v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-04-01 20:39:02    
ফান হুইতি ও ওয়াং হুইইং

cri
    ফান হুইতি একজন সাধারণ গ্রামীন নারী , ওয়াং হুইইং একজন কর্মচ্যুত শ্রমিক । তারা পরস্পর আপন লোক নন । তবে তারা পরস্পরকে আপন বলে মনে করেন । ২৩ বছর আগে ফান হুইতি পানিতে নিমজ্জিত ওয়াং হুইইংকে উদ্ধার করেন । তার পর ২৩ বছরের মধ্যে দুজনের কখনো দেখা হয়নি । ২০০৭ সালের ২৭ আগষ্ট যখন দুজনের দেখা হয় তখন ফান হুইতি গুরুতর রোগে আক্রান্ত । গুরুতর অবস্থারত ফাং হুইতিকে ওয়াং হুইইং বলেন , ভিক্ষুক হতে হলেও আমি আপনার চিকিত্সা করাব।

    ১৯৮৪ সালের গ্রীষ্মকালের এক দিন বিকেলে কুয়াং তুঙ প্রদেশের গ্রামাঞ্চলের কৃষকরা নদীতে মাছ ধরছিলেন । মার বাধা উপেক্ষা করে ওয়াং হুইইং ছোট বোনকে নিয়ে নদীর ধারে মাছ শিকার দেখতে গেল।

    নদীতে একটি সোনালী রঙের মাছ চলাফেরা করছিল দেখে হুইইয়ং হাত বাড়িয়ে মাছ ধরতে লাগল । মাছটা বারবার হুইইয়ংয়ের হাত থেকে পালিয়ে যায় এবং হুইইংকে নদীর মাঝখানে টেনে নিয়ে যায় । নদীর মাঝখানের পানি হুইইংয়ের বুক পর্যন্ত গভীর । তাহলেও ১৪ বছর বয়সী হুইইং বিপদের আশংকা অনুভব করতে পারছিল না । হঠাত শান্ত নদীতে এক ঘূর্ণস্রোত হওয়ায় হুইইং ভয়ে নদীতে পড়ে গেল ।

    হুইইং নদী থেকে উঠে দাঁড়বার চেষ্টা করেও সফল হল না । কয়েকবার পানি খেয়ে হুইইং নদীতে ডুবে যাচ্ছিল । ঠিক এই বিপদের সময় এক রোগা ছোট মেয়ে নদীতে ঝাঁপ দিল হুইইংকে উদ্ধার করতে । মেয়েটির নাম ফান হুইতি, তার বয়স মাত্র ১২ বছর ছিল । একবার, দুবার ,অবশেষে নদীতে তিনবার ঝাঁপিয়ে পড়লে ফান হুইতি ঘূর্ণস্রোত থেকে হুইইংকে উদ্ধার করতে সক্ষম হলো।

    এক বছর পর হুইইং বাবা মা'র সঙ্গে চুহাই শহরে বসবাস করতে গেল । বিদায়ের সময়ে হুইইং নিজের নতুন বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর হুইতিকে দিয়ে দিল । কিন্তু এর পর দুজনের মধ্যে আর যোগাযোগ হল না ।

    গত ২৩ বছর ধরে হুইতির কথা হুইইং কখনো ভোলেননি । হুইইং বলেন, এই ২৩ বছরে যখন আমার সুখের বা অসুখের কোনো কিছু হয় তখন হুইতির কথা আমার মনে পড়ে । হুইইং একটি ছোট দোকানের মালিক । দোকানটা চালিয়ে হুইইং নিজের সংসার চালাতেন । অভিজ্ঞতার অভাবে ব্যবসায়লোকসান হল । এ জন্য হুইইংয়ের দুঃখ হলো। কিন্তু এ সময় হুইতির কথা তার মনে পড়ে । হুইইং মনে করলেন , আমার প্রাণ তো হুইতি দিলেন । প্রাণের চেয়ে এটুকু কষ্ট ও অসুবিধা কিছু নয় । ওয়াং হুইইং নিজের কথাগুলো নিজের হৃদয়ের গভীরে রেখে দিলেন । তিনি বলেন, বহু বছর ধরে এমন একটি দৃশ্য বারবার তার চোখের সামনে ভেসে আসত : তিনি মোটা অংকের টাকাপয়সা হুইতির হাতে হস্তান্তর করলেন । যাতে হুইতি ও তার পরিবার সুখী জীবন যাপন শুরু করতে পারেন । কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল এই যে , ব্যবসার ব্যর্থতায় সে এখন আর্থিক অসুবিধায় নিমজ্জিত । স্বামীর অতি অল্প বেতনের ওপর নির্ভর করে তাদের সংসার মোটামুটি চলত । এমন অবস্থার সম্মুখীন হলেও হুইইং সবসময় ভাবতেন, ফান হুইতির অসুবিধা থাকলে আমি যে ভাবেই হোকতাকে সাহায্য করবই।

    ২০০৭ সালের আগষ্ট মাসের এক দিন ওয়াং হুইইং হঠাত মনে করলেন যে , ২৩ বছর পার হয়ে গেল । যদি আমি কোনদিন সফল না হই , তাহলে আমি একদিনও তার সঙ্গে দেখা করতে পারবো না ? আর যদি কোনো দিনও আমার সফলতা না আসে তার মানে চিরদিনই তার সঙ্গে দেখা হবে না ? না তা হবে না ।

    জন্মস্থান লিয়েনচৌ ত্যাগের ২৩ বছর পর ২৫ আগষ্ট ফান হুইতিকে হুইইংয়ের দেখার খুব ইচ্ছা হল । অনেক চেষ্টার পর অবশেষে ২৭ আগষ্ট ওয়াং হুইইং ফান হুইতির বাড়ির ঠিকানা পেলেন এবং উপহার নিয়ে তাকে দেখতে এলেন ।

    হুইতির সঙ্গে আলিঙ্গনকরবই আমি আসার আগে হুইইং ভাবলেন । কিন্তু হুইতির বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্র হুইইং আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন । তিনি দেখলেন , হুইতির ম্লান মুখে কালো রঙের ওষুধ লাগানো ছিল । হুইতি অত্যন্ত ব্যথা ও দুঃখ ভোগ করছিলেন বলে হুইইং মনে করলেন । জিজ্ঞেস করে হুইইং জানতে পারলেন যে , হুইতির নাকের ক্যান্সার হয়েছে । ডাক্তার তার কাছে কুয়াংচৌ শহরে চিকিত্সা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন । আর্থিক অসুবিধার কারণে তিনি কুয়াংচৌ যাওয়ার সুযোগ ত্যাগ করেন এবং ভেষজ ওষুধ ব্যবহার শুরু করলেন । যাতে ব্যথা কমে যায় ।

    খুব আশ্চর্য যে, ওয়াং হুইইং আসার দু দিন আগে ফান হুইতিন এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বামীকে বললেন , আমি যে মেয়েকে নদী থেকে উদ্ধার করেছি সে মেয়ে এখন কেমন আছে । তাকে আমার একবার দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে । ফান হুইতির স্বামী বলেন , আল্লাহর দোহাই ২৩ বছর ধরে যার সঙ্গে দেখা হয়নি মাত্র দুদিন পর সেই "ছোট মেয়ে আকস্মিকভাবে তাদের সামনে হাজির হলেন ।

    ফান হুইতির অবস্থা জেনে ফেলে ওয়াং হুইইং এক মিনিটও নষ্ট করতে চান না । তিনি ফান হুইতিকে এখুনি তার সঙ্গে চু হাই শহরে চিকিত্সা করতে যেতে