মনোবিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আবিস্কার করেছেন যে , ১২ বছরের কম বয়সী বাচ্চারা তাদের বাবা মার সংগে কথাবার্তা বলতে আগ্রহী, যাতে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করা যায় । তবু বয়স বেড়ে যাওয়ার সংগে সংগে বাবা মার সংগে তাদের কথাবার্তার সংখ্যা আর সময় ক্রমশঃই কমে যায় । বাচ্চাদের সংগে কেমন করে আদান প্রদান করা যায় আর কেমন করে তাদেরকে বাবা মার কথা শুনতে উদ্বুদ্ধ করা যায় ? এই সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা নিম্নলিখিত কয়েকটি প্রস্তাবপেশ করেছেন ।
'শুনার পরিবেশ' সৃষ্টি করুন । দশ-বারো বছর বয়সী বাচ্চাদের বসে একাগ্রচিত্তে কথাবার্তা বলতে দেয়া খুব সহজ নয় । সেজন্য এক ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়। বাচ্চাদের সংগে আদান প্রদানের জন্য এক প্রকার বিশেষ সময় বজায় রাখা উচিত। সাধারণতঃ বলতে গেলে সন্ধ্যা বেলার খাবার সময় বাচ্চাদের সংগে সুন্দর ঘরোয়া সময় ভাগাভাগি করার একটি চমত্কার সুযোগ । কিন্তু বাস্তবে তার উপর গুরুত্ব দেয়া হয় নি। বাবা মা বাচ্চাদের কথা আর গল্পের প্রতি কৌতুল প্রকাশ করলে , বাচ্চারা এক রকম মর্যাদা পাওয়ার গৌরব অনুভব করবে ।
বাচ্চাদের সংগে সমানভাবে কথাবার্তা বলার পদ্ধতি গ্রহণ করুণ । বাবা মা হিসেবে কাজে যতই ব্যস্ত থাকুক না কেন , বাচ্চারা যে কি কি করছে আর ভাবছে , তার উপর নজর রাখা এবং তাদের সংগে কথাবার্তা বলা দরকার । কথাবার্তার সময়ে তাদের কথা ও ভাবনা বেশী শুনতে হয় । বিশেষ করে বাবা হিসেবে বাচ্চার সংগে এই ধরনের আদান প্রদান অসাবধানে বাদ দেয়া যায় । তবু সমানভাবে কথাবার্তা আর আদান প্রদানের পদ্ধতি অবলম্বন করলে বাচ্চাদের সংগে তথাকথিত 'সংঘর্ষ' এড়ানো যায় ।
উপদেষ্টার ভুমিকা গ্রহণ করুণ । বাবা মা বাচ্চাদের জন্য যে প্রস্তাব এমন কি ইতিবাচক পরামর্শ দেন , তারা তা অগ্রাহ্যও করতে পারে । আসলে তারা উপদেষ্টা আর সমর্থক চায় । বাচ্চারা ভুল করলে বাবা মাকে তত্ক্ষনাত তাদের সমালোচনা করতে হয় না , বরং তাদের ভুল করার কারণ জানিয়ে দিতে হয় । বাচ্চারা সাধারণতঃ মনে করে , তারা সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম ।
বাচ্চাকে একটি ব্যক্তিগত অবকাশ আর স্বাধীনতা দিন । বাচ্চারা বাবা মা তাদের জীবনযাত্রা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করবেন , এ আশা করে না । বাচ্চাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করলে তাদের বিরোধীতা ও অসন্তুষ্টি সৃষ্টিহতে পারে । যেমন তারা অযৌক্তিভাবে বাবা মার প্রশ্নের উত্তর দেয় না , আপনার সংগে বাইরে বেড়াতে অস্বীকার করে আর একটানা কয়েক দিনের মধ্যে আপনার সংগে কথা বলে না । বহু বাবা মা এই সত্যতা জানেন না । বাচ্চারা আপনাকে এড়ালে উভয় পক্ষের মত পাথর্ক্য অবশ্যই আরো ব্যাপক হবে ।
যে কথা বলার অসুবিধা আছে , তা লেখা যায় । বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাব করেন যে , যে সব কথা বাচ্চারা শুনতে চায় না, সে সব কথা লিখে দেয়া যায় । আপনার যুক্তি দেখে বাচ্চারা মাথা ঠান্ডা হলে তা বিবেচনা করতে ইচ্ছুক হবে। যখন আপনার পরামর্শ ও উপদেশে কাজ হয় , তখন সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে ।
'যুক্ত ফ্রন্ট' গড়ে তুলুন । সাধারণতঃ বাচ্চাদের সামনে বাবা মা যার যার মত প্রকাশ করে থাকেন । বাচ্চারা বাবার কথা মানে । কিন্তু বড় হলে বাচ্চারা এই ধরনের পদ্ধতি পছন্দ করে না । সুতরাং সবচাইতে ভাল পদ্ধতি হলোঃ বাচ্চাদের সামনে বাবা মার মতভেদ দেখানো উচিত নয় , মতৈক্য বজায় রাখা উচিত । এ থেকে প্রতিপন্ন হয় যে , সংকট শেষ , বাবা মা পরস্পরকে সমর্থন করেন ।
বাচ্চাদের সংগে মিলিতভাবে তৃপ্তি ও আনন্দ ভাগাভাগি করুণ ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে , বাচ্চাদের যৌবনকাল যেমন মনের অন্তরায় কাটিয়ে উঠা , তেমনি বাচ্চাদের সংগে আপনার সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি প্রক্রিয়া । এটা নিজের চিন্তাধারা খোলার চাবি । আপনি এই ভুমিকায় প্রবেশ করলে একটি নতুন সাফল্য ও তৃপ্তি বোধ করবেন ।
|