v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-04-01 20:52:42    
মঙ্গোলীয় নারী মালিক সেরেহেন

cri

    অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল উত্তর চীনে অবস্থিত । এটা মঙ্গোলীয় জাতি অধ্যুষিত অঞ্চল । সংবাদদাতা এই অঞ্চলের সিলিংকেলা তৃণভূমিতে গিয়ে একটি গার্মেন্টস কারখানার নারী মালিক সেরেহেনের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । আজ এই অনুষ্ঠানে মালিক সেরেহেন ও তার পরিবার পরিজনের সুখী জীবন সম্পর্কে আপনাদের জানাচ্ছি আমি…

সেরেহেনের গার্মেন্টস কারখানা সিলিংকেলা বিভাগের পশ্চিম উচুমোছিং জেলার একটি রাস্তায় অবস্থিত । দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল কারখানার সেলাই যন্ত্রের গম গম আওয়াজ ।

কারখানার মালিক সেরেহেন লম্বা নন । তিনি নিজের তৈরী মঙ্গোলীয় পোষাক পরলেন , মুখে মৃদু হাসি । তিনি আশাবাদী । কিন্তু কয়েক বছর আগে তিনিই অন্য রকম জীবনযাপন করতেন । তিনি ছিলেন পশুপালক । অন্যান্য মঙ্গোলীয় পশুপালকদের মতো যেখানে সেখানে ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন । পশুপালনের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে তিনি আবেগপূর্ণ কন্ঠে বললেন ।

আগে পশু পালন অঞ্চলে জলবায়ু উপযোগী ছিল এবং প্রচুর বৃষ্টি হতো । তখন বহু লোক পশু পালন করতেন ।

তখন সেরেহেনের পরিবারে ৭ সদস্য ছিলেন । তাদের ২৬০ হেক্টর তৃণভূমি ও ৩ শো'রও বেশি গরু ও ছাগল ছিল । তবুও তারা সচ্ছল ছিলেন না । কিন্তু ভালো জীবনযাপনের চিন্তাও ছিল না । এর পর তৃণভূমিতে জলবায়ু উষ্ণ হয়ে উঠেছে এবং গবাদি পশুর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে গিয়েছে । তৃণভূমির মরুকরণ দিন দিন তীব্র হয়ে উঠেছে । সেরেহেন ও তার পরিবারের সংসার দুরূহ হয়ে উঠল ।

১৯৯৭ সাল থেকে তৃণভূমিতে খরা শুরু হয় । বহু দিন অনাবৃষ্টি । গরু ও ছাগল চরানো খুব মুষ্কিল । সেরেহেনের স্বামী রোগে আক্রান্ত হলেন । বাড়িতে শ্রম শক্তির অভাব ছিল । সুতরাং তাদের সংসার কোনক্রমে চলতো ।

পরিবেশের অবনতি মোকাবেলা করার জন্য সিলিংকেলা জেলায় তৃণভূমির পরিবেশ সুরক্ষার একটি কর্মসূচী প্রণয়ন করা হয় । এই কর্মসূচী অনুযায়ী , তৃণভূমিতে যেখানে পরিবেশ ভাল , সেখানেই পশু পালকদের পুনর্বাসন করা হয় । বিপুল সংখ্যক পশুপালক শহরে স্থানান্তরিত হওয়ার পর ব্যবসা শুরু করেছেন । ২০০০ সালে সেরেহেন ও তার পরিবার পরিজন তৃণভূমি থেকে পশ্চিম উচুমোছি জেলায় স্থানান্তরিত হন । পশু পালনের জীবনধারা শেষ । প্রথমে তিনি নতুন পরিবেশের সঙ্গে অভ্যস্ত ছিলেন না ।

তিনি খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন । শহরে থাকবেন । কিন্তু তিনি অশিক্ষিত । কী চাকরি করতে পারবেন ? তার বাবা তাকে উত্সাহ দিলেন । বাবা বলেন , শহরে রেস্তোরাঁয় চাকরি করলেও আয় করা যাবে ।

