জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়াসুয়ো ফুকুদা ২১ এপ্রিল সকালে সফররত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি মিউং বাকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দু'পক্ষ বলেছেন, জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া নতুন যুগ সৃষ্টি করার লক্ষ্য দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের পরিণত সম্পর্ক গড়ে তুলবে। বিশ্লেষকগণ মনে করেন, জাপান লি মিউং বাকের এবারের সফর জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার অসংগতিপূর্ণ অবস্থার অবসানের প্রতীক। ভবিষ্যত মুখী অংশীদারিত্বের পরিণত সম্পর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে দু'পক্ষের যৌথ প্রয়াসের অন্যতম লক্ষ্য। তবে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের পরিস্থিতি এখনও সুস্পষ্ট নয়।
বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফুকুদা বলেছেন, লি মিউং বাকের জাপান সফর দু'দেশের নেতৃবৃন্দের পারস্পরিক সফরের জন্য একটি নতুন অগ্রগতির সূচনা করেছে। ফুকুদা চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দক্ষিণ কোরিয়া সফর করবেন। এ ছাড়াও জুলাই মাসে জি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে লি মিউং বাকের সঙ্গে খোলামলা সংলাপ করবেন। যাতে যৌথভাবে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন যুগের সূচনা করা যায়।
লি মিউং বাক বলেছেন, বৈঠকে উভয় পক্ষেরই বক্তব্য ছিল। দু'দেশের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। তিনি আরো বলেন, ইতিহাসকে ভুলে থাকা যায় না। তবে দু'দেশের উচিত ইতিহাসের কারণে ভবিষ্যত উন্নয়নের ধারায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না করা।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দু'পক্ষ একমত হয়েছে যে, দু'দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি(ইপিএ) দু'দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত। অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা ২০০৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে স্থগিত রয়েছে। এবারের শীর্ষ বৈঠকে দু'পক্ষ চলতি বছরের জুন মাস আলোচনা আবার শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। লি মিউং বাক বলেছেন, দু'দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি সমভাবে স্বাক্ষরিত না হলে এ ধরণের পার্থক্য দিন দিন বাড়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। দক্ষিণ কোরিয়া জাপানের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে সৃষ্টি সমস্যা সমাধান করতে ইচ্ছুক। যাতে উভয় পক্ষের জন্যে তা কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
উত্তর কোরিয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যার ব্যাপারে দু'পক্ষ মনে করে, উত্তর কোরিয়ার সার্বিক পরমাণু পরিকল্পনা যথাশিগগির দাখিল করা উচিত। দু'পক্ষ জোর দিয়ে বলেছে, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা আরো জোরদার করা প্রয়োজন। যাতে ছ'পক্ষীয় বৈঠকের যৌথ বিবৃতির পুরোপুরি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা যায়। এর পাশাপাশি তিন দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সমস্যাবলী নিয়েও সংলাপ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী ফুকুদা বৈঠকে তিন দেশ সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে বলেছেন। তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন যে, চলতি বছরে জাপানে তিন দেশের নেতৃবৃন্দের বৈঠক অনুষ্ঠান করতে চান। লি মিউং বাক তার প্রস্তাবের সঙ্গে সম্মতি প্রকাশ করেছেন। ফুকুদার আমন্ত্রণে লি মিউং বাক জুলাই মাসে হোক্কাইদোয় অনুষ্ঠেয় জি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। এটি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোন নেতার প্রথমবারের মত আমন্ত্রিত হয়ে সম্মেলনে যোগ দান।
6
তাছাড়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতৃবৃন্দ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করা, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে যৌথ মোকাবেলা করা, জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া নতুন যুগের অভিন্ন গবেষণা প্রকল্প এবং যুব সম্প্রদায়ের বিনিময় বাড়ানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মতৈক্যে পৌঁছেছেন।
জাপানের জনমত মনে করে, যদিও লি মিউং বাক এবারের সফরের মাধ্যমে বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন। তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখনো ততটা দৃঢ় নয়। বাস্তব অগ্রগতি অর্জনের জন্য আরো সময়ের প্রয়োজন। এবারের শীর্ষ বৈঠকে ভূভাগীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় নি। বাস্তব সমস্যার ব্যাপারে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহতভাবে জোরদার করা হচ্ছে ফুকুদা সরকারের কঠোর পরীক্ষার অংশ।(লিলু)
|