v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-04-21 11:25:46    
ফু চৌয়ের মার্কিন শিক্ষক বেট্টস

cri
    আশি বছর বয়সী মার্কিন বেটস রিভেট একটি সুখ পরিবারের সদস্য। তারপরও তিনি চীনে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছেন। আজকের অনুষ্ঠানে দক্ষিণ পূর্ব চীনের ফু চৌ শহরের একজন মার্কিন শিক্ষক সম্পর্কে আপনাদের কিছু কথা বলবো আমি আপনাদের বন্ধু লিলু।

    বেটস রিভেট মনস্তত্ত্ব বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রীধারী। চীনে আসার আগে তিনি ৭০টিরও বেশি দেশে ভ্রমন করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে তার ৫৬ বছরের শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৫ বছর আগে এক দিন বিকালে সংবাদপত্রে প্রকাশিত চীনের ফু চৌ শহরের দক্ষিণ চীন নারী ইনস্টিটিউট সম্পর্কিত একটি প্রবন্ধের প্রতি অবসর-প্রাপ্ত বেটসের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। (১) তিনি বলেন,

    আমি সংবাদপত্রে দক্ষিণ চীন নারী ইনস্টিটিউটের খবর দেখেছি। এ প্রবন্ধ ডক্টর লিউ লিখেছেন। তিনি দক্ষিণ চীন ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক হয়েছেন এবং সেখানে শিক্ষাদান করতেন। ডক্টর লিউ'র অবসর নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার সময় এ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধটি পড়ার পর আমি মনে করতাম, কেন আমি ওখানে শিক্ষাদান করবো না?

     প্রথম দিকে চীনের শিক্ষাদান সম্পর্কে বেটসের সংশয় ছিল। কারণ আগে কখনো তিনি চীনে আসেন নি। দক্ষিণ চীন নারী ইনস্টিটিউট সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এরপর তিনি ডক্টর লিউকে চিঠি লেখেন এবং তখন দক্ষিণ চীন নারী ইনস্টিটিউটে শিক্ষাদানকারী পাঁচজন বিদেশী শিক্ষককে ফোন করে এই ইনস্টিটিউটের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন। তাঁদের কাছ থেকে একই কথা শুনেছেন। এ কথা হল এটি একটি খুব ভালো ইনস্টিটিউট । এখানে মানুষ খুব অতিথিপরায়ন এবং চমত্কার পরিবেশ বিরাজ করছে।

    কিছু দিন খোঁজ খবর নেয়ার পর বেটস দক্ষিণ চীন নারী ইনস্টিটিউটে শিক্ষাদানের সিদ্ধান্ত নেন।(২) তিনি বলেন,

    আমি মনে করি, নতুন কাজের চেষ্টা করা উচিত। ইউরোপের সংস্কৃতি থেকে চীনের সংস্কৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন । সুতরাং আমি ভাবতাম, আচ্ছা, দেখিনা, চেষ্টা করবো, শুধু মাত্র এক বছর।

    ১৯৯২ সালের আগস্ট মাসে ৬৪ বছর বয়সী বেটস একাই চীনের ফু চৌ শহরে আসেন। বিমানে তিনি বার বার ভেবেছেন, দক্ষিণ চীন নারী ইনস্টিটিউটে শিক্ষাদানের এক বছর কীভাবে তিনি কাটাবেন এবং এখানকার লোকদের সঙ্গে কীভাবে মেলামেশা করবেন ইত্যাদি অনেক কিছু। তবে তিনি ফু চৌয়ের বিমান বন্দরে পৌঁছানোর পর তাঁর সব উদ্বেগ কেটে যায়। (৩) তিনি বলেন,

    আমি একাই এ ইনস্টিটিউটে এসেছি। আমি বিমান বন্দরে পৌঁছানোর পর কী কী কাজ করবো তা কিছুই জানি না। তবে আমি বিমান বন্দর থেকে বেরিয়ে আসার পর তিনজন মৃদুহাস্য বন্ধুকে পেয়েছি। তাঁরা আমাকে বলেন, দক্ষিণ চীন নারী ইনস্টিটিউটে আপনাকে স্বাগত জানাই। আমিও ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তারা খুব অতিথিপরায়ন।