তিনি কিছু সেলাইয়ের কৌশল জানতেন । বাবার উত্সাহে তিনি ও তার ছোট বোন নারান একটি পোষাক সেলাই-এর কারখানা গড়ে তুলেছেন । প্রথমে তাদের ব্যবসার খুব অসুবিধা হতো । তাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না । শহরে চাকরি ও ব্যবসার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সেরেহেন বলেন ,

শহরে আসার প্রথম দিকে তিনি শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হন নি । আগে যখন তিনি পশু পালন অঞ্চলে ছিলেন , তখন পানি ও জ্বালানী ব্যবহারের কোনো খরচ লাগতো না । এখন শহরে দৈনন্দিন জীবনযাপনে সব কিছু খরচ লাগছে ।

ব্যবসার অসুবিধার সামনে সেরেহেন ও তার ছোট বোন একেবারেই হতাশ হন নি । ব্যবসা বাড়ানোর জন্য তারা ক্রেতাদের প্রতি পুরো আন্তরিকতা প্রকাশ করতে থাকেন । ফলে তারা ক্রেতাদের আস্থা জয় করেছেন । ছোট বোন নারান বলেন ,

প্রথম দিকে অভিজ্ঞতা ও নৈপুণ্যের অভাবের দরুণ ক্রেতাদের জন্য তাদের প্রস্তুতকৃত পোষাক উপযোগী ছিল না । ক্রেতারা খুব রেগে যেতো । তখন সেরেহেন ও ছোট বোন খুব সহিষ্ণুতা ব্যক্ত করতেন । ক্রেতাদের জন্য পোষাক আবার বানানোর চেষ্টা করতেন । ধীরে ধীরে ক্রেতারা তাদের কাজ খুব পছন্দ করেন । যারা তাদের কারখানার জন্য কাপড়সহ নানা রকম সামগ্রী সরবরাহ করে , তারাও সেরেহেন ও তার ছোট বোনকে খুব সমর্থন করে । ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সাহায্য ও আস্থা প্রসঙ্গে ছোট বোন নারান বলেন ,

গার্মেন্টস কপারখানা চালু করার প্রথম দিকে পুঁজির অভাবের কারণে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বেশি কাপড় কেনাও যেতো না । কিন্তু ব্যবসায়ীরা তার বড় বোনকে খুব বিশ্বাস করতেন । তারা পোষাক বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত কারখানাকে বিনা পয়সায় কাপড় সরবরাহ করতেন । ফলে কারখানাটি বাধা-বিঘ্ন কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে ।

কয়েক বছর হয়ে গেল । সেরেহেন ও তার ছোট বোনের গার্মেন্টস কারখানার ব্যবসা অধিক থেকে অধিকতর ভাল হয়ে উঠেছে । বর্তমানে তাদের গার্মেন্টস কারখানা দুই ভাগে বিভক্ত । এক ভাগের কাজ পোষাক প্রস্তুত করা এবং অন্য একটি হল পোষাক বিক্রি করা । এখন তাদের কারখানা সম্প্রসারিত হয়েছে । উত্পাদন বাড়ানোর চাহিদা মোটানোর জন্য আরো বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন । ফলে তারা পশু পালন অঞ্চল থেকে ১৫জন অল্পবয়সীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছেন । দালান বাজার নতুন শ্রমিকদের অন্যতম । সে বলল,

কারখানার শ্রমিক হওয়ার পর তার জীবনধারা অনেক পরিবর্তিত হয়েছে । সে মালিক ও প্রবীণ শ্রমিকদের কাছ থেকে অনেক প্রযুক্তি শিখে নিয়েছে । সে ও অন্যান্য অল্পবয়সীরা আয় করেছে , দক্ষতা অর্জন করেছে । তারা খুব খুশি ।