v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-04-09 21:04:21    
ইয়াং লিউ ছিনের নববর্ষ উদযাপনী চিত্রশিল্প

cri
    চীনের থিয়েন চিং শহরের উপকন্ঠের ইয়াং লিউ ছিন মহকুমায় নববর্ষ উদযাপনী চিত্র চীনের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ঐতিহ্যিক শিল্পকর্ম । এ বছরের বসন্ত উত্সবের আগে সি আর আইয়ের সংবাদদাতা নববর্ষ উদযাপনী চিত্রের সংরক্ষণ ও প্রসার সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য থিয়েন চিং গিয়েছিলেন ।

    নববর্ষ উদযাপনী চিত্র চীনের এক প্রাচীন লোকশিল্প । প্রাচীন চীনে বসতবাড়ি থেকে দৈত্য -দানব তাড়ানোর প্রথা ছিল । তখনকার মানুষ মনে করতো বীরের ছবি দেওয়ালে টাঙালে দৈত্য-দানব পালিয়ে যায় এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় । ধীরে ধীরে নববর্ষ উদযাপনী চিত্র টাঙানো চীনের চান্দ্র নববর্ষ উদযাপনের একটি রেওয়াজে পরিণত হয় । এ রেওয়াজের কয়েক শ' বছরের ইতিহাস রয়েছে । থিয়েন চিংয়ের ইয়াং লিউ ছিন মহকুমার চিত্রশিল্পীরা স্থানীয় রীতিনীতি অনুসারে নববর্ষ উদযাপনী চিত্র আঁকেন এবং চিত্রটি কাঠের উপর এঁটে দেন । ইয়াং লিউ ছিন মহকুমার নববর্ষ উদযাপনী চিত্র ভবনে আমাদের সংবাদদাতা একটি চিত্রের প্রতিলিপি দেখেছেন । এ চিত্রের মূল সংস্করণ এখন রাশিয়ার সেন্ট পিটারবুর্গের জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে । এ সম্পর্কে চিত্রভবনের প্রধান লিউ ছান চিন বলেন , এটা হল চীনের সবচেয়ে প্রাচীন নববর্ষ উদযাপনী চিত্র । এ চিত্র দ্বাদশ শতাব্দীতে চিং রাজবংশের সময় আঁকা হয়। তখন রং ছিল না বলে এ চিত্রে হলুদ রংয়ের কাগজে কালো রংয়ের ছবি আঁকা হয়েছিল । এ চিত্রে প্রাচীন চীনের চারজন সুন্দর নারীকে চিত্রিত করা হয় ।

    থিয়েন চিং শহরের উপকন্ঠের ইয়াং লিউ ছিন মহকুমার নববর্ষ উদযাপনী চিত্রের বিষয়বস্তু চার সহস্রাধিক । এ ধরনের চিত্রের প্রধান বিষয় হল নাদুস-নুদুস শিশু , দেবতা , সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য , ফুল , পাখি , রূপ কথা ও ঐতিহাসিক কাহিনীর দৃশ্যাবলী । এ সব চিত্রে ভালো ফলন , সুখী জীবন ও দীর্ঘায়ুর আকাংখা প্রতিফলিত হয় ।

    তবে নববর্ষ উদযাপনী চিত্রশিল্পের সুষ্ঠু বিকাশ হয় নি । এ চিত্রশিল্প গুরুতরভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল , এমনকি এক সময় বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল । চিত্রভবনের প্রধান লিউ ছান চিন বলেন , উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক পর্যন্ত সময়ে ইয়াং লিউ ছিনের নববর্ষ উদযাপনী চিত্রের কোনো প্রসার হয়নি বলা যায় । সবচেয়ে গুরুতর ক্ষতি হয়েছিল জাপানের আক্রমণ প্রতিরোধ যুদ্ধের সময়ে । ১৯৩৭ সালে জাপ –আক্রমণ প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্থানীয় অধিবাসীরা বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যায় । এ চিত্র কাঠের উপর সাঁটা হয় বলে সঙ্গে নেয়া অসম্ভব । কাজেই সেই সময় রাস্তায় প্রায়ই পরিত্যাক্ত কাঠের চিত্র দেখা যেত । অনেক চিত্র রান্না ঘরের জ্বালানী হিসেবে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় । সেই সময় ইয়াং লিউ ছিনের সব নববর্ষ উদযাপনী চিত্রেরদোকান বন্ধ হয় ।

    ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর ইয়াং লিউ ছিনের কাঠের চিত্র পুনরুদ্ধার করা হয় । বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকার লোক সংস্কৃতি সংরক্ষণের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্চে । সরকার ইয়াং লিউ ছিনের নববর্ষ উদযাপনী কাঠের চিত্রকে দেশের বৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ করে । অনেক চিত্রশিল্পী সরকারের আর্থিক সাহায্যে কাজ করছেন ।

    আমাদের সংবাদদাতা ইয়াং লিউ ছিনের বিখ্যাত চিত্র শিল্পী চান খে সেন ও চান কে ছিয়ানের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । তারা দুজন আপন ভাই , স্থানীয় মানুষ এ দুই ভাইকে ' কাঠচিত্র চান ' ডাকেন । চান কে ছিয়ান আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , বেশ কয়েক বছর আগে থেকে তারা দুজন সরকারের আর্থিক সাহায্য পেয়ে আসছেন । ২০০৩ সালের শেষ দিকে সরকারের আর্থিক বরাদ্দে ইয়াং লিউ ছিন নববর্ষ উদযাপনী চিত্র ভবন প্রতিষ্ঠিত হয় । আমরা দুই ভাইয়ের আঁকা ছবিকে এ ভবনে স্থান করে দিয়েছি । কাঠ চিত্রের মান উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বিক্রির পরিমানও বাড়ছে । চান কে ছিয়ান বলেন , ১৯৯৩ সাল থেকে নববর্ষ উদযাপনী চিত্রের পরিমান বাড়তে শুরু করে । প্রথম দিকে শুধু তিন –চারজন আঁকতেন । এখন ইয়াং লিউ ছিন মহকুমায় সতের –আঠারোজন চিত্রকর্মী এ কাঠ চিত্র আঁকেন । এত বেশি লোক আকঁলেও বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না । এখন আমাদের মহকুমায় কয়েক ডজন পরিবারের কয়েক শ' লোক এ ছবি আঁকছেন । আগের একটি কাঠচিত্রের দাম বিশ ইউয়ান থেকে সত্তর-আশি ইউয়ান ছিল , এখন বাজারের দাম দ্বিগুন –তিনগুন বেড়েছে ।

    চান কে ছিয়ান আরো বলেন , এখন ইয়াং লিউ ছিনের নববর্ষ উদযাপনী কাঠচিত্র ইতোমধ্যে থিয়েন চিং শহরের একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক পণ্যে পরিণত হয়েছে । ২০০৪ সালে ইয়াং লিউ ছিন নববর্ষ উদযাপনী চিত্র সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় । অতীতে চিত্রশিল্পীরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন না বরং ছবি আঁকার কৌশল গোপন রাখার চেষ্টা করতেন । এখন চিত্রশিল্পীরা সমিতির অধিবেশনে স্বেচ্ছায় অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এবং তরুণদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনা করেন । ইয়াং লিউ ছিনের নববর্ষ উদযাপনী কাঠচিত্র বিদেশেও প্রদর্শিত হয়েছে । থিয়েন চিন শহরের সংস্কৃতিক ব্যুরোর কর্মকর্তা তিন ছুন লি বলেন , ইয়াং লিউ ছিনের নববর্ষ উদযাপনী কাঠ চিত্র সংরক্ষণের জন্য সরকার বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে । পরবর্তীকালে সরকার এ ঐতিহ্যিক চিত্রশিল্প সংরক্ষণের উপর আরো বেশি গুরুত্ব দেবে । এ বছর ইয়াং লিউ ছিনে নববর্ষ উদযাপনী চিত্রশিল্পের একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হবে । এ জাদুঘরে সেরা নববর্ষ উদযাপনী চিত্র এবং এ চিত্র সম্পর্কিত সব ধরনের রীতিনীতি প্রদর্শিত হবে । জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর ইয়াং লিউ ছিনে এক নতুন চারুকলা ভবন প্রতিষ্ঠিত হবে । তিন ছুন লি আরো বলেন , নববর্ষ উদযাপনী চিত্রশিল্প থিয়েন চিন শহরের সংস্কৃতি শিল্পের একটি অংশ । বতর্মানে ইয়াং লিউ ছিনে ৫০টি কাঠচিত্রের দোকান রয়েছে । এ ৫০টি দোকানের চিত্রশিল্পীরা প্রতি বছর ৩০ হাজার চিত্র আঁকতে পারেন। ইয়াং লিউ ছিন মহকুমার এই বৈশিষ্ট্যময় চিত্রশিল্প স্থানীয় পর্যটন শিল্প ও অথর্নীতির প্রসারও তরান্বিত করেছে ।