন ক্ষেত্রের প্রথম সদস্য ।

    ফাতেমা মাহমুতি সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উত্তর শহর থাছেন থেকে এসেছেন । চীন এবং কাজাকস্তানের সীমান্ত থেকে মাত্র দশ-বারো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই শহরে উজবেকিস্তান , উইগুর, তাতার, রুশ এবং তাউর সহ ২৯টি সংখ্যালঘুজাতি বসবাস করছে । ফাতেমা মাহমুতির বংশধর যুগ যুগ ধরে ব্যবসা করতেন । কিন্তু তিনি এ জাতির প্রথম নারী আইনজীবী হলেন । " আওয়ারা" নামক একটি ভারতীয় ছবির সঙ্গে তার আইনজীবী হওয়ার বিষয়টি সরাসরি সম্পর্কিত । শৈশবকালে ছবিটি দেখার পর আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছা তার মনে জাগে । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, রিতার কৈফিয়ত অভিনেতা রাজের জীবন পরিবর্তন করেছে । এটা আমার মনে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করে । রিতার রূপ ও ভাষা আমার ওপর প্রভাব বিস্তার করে । কর্ম বেছে নেয়ার সময় আমি আইনজীবী পেশা বেছে নিয়েছি ।

    ১৯৮৫ সালে ফাতেমা মাহমুতি শ্রেষ্ঠ ফলাফল দিয়ে সিনচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক হয়ে থাছেন শহরে ফিরে আসেন । স্থানীয় সরকারের একটি অর্থনীতি বিষয়ক আইনজীবী অফিসে তিনি আইনজীবীর কাজ শুরু করেন । প্রথম মামলা থেকে তিনি আইনজীবী হিসেবে নিজের কাজের তাত্পর্য উপলব্ধি করেন । সেটি একটি সম্পদের উত্তরাধিকারী হওয়ার মামলা । রুশ জাতির নারী কুকনিভার ভাইরা তার উত্তরাধিকার দখল করেছে । আইনগত সাহায্য পাওয়ার জন্য কুকনিভা যুবতী আইনজীবী ফাতেমা মাহমুতির কাছে আসেন । অকাট্য প্রমাণের মাধ্যমে ফাতেমার সাহায্যে কুকণিভা মামলায় জিতেছেন । মামলাটি ফাতেমার মনে গভীর রেখাপাত করে । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, তখন আমি সবেমাত্র আইন ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছি । বিশ্ববিদ্যালয়ে যা শিখেছি আমি তা কাজে লাগিয়ে তার বৈধ অধিকার রক্ষা করেছি । কুকনিভার সারা জীবনে এটি একটি বিরাট সমস্যা । এথেকে আমি বুঝেছি যে, আইনজীবীর কাজ অত্যন্ত তাত্পর্যসম্পন্ন ।

    কাজে অভিজ্ঞ এবং বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘুজাতির ভাষা জানেন বলে ফাতেমা মাহমুতির কাছে একটার পর একটা মামলা আসে । কিন্তু সে সময়কারের পরিস্থিতির প্রভাবে ১৯৯৫ সালে ফাতেমা আইনজীবীর কাজ ছেড়ে ব্যবসায় নামলেন । পরে বাবার কথা শুনে তিনি আবার নিজের কাজে ফিরে আসেন । তিনি বলেন, বাবা আমাকে বলেছিলেন, উজবেক জাতির আছে হাজার হাজার টাকাপয়সাওয়ালা ব্যবসায়ী। কিন্তু যুগযুগ ধরে আমাদের জাতির আইনজীবী শুধু তুমি একা । তোমার উচিত আইনজীবীর কাজ করা । সমাজও তোমাকে চায় । বাবার কথা শুনে আমি ফিরে এসেছি ।

    গত দশ-বারো বছরে ফাতেমা ফৌজদারী, দেওয়ানী এবং অর্থনৈতিক মামলা সহ প্রায় দশ হাজার মামলা হাতে নিয়েছেন । তিনি ৫০টি সংস্থার আইনগত উপদেষ্টা ছিলেন । তিনি ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জন্য প্রায় ১০ কোটি ইউয়ানের ক্ষতি ফিরিয়ে এনেছিলেন । সংখ্যালঘুজাতির একজন আইনজীবী হিসেবে ফাতেমা বিশেষভাবে দুর্বল লোকদের ওপর বেশি মনোযোগ দিতেন । তিনি ও তার সহকর্মীরা আর্থিক দিক থেকে দারিদ্র এবং প্রতিবন্ধীসহ দুর্বল লোকদের বিনাখরচে আইনগত উপদেশ দিতেন । তিনি বলেন , আর্থিক দিক থেকে যারা অত্যন্ত দরিদ্র তাদেরকে আমরা বিনাখরচে সাহায্য দিই । বিদেশে প্রবাসীদের পরিবারজনকেও আমরা বিনাপয়সায় সাহায্য দিতাম । এক সভায় থাছেন শহরের সকল প্রবাসী চীনাদের প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে , তাদের পরিবারপরিজনদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা বিনাখরচে তাদেরকে সাহায্য করবো ।

    ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে থাছেন এলাকার "নারী ও শিশু স্বার্থ বিষয়ক কেন্দ্র" এবং " বিদেশে বসবাসকারীদের পরিবারপরিজন বিষয়ক আইনগত কেন্দ্র" ফাতেমার আইনজীবী অফিসে প্রতিষ্ঠিত হয় । ফাতেমার আইনজীবী অফিস দিনদিন জনপ্রিয়তা লাভ করেছে । অধিক থেকে অধিকতর লোক সাহায্যের আশায় ফাতেমার কাছে আসেন । যাতে আরও ভালভাবে আইনগত সেবা দান করা যায় তার জন্য ফাতেমা নতুন প্রজন্মের আইনজীবীদের শেখানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন । তাদেরকে সুযোগ দেয়ার সাথেসাথে তিনি নিজের অভিজ্ঞতাও জানাতেন ।

    ফাতেমা নিজের কাজ ও আন্তরিকতা দিয়ে তার আশেপাশে প্রতিটি লোককে মুগ্ধ করেন এবং প্রভাব বিস্তার করেন ।তার সহকর্মী ওয়াং ছাওইয়াং এ সম্পর্কে বলেন , যে কাজ জনসাধারণের পক্ষে সহায়ক হবে তিনি সে কাজ করতেন বলে তার সহকর্মী হিসেবে আমরা তার খুব প্রশংসা করি এবং তার জন্য আমরা গর্বিত ।

    জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য হিসেবে ফাতেমা মাহমুতি এ বছর জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনে সিনচিয়াং সংখ্যালঘুজাতির মূল স্তরের বিচারপতি দল জোরদার করাসহ কয়েকটি প্রস্তাব দাখিল করেন । সম্মেলন চলাকালে গ্রুপ আলোচনা সভায় এই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সমর্থন পায় । এতে ফাতেমা খুব উত্সাহিত হলেন । তিনি বলেন , পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ দিন ধরে তিনি মনেপ্রাণে সংখ্যালঘুজাতি অধ্যুষিত এলাকার অধিবাসীদের সেবা করে যাবেন ।