এ বছরের মার্চ মাসে চীনের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির বার্ষিক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । অধিবেশন চলাকালে রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের বেশ কয়েক জন সদস্য সংবাদদাতাদের সাক্ষাত্কার দিয়েছেন । গত কয়েক বছরে সংখ্যালঘু জাতি এলাকাগুলোতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীন সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে , তারা তার উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন । আজ এই অনুষ্ঠানে সংখ্যালঘু জাতির সদস্যদের ভাষ্য সম্পর্কে আপনাদের জানাচ্ছি আমি….
পশ্চিম চীন চীনের সংখ্যালঘু জাতিসমূহ অধ্যুষিত অঞ্চল । গত কয়েক বছরে এই অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য চীন সরকার বিবিধভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে । চীনের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির সদস্য , সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তাজিক জাতির তেইমিক তিয়ানা বলেন , যদিও তার জন্মভূমি সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত , কিন্তু চীনের অন্যান্য অঞ্চলের মতো তার জন্মভূমিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানও অনেক উন্নত হয়েছে । তাদের চিকিত্সার সমস্যাও কার্যকর সমাধান হয়েছে ।
কৃষক ও পশুপালকদের চিকিত্সার ৭০ শতাংশ খরচ সরকার বহন করে । তারা শুধু বাকী অং শটা ব্যয় করে ।
আগে সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে কৃষি ও পশুপালন অঞ্চলে চিকিত্সা বীমা ব্যবস্থা ছিল না । চিকিত্সার ব্যয় সম্পূর্ণভাবে কৃষক ও পশুপালকরা বহন করতো । চিকিত্সার খরচ বেশি বলে বৃষক ও পশুপালকরা সাধারনতঃ হাসপাতালে যেতো না । পরে সরকারের উদ্যোগে কৃষি ও পশুপালন অঞ্চলের নতুন সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে । কৃষক ও পশুপালকদের উপযুক্ত ভর্তুকী দেয়া হয় । ফলে তাদের চিকিত্সার ভার অনেক কমেছে । এতে কৃষক ও পশুপালকদের সত্যিই কল্যাণ হয়েছে । জানা গেছে , এ বছর সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে সম্পূর্ণভাবে নতুন গ্রামাঞ্চলের সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে । তখন সিনচিয়াংয়ে এই ব্যবস্থা প্রবর্তনে কমপক্ষে ন' লাখ জনের মত উপকৃত হবে । তিব্বতের মি লিন জেলার লুপা জাতির রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির সদস্য ছিয়ান চিং বলেন , ১০ বছর আগের তুলনায় তিব্বতের চিকিত্সা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে । স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে যেমন আবাসিক এলাকায় হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে , তেমনি তিব্বতী ওষুধের মতো জাতীয় চিকিত্সা ও ওষুধ কাজ ব্যাপকভাবে সুরক্ষা করা হয়েছে । এতে মিলিন জেলার ওষুধ তৈরির জন্য ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ বয়ে এনেছে ।
মিলিন জেলা বনৌষধি সম্পদে সমৃদ্ধ । এখন বনৌষধির চাষ সুরক্ষা পেয়েছে । বনৌষধি কেনার জন্য স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তিব্বতী ওষুধ তৈরি কারখানা ও তিব্বতী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মিলিন জেলায় আসে । স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বাণিজ্য কোম্পানিও বনৌষধি সংগ্রহ করছে ।
চীনের রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের বার্ষিক অধিবেশনের মেয়াদে রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্যরা দেশের পরিচালনা বিষয়ক কর্মসূচী ও জনজীবনের প্রধান প্রধান বিষয় সম্পর্কে নিজের মতামত ও প্রস্তাব উপস্থাপন করেন । তাদের প্রস্তাবে সংখ্যালঘু জাতি এলাকার দ্রুততর বিকাশ উদ্বুদ্ধ করে তোলা হয়েছে । তিব্বতের লিন চি অঞ্চলের বৃহত্তম মন্দির- লালু মন্দিরের জীবিত বৌদ্ধ লুসান তেনবানিমা রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের একজন প্রবীণ সদস্য । গত বছর তার প্রস্তাব অনুসারে লিন চি বিমান বন্দর নির্মাণ করা হয়েছে ।
লিন চি অঞ্চলে বিমান বন্দর এবং ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হয়েছে । এখন পেইচিং , কুয়াংতুং ও ফুচিয়ান থেকে তিব্বতে যাওয়ার জন্য খুব সুবিধা হয়েছে । বাইরের ব্যবসায়ীরা আসলে লিন চি অঞ্চলের বনৌষধিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা যায় । এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এজন্য খুব খুশি ।
চীন সরকার সংখ্যালঘু জাতির শিক্ষার ওপরে খুব গুরুত্ব দেয় । চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও গত ৫ বছরে সরকারী কর্মসূচী প্রসঙ্গে বলেন , এ ক্ষেত্রে চীন বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে ।
গত ৫ বছরে শিক্ষা খাতে চীন সরকারের অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ এর আগের ৫ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়ে ২.৪৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । পশ্চিম চীনে ন'বছর মেয়াদী বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর যুব ও প্রৌঢ়দের নিরক্ষরতা মোটামোটি নির্মূল করা হয়েছে । চীন সকল নাগরিকদের শিক্ষা গ্রহণের সমান অধিকারের ব্যাপারে একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছে । এ ব্যাপারে রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের সদস্য এবং চীনের সংখ্যালঘু জাতিসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিন্সিপল , কোরীয় জাতির ঔ ই থাই সম্মত হয়েছেন । তিনি বলেন , সংখ্যালঘু জাতিসমূহ বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ভর্তি সংক্রান্ত নিয়ম কানুনে বিভিন্ন জাতির শিক্ষা গ্রহণের সমান অধিকার ফুটে উঠেছে ।
বর্তমানে চীনের রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুজাতি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৫৬টি জাতির ছাত্রছাত্রী আছে । গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি ছাড়া মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রির ছাত্রছাত্রীও আছে । এদের মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে সিনচিয়াং , তিব্বত ও দেশের অন্যান্য জনসংখ্যালঘু জাতি এলাকা থেকে আসা । কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মসংস্থানের জন্যও বেশি অগ্রাধিকার দেয় ।
চীনের জাতীয় সংখ্যালঘু জাতিসমূহ বিষয়ক কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান চৌ মিন ফু সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে ৮ বছর চাকরি করেছেন । তিনি স্বচোখে সংখ্যালঘু জাতি এলাকার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন ।
চীন একটি বহুজাতিক দেশ । সংখ্যালঘু জাতিসমূহের জনসংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি । ইতিহাস , প্রকৃতি ও সমাজের কারণে চীনের সংখ্যালঘুজাতি এলাকাগুলোতে অর্থ ও সমাজের সমন্বিত বিকাশ হয় নি । বিভিন্ন অঞ্চল , শহর ও গ্রামাঞ্চল এবং জাতির মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান বিরাজমান । গত কয়েক বছরে পশ্চিম চীনের সংখ্যালঘুজাতি এলাকার উন্নয়ন দ্রুততর করার ব্যাপারে কতকগুলো ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নিয়েছে । ফলে সংখ্যালঘুজাতি এলাকাগুলোতে ব্যাপক বিকাশ লাভ করেছে ।
(থান ইয়াও খাং)
|