দু'দিনব্যাপী ভারত-আফ্রিকা ফোরামের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন ৯ এপ্রিল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে শেষ হয়েছে। সম্মেলনে "দিল্লী ঘোষণা" ও " ভারত -আফ্রিকা সহযোগিতা কাঠামো চুক্তি" গৃহীত হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এবারের সম্মেলন দু'পক্ষকে পরস্পরের সঙ্গে আদান-প্রাদন ও সমঝোতার একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে । তবে সহযোগিতা বাস্তবায়ন এবং ব্যাপক কল্যাণকর ফলাফল অর্জন করার জন্য দু'পক্ষকে আরও অনেক চেষ্টা চালাতে হবে।
এবারের সম্মেলন ভারত সরকারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। আফ্রিকার ১৪টি দেশের নেতা এবং আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিটির চেয়ারম্যান সম্মেলনে অংশ নেন। তারা বলেন, জাতিসংঘ সংস্কারসহ বিবিধ বিষয়ে ভারত ও আফ্রিকার অভিন্ন আকাঙক্ষা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি উন্নয়ন, কৃষি এবং শিক্ষা খাতে আফ্রিকা ভারতের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি সাহায্য পেয়েছে। এ ছাড়াও খাদ্য নিরাপত্তা , জলবায়ু পরিবর্তন রোধ এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দোহা রাউন্ড আলোচনায় দু'পক্ষের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতায় ভারত সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে এবং নির্মাণ, টেলিযোগাযোগ ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। সম্মেলনে ভারত আরও ৩৪টি অনুন্নত দেশকে শুল্ক মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে ভারত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, আগামী পাঁচ বছরে ভারত -আফ্রিকা দ্বিপাক্ষিক এবং আফ্রিকার আর্থ-বাণিজ্যিক লেনদেন ভারতের আমদানি ও রপ্তানি ব্যাংক মোট ৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা দেবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এবারের সম্মেলন সত্যিকারভাবে ভারত-আফ্রিকা দু'পক্ষকে একটি আদান-প্রদান ও সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে এবং পরস্পরের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করেছে। শীর্ষ সম্মেলন কিছু কিছু আন্তর্জাতিক সমস্যায় দু'পক্ষের অবস্থান সমন্বয় করেছে এবং দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা জোরদার করেছে। এছাড়াও, ভারত ও আফ্রিকার নেতাদের " তিন বছরে একবার " বৈঠকের নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হচ্ছে "দিল্লী ঘোষণা" ও " ভারত -আফ্রিকা সহযোগিতা কাঠামো চুক্তি" গ্রহণ। "দিল্লী ঘোষণা" হচ্ছে ভারত ও আফ্রিকার দ্বিপক্ষিক সম্পর্কসহ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে দু'পক্ষের সহযোগিতার একটি নীতিগত প্রস্তাব। " ভারত -আফ্রিকা সহযোগিতা কাঠামো চুক্তির" লক্ষ্য ভবিষ্যতে ভারত ও আফ্রিকার সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নির্ধারণ করা। এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে অর্থনীতি, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান , সামাজিক উন্নয়ন, পর্যটন ,অবকাঠামো, জ্বালানি ও পরিবেশ এবং সাংবাদিক আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র।
এবারের শীর্ষ সম্মেলন ভারত ও আফ্রিকার সহযোগিতার জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ভবিষ্যতে দু'পক্ষের সহযোগিতা দ্রুত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে কি না, তা এখন দেয়ার বিষয় ।
আফ্রিকার ১৪টি দেশ এবারের সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। তবে এই সংখ্যা ৫০টিরও বেশি আফ্রিকান দেশের মাত্র এক চতুর্থাংশ। মিসর এবং নাইজেরিয়াসহ বেশি প্রভাব রয়েছে এমন দেশগুলোর নেতারা এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেননি।
শীর্ষ সম্মেলনে "দিল্লী ঘোষণা" ও " ভারত -আফ্রিকা সহযোগিতা কাঠামো চুক্তি" গৃহীত হলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা প্রস্তাব যা বর্তমানে আফ্রিকার সবচেয়ে বেশি দরকার সেটি ঘোষণা বা চুক্তিতে নেই। বরং " ভারত-আফ্রিকার সহযোগিতা কাঠামোমূলক চুক্তি" বাস্তবায়নের জন্য দু'পক্ষ এক বছরের মধ্যে একটি যৌথ কর্মসূচী নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এছাড়া, " দিল্লী ঘোষণায়" নিরাপত্তা পরিষদের সম্প্রসারণসহ সংশ্লিষ্ট কিছু কিছু আন্তর্জাতিক সমস্যায় ভারত ও আফ্রিকার মধ্যে মতৈক্য হয়নি।--ওয়াং হাইমান
|