নেপালের জাতীয় নির্বাচন ১০ এপ্রিল সন্ধ্যায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হয়েছে।
ভোটগ্রহণের পর নেপালী নির্বাচন কমিশন বলেছে, সব দিক দিয়ে নির্বাচন 'অত্যন্ত সফল' হয়েছে। সারা দেশের অধিকাংশ এলাকায় ভোটগ্রহণ শান্ত ও সুশৃঙ্খলভাবে চলেছে। নির্বাচনে ভোটারদের সাড়া অভূতপূর্ব। প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, ভোটারদের অংশগ্রহণের হার ৬০ শতাংশের বেশি। ফলে এবারের নির্বাচন ভোট প্রদানের হারের দিক দিয়ে কার্যকর।
১০ এপ্রিল স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে নেপালী ভোটাররা দেশের ২৪০টি নির্বাচনী অঞ্চলের ২০ সহস্রাধিক ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যান। বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের কাজ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ হয়। কিছু কিছু ছোট কেন্দ্র সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়েছে।
নেপালের ১৪৮টি সংস্থার ৬০ হাজারেরও বেশি পর্যবেক্ষক ও ২৮টি আন্তর্জাতিক সংস্থার ৮৫৬ জন প্রতিনিধি এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষন করেছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তিনি যে নির্বাচনী অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করেন, সেখানে ভোটদানের প্রক্রিয়া শান্ত ও সুশৃঙ্খল ছিল। তিনি ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের উষ্ণ আগ্রহ দেখেছেন। তিনি মনে করেন, বহু বছরের সংঘাত অবসানের পর আয়োজিত প্রথম নির্বাচন হিসেবে নেপালের এবারের নির্বাচন রীতিমতো বিপ্লবী। ভারত সরকার নেপালের জাতীয় নির্বাচনে সফলতার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে এবং বলেছে, এবারের নির্বাচন নেপালের জন্য 'ঐতিহাসিকভাবে তাত্পর্যপূর্ণ'।
তবে সে দিনের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি নির্বাচনের প্রাক্কালে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু ও অন্যান্য প্রধান প্রধান শহরে পর পর বিস্ফোরণ ঘটনা ঘটে। ভোট দেয়ার আগে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে একজন প্রার্থীসহ কম পক্ষে ৯ জন নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হন। এটা নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান ভোজ রাজ পোকরেল ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর স্বীকার করেছেন, ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে কিছু নির্বাচনী অঞ্চলের ভোট কেন্দ্রে বিভিন্ন দলের মধ্যে বিবাদ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে নির্বাচন কমিশন বাধ্য হয়ে ৩৩টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দিয়েছে।
ভোটারদেরকে নির্বাচনে ভোট দেয়ার উত্সাহ দেয়া এবং নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য নেপাল সরকার ১ লাখ ২০ হাজার নির্বাচনী কর্মকর্তাকে সারা দেশের ভোট কেন্দ্রগুলোতে পাঠায়। ভোটদান ব্যবস্থাপনার কাজে ১ লাখ ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সংগঠিত করা হয় এবং সারা দেশে ১ লাখ ৩০ হাজার নিরাপত্তা কর্মী মেতায়েন করা হয়। এর পাশাপাশি নেপালের আকাশসীমায় ২৪ ঘন্টা ধরে হেলিকপ্টার টহল দিতে থাকে। নেপাল ও ভারতের সীমান্ত অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
নির্বাচনের পর ব্যালট বাক্সগুলো দ্রুত ভোট গণনা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, এবার পার্লামেন্টের ৬০১টি আসনের মধ্যে কেবল ২৪০টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়েছে। ৩৩৫টি আসন প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে বন্টন করা হবে। আর ২৬টি আসন প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রতিনিধি নিয়োগ করবেন। তা ছাড়া আরেকটি নির্বাচনী অঞ্চলে প্রার্থী নিহত হওয়ায় সেখানকার ভোটগ্রহণ এ মাসের ১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। ফলে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হতে কমপক্ষে ১০ দিন সময় লাগবে।
নেপালের নতুন পার্লামেন্ট জাতীয় নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের ২১ দিন পর প্রথম অধিবেশন আয়োজন করবে এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর নেপালের অস্থায়ী পার্লামেন্ট অস্থায়ী সংবিধানের সংশোধিত বিল অনুমোদন করে এবং নেপালকে 'ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র' ঘোষণা করেছে। যদি কোন আকস্মিক ঘটনা না ঘটে, তাহলে নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনে অস্থায়ী সংবিধানের সংশোধিত বিল গৃহীত হবে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
|