৫৫ বছর বয়স্ক মার্কিন নাগরিক জোসেফ বারবারিস একজন ফটোগ্রাফার ছিলেন । একটি আকস্মিক সুযোগের কারণে তিনি তাঁর চাকরি ছেড়ে দিয়ে মধ্য চীনের হোনান প্রদেশের চেংচৌ শহরের হোনান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে একজন ইংরেজী শিক্ষকে পরিণত হয়েছেন । আজকের অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদেরকে জোসেফ বারবারিসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো।
জোসেফ বারবারিস যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিদা অঙ্গরাজ্যের নাগরিক । তিনি একজন পেশাগত ফোটোগ্রাফার ছিলেন । তিনি পর্যটন খুবই পছন্দ করেন । তাঁর ভ্রমণ করা অনেক দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে এশিয়ার দেশগুলো তার বেশ ভালো লাগে । সুযোগ পেয়ে তিনি ইনটারনেটের মাধ্যমে একটি চীনা কমিউনিটিতে প্রবেশ করেন এবং তখন থেকেই তার চীনে আসার জন্য আশাআকাঙ্খার শুরু । তিনি বলেন, এক বছর ইনটারনেট যোগাযোগের পর আমি মনে করি চীনারা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক । চীনের দ্রুত উন্নয়নের প্রতি আমি গভীর আগ্রহী । এ জন্য আমি চীনে এসেছি । আমি যুক্তরাষ্ট্রের বাড়ি ও গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছি এবং আমার চাকরিও ছেড়ে দিয়েছি । আমি মনে করি চীনে শুধু এক মাস থেকে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি তুলবো । এভাবে ২০০৬ সালের গ্রীষ্মকালে তিনি একাই চীনে এসেছেন । তবে আসার পর তিনি চীনে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী শিক্ষকের চাকরিও খুঁজে পেয়েছেন । সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি চীনকে আরও বেশি ভালবাসতে শুরু করেছেন । তাঁর চোখে চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন বিদেশীদের জন্য বিরাট উন্নয়নের সুযোগ এনে দিয়েছে এবং চীনাদের আন্তরিকতায় তিনি যেন নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন । ২০০৬ সালের বড় দিন আসার সময় তিনি চীনা বন্ধুদের ধন্যবাদ জানার জন্য একটি তাত্পর্যসম্পন্ন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন ।
চীনে আসার পর আমার সহকর্মীরা ভালভাবে আমার যত্ন নেন এবং অনেক সাহায্য করেন । এ জন্য এ গুরুত্বপূর্ণ উত্সবে আমি চীনের একটি পরিবার যাদের সাহায্য প্রয়োজন তাদের বাসায় গিয়ে তাদের সঙ্গে উত্সব উদযাপন করবো এবং তাদেরকে আমাদের বড় দিনের অভিনন্দন জানাবো ।
সহকর্মীদের সাহায্যে তিনি হোনান প্রদেশের সিনমি শহরের পাহাড়ী অঞ্চলের একটি পরিবারে যান । জোসেফ বলেন, ২০০৬ সালের বড় দিনের কথা তিনি সারা জীবন ভুলবেন না । কারণ তখন থেকে তিনি পাহাড়ী অঞ্চলের একটি পরিবারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেন । এ পরিবারের দু সন্তানের নাম ফেং সিয়াও ইয়ান এবং ফেং সিয়াও লেই । তাদের বাবা মা নেই । জীবনযাপনের দায়িত্ব বয়স্ক দাদার ওপর । প্রথমবার তাদের সঙ্গে দেখার কথা সম্পর্কে জোসেফ বলেন, প্রথমবারের মতো সিয়াও লেই'র সঙ্গে দেখার সময় তার মুখে কোনো হাসি ছিল না । আমার উপহার গ্রহণের সময়ও কোনো হাসিখুশি দেখি নি । আমি তার বোন সিয়াও ইয়ানকে জিজ্ঞেস করার পর বুঝতে পারি যে, এর আগে সিয়াও লেইও প্রাণচঞ্চল একটি ছেলে ছিল । তবে বাবা মা হারানোর ফলে তার মনে অনেক দুঃখ । আমি তাকে পুনরায় হাসানোর জন্য চেষ্টা করতে থাকি ।
২০০৬ সালের বড় দিন জোসেফ এ দুটি ছেলে ও মেয়ের জন্য অনেক নতুন কাপড়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, খাদ্যবস্তু ও কিছু টাকা নিয়ে আসেন । তখন থেকে তিনি প্রতি মাসে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন এবং সন্তানদের জীবনযাপন ও লেখাপড়াকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেন । জোসেফের যত্ন ও সাহায্যে সন্তানদের মুখে পুনরায় হাসি খুশি দেখা যায় এবং তারা আরও প্রাণচঞ্চল ও আস্থবান হয়ে উঠেছে । এ পরিবারের ছেলে ফেং সিয়াও লেই জোসেফের কাছে লেখা চিঠিতে বলেছে , আমি ভালভাবে লেখাপড়া করবো এবং আপনার মতো অন্যকে সাহায্য করবো । আমার সবকিছু দিয়ে আমার মতো দরিদ্র লোকদের সাহায্য করবো । সিয়াও লেই'র স্কুলে বই ও শিক্ষা সরঞ্জামের চাহিদা জানার পর জোসেফ হোনান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করে স্কুলের শিশুদের জন্য নানা ধরনের শিক্ষামূলক সরঞ্জাম দান করেন এবং একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন । একটি ট্রাকেবই ও শিক্ষা সরঞ্জাম পাহাড়ের স্কুলে পৌঁছানোর সময় স্কুলের প্রধান লিউ কুয়ান চুন অতি আনন্দের আতিসয্যে কেঁদে ফেলেন । তিনি বলেন, জোসেফ আমাদের স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের সাহায্য দিয়েছেন । আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই । তিনি একজন বিদেশী হিসেবে চীনে এসে একটি অপরিচিত পরিবারকে সাহায্য দিয়েছেন, এতে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ।
জোসেফের আচরণ ছাত্র ছাত্রীদের জনপ্রিয়তা অর্জন করার পাশাপাশি তাঁর সহকর্মীরাও প্রভাবিত হয়েছে । লু সিন ইং জোসেফের চীনা সহকর্মী। জোসেফের আচরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, জোসেফ আমাদের স্কুলের বিদেশী শিক্ষক হিসেবে এখানে দেড় বছর হলো এসেছেন । পরিশ্রমের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি তিনি বদান্যতা ও দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চমত্কার কাজ করেছেন ।একজন বিদেশী হিসেবে জোসেফ চীনে আসার কম সময়ের মধ্যে দরিদ্র শিশুদের জন্য এত বেশি কাজ করেছেন এবং চীনের সমাজের জন্য ইতিবাচক অবদান রেখেছেন, তা খুব কঠিন কাজ ।
২০০৭ সালে হোনান প্রাদেশিক সরকার জোসেফকে হুয়াংহো নদী মৈত্রী পুরস্কার দিয়েছেন । হোনান প্রদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমাজের অগ্রগতির ক্ষেত্রে চমত্কার অবদান রাখা বিদেশী বন্ধু, বিশেষজ্ঞ ও প্রাবাসী চীনা এবং হংকং ও ম্যাকাওয়ের বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। জোসেফ বলেন, তিনি চীনা জনগণের সঙ্গে ভালবাসা বিনিময় করবেন এবং অন্যদের সঙ্গে তা উপভোগ করবেন ।
|