    দক্ষিণ চীন নারী পেশাগত ইনস্টিটিউট এক শো বছর পুরনো একটি বেসরকারী উচ্চ পর্যায়ের বিদ্যালয়। ফু চৌ শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত। পাহাড়ের কাছাকাছি নির্মাণ করা হয়। বেটস এই ইনস্টিটিউট খুবই পছন্দ করেন এবং দ্রুত এখানকার জীবন যাত্রার সঙ্গে নিজকে খাপ খাইয়ে নেন। (৪)

    ইনস্টিটিউটে শিক্ষাদানের দু'সপ্তাহের মধ্যেই এখানে আমি বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।

    ইনস্টিটিউটে বেটস বাস্তবিক ইংরেজী বিভাগ এবং শিশু শিক্ষা বিভাগের শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এখনো তাঁর মনে প্রথম শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতার কথা গভীরভাবে রেখাপাত করে আছে। (৫)

    আমি চীনা ছাত্র-ছাত্রীকে প্রথমবারের মত দেখেছি। আমি মনে করি, তারা দেখতে একই। সব কালো চুল, একই কাপড় পড়া। সুতরাং আমার প্রথম কাজ ছিল তাদের নিজেদের ইংরেজী নাম বাছাই করা। কারণ আমার শিক্ষাদানের বিভাগ হচ্ছে বিদেশী ভাষা বিভাগ। ধাপে ধাপে আমি সকল ছাত্র-ছাত্রীকে জেনে ফেলি।

    শিক্ষাদানের সময় বেটস নিজের বিশেষ পদ্ধতিকে কাজে লাগান। তাঁর ছাত্রী ছেন ছোং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, বেটসের বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতি তাঁর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে।(৬)

    আগে মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়ার বেশির ভাগ সময় শিক্ষক সামনে দাঁড়িয়ে বলতেন। আমরা শিক্ষকের কথা কলমের মাধ্যমে লিখতাম। তবে শিক্ষক বেটসের ক্লাসে আমরা আরাম বোধ করি। শিক্ষাদানের প্রক্রিয়ায় বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে ইংরেজী শিক্ষা গ্রহণ এখন খুব সহজ। আমরা অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করেছি। তবে কখনোই ক্লান্ত বোধ করি নি।

    দক্ষিণ চীন নারী ইনস্টিটিউটের উপাচার্য লিন বেন ছুন বলেছেন, এই ইনস্টিটিউটের বিকল্প নেই।(৭)

    বেটস ইনস্টিটিউটকে ভালোবাসেন। নারী শিক্ষায় তিনি নিজের অবদান রাখছেন। তাঁর কারণে অনেক শিক্ষক এখন আমাদের ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। যেমন তিনি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শিক্ষক বাছাই করেন। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁকে খুবই পছন্দ করে।

    ২০০৬ সালে বেটস চীন সরকারের দেয়া জাতীয় মৈত্রী পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কারের মাধ্যমে চীনের শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। পুরস্কার পাওয়ার অনুভব ব্যক্ত করার সময় তিনি বলেছেন,(৮)

    এই পুরস্কার আমার জন্য বেশ তাত্পর্যবহ । সব সময় আমি নিজেকে জিজ্ঞাস করি যে, আমি সত্যিই এ পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। এই পুরস্কার পেয়ে আমি খুব খুশি। এটি একটি গৌরব।

    তিনি আরো বলেছেন, স্বাস্থ্য ভালো থাকলে চীনে বসবাস করতে থাকবেন এবং দক্ষিণ চীন নারী ইনস্টিটিউটে শিক্ষা প্রদান করতে থাকবেন। চীন তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি। এখানে তাঁর পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধব রয়েছে।