ভারতের পশ্চিম বাংলার ধানারপারা জেলার শ্রোতা কমল চৌধুরী তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনে প্রতি বর্গ কিলোমিটায় কত লোক বসবাস করে?
উত্তরে বলছি, আপনারা জানেন, চীন একটি বিশাল দেশ। সুতরাং বিভিন্ন জায়গায় জনসংখ্যার ঘনত্ব ভিন্ন ভিন্ন। চীনের উপকূলীয় অঞ্চলে জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশী। চীনের সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত কম। চীনের পূবার্ঞ্চলের জনসংখ্যার ঘনত্ব চীনের পশ্চিমাঞ্চলের চাইতে কমপক্ষেআট গুণ বেশী। পঞ্চম জাতীয় আদমশুমারী অনুযায়ী, চীনের পূর্বাঞ্চলে অথাত চীনের উন্নত অঞ্চলে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৫২.৩ জন লোক বসবাস করে, মধ্য অঞ্চলে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৬২.২ জন লোক বসবাস করে এবং পশ্চিমাঞ্চলে অতার্ত চীনের অনুন্নত অঞ্চলে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫১.৩ জন লোক বস করে। চীনের সিছুয়েন , চিয়াংসু এবং হোনান প্রদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশী । কিন্তু ছিনহাই প্রদেশ , আন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, সিনজিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে লোক সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম।
সিরাজগঞ্জ জেলার শ্রোতা মাহমুদা সুলতানা মিতু তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনে কি বিনা পয়সায় শিক্ষাদান করা?
উত্তরে বলছি. চীনের সংবিধানে নির্দিষ্ট হয় যে, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার আছে। চীনে নবম শ্রেণী পযর্ন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক। এখনো চীনে একেবারে বিনা পয়সায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু চীনের কোন কোন গ্রামাঞ্চলে নবম শ্রেণী পযর্ন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষার ফি মওকুফ করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কেবল বইয়ের ফি দিতে হয়।
ঝিনাইদহ জেলার শ্রোতা আন্দুল বাড়িয়া তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীন দেশে ভূমিহীন জন গোষ্ঠি আছে কি?
উত্তরে বলছি, চীন একটি সমাজতান্ত্রীক দেশ। ভূমি কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে গণসরকার গ্রামাঞ্চলে ভূমি সংস্কার শুরু করেন। তিন বছর পর, ১৯৫২ সালের শেষ দিকে, ভূমি সংস্কার সফল হয়। যে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা দীর্ঘকাল ধরে কৃষির উন্নয়নে অন্তরায় হয়ে ছিল তার বিলোপ ঘটানো হয় এবং জমিদার ও ধনী কৃষকদের সাড়ে এগারো থেকে বারো কোটি একর জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়। সুতরাং চীন দেশে ভূমিহীন জন গোষ্ঠি নেই।
বগুড়া জেলার শ্রোতা তাছলিমা আক্তার লিমা তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনের কোন জায়গায় বেশী চা চাষ হয়?
উত্তরে বলছি, চীনেই সবর্প্রথম চা গাছের আবিষ্কার ও চা উত্পাদন শুরু হয়। চীনে নানা ধরনের চা উত্পন্ন হয়, তবে তৈরীর পদ্ধতি ভেঙে এগুলোকে দুভাভে ভাগ করা যায়। সবুজ চা ও লাল চা। চীনে সবচেয়ে বেশি চা হয় ছাংজিয়াং উপত্যকায় এবং উপত্যকার দক্ষিণ দিকের প্রদেশগুলোর পাবর্ত্য অঞ্চলে, যেখানে মাটি লাল আর হলুদ। এ ছাড়াও রয়েছে হাংযৌয়ের লোংজিং চা, আনহুইয়ের লাল চা, ইয়ুন্নানের লাল চা ও সবুজ চা। এ সব চা দেশ-বিদেশে বিখ্যাত। চীনের চা পৃথিবীর পাঁচ মহাদেশের প্রায় একশটি দেশ ও অঞ্চলে রপ্তানী করা হচ্ছে।
যশোর জেলার শ্রোতা রোসেল রানা সজিব তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, কুরবানী ঈদের দিনে চীনের মুসলমানরা কি গরু জবাই করেন?
উত্তরে বলছি, হ্যাঁ ঈদের দিনে চীনের মুলমানরা গরু জবাই করেন। তাঁরা ঈদ উদযাপনকালে আনন্দে মেতে উঠেন। যারা সরকারের চমর্চারী তারা তিন দিনের ছুটিও উপভোগ করতে পারেন। এক কথায় পৃথিবীর মুসলমানরা যেভাবে ঈদের দিন উদযাপন করেন চীনের মুসলমানরাও সেভাবে উদযাপন করেন।
ঢাকা জেলার শ্রোতা মিলন তাঁর চিঠিতে জিজ্ঞেস করেছেন, চীনা মহিলারা কি পুরুষের মতো চাকরি করেন?
উত্তরে বলছি, চীনে মহিলা ও পুরুষের সামাজিক অবস্থান সমান। তারা বিভিন্ন চাকরি করেন। চীনে মহিলাকে " অধের্ক আকাশ বলে "বলে গণ্য করা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষদের মতো মহিলারা কাজ করছেন। চীন আন্তর্জাতিক বেতারের উদাহরণ ধরা যাক, বতর্মানে চীন আন্তর্জাতিক বেতারে প্রায় ৬০ শতাংশ মহিলা কর্মী।আমাদের বাংলা বিভাগে অধিকাংশ কর্মী মহিলা। এক কথায়, চীনের গঠনকাজে মাহিলাদের অবদান প্রসংশনীয়।
বাংলাদেশের কুমিলা জেলার শ্রোতা ইসলাম মোহম্মেদ হিমু তার চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশের মতো চীনে কী রিকশাকে প্রধান যানবাহন হিসেবে ব্যবহার করা হয় ?
উত্তরে বলছি , বাংলাদেশের মতো চীনে রিকশাকে প্রধান যানবাহন হিসেবে ব্যবহার করা হয়না । কিন্তু চীনের কোনো কোনো শহরে এখনও রিকশা দেখা যায়। সাধারণত শহরের উপকন্ঠে এ সব রিকশা দেখা যায় । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের পযর্টন শিল্পের উন্নতি দ্রুততর হওয়ার পাশাপাশি চীনের অনেক শহরের দশর্নীয়স্থানে ব্যবহার করা হয়। যেমন রাজধানী পেইচিংএর কেন্দ্র স্থলে অনেক দেশী-বিদেশী পযর্টক রিকশায় বসে বসে চার দিকের দর্শ্য উপভোগ করে । পযর্টকদের মতে রিকশায় বসে প্রাচীন শহরের দৃশ্য দেখে আরামদায়ক ।
যশোর জেলার শ্রোতা আরিফা আলম দোলন তাঁর চিঠিতে জানতে চেয়েছেন, চীনে কি প্রতি বছর বৃক্ষ রোপন অভিযান চালানো হয়?
প্রিয় বন্ধু, প্রতি বছর ১২ মার্চ চীনের বৃক্ষ রোপন দিবস। ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে চীনের পঞ্চম জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির অধিবেশনে প্রত্যেক বছর ১২ মার্চকে চীনের বৃক্ষ রোপন দিবস হিসেবে নির্ধারন করা হয়। ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে পঞ্চম জাতীয় গণ কংগ্রেসে " বিনা মূল্যে গণ বৃক্ষ রোপন অভিযান " সর্ম্পকিত প্রস্তাব" অনুমোদিত হয়েছে। ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর মাসের পর বিনা মূল্যে গণ বৃক্ষ রোপন অভিযানে মোট ৩৫ বিলিয়ন বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে। তা ছাড়া, ইয়াংসী নদীর মধ্য ও নিম্ন অববাহিকায় বন সংরক্ষণের প্রকল্পও চালু হয়েছে। ২০০০ সালের শেষ নাগাদ বৃক্ষায়নের আয়তন চীনের মোট আয়তনের ১৬.৫৫ শতাংশ হয়েছিল। এখানে উল্লেখ করতে হবে যে, সি আই আর কর্মীরা প্রতি বছর বৃক্ষ রোপন দিবসে অংশ নেয়।
প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, এতক্ষণ আজকের মুখোমুখি শুনলেন। মুখোমুখি অনুষ্ঠান আপনাদের নিজস্ব অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে আপনাদের নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়। সুতরাং চীন সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চিঠি লিখে জানাবেন । আমরা মুখোমুখি অনুষ্ঠানে আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেবো। আজকের মুখোমুখি অনুষ্ঠান আজকের মতো এখানে বিদায়। সবাই ভাল থাকুন ,সুস্থ থাকুন । আগামী সপ্তাহে আবার কথা হবে ।
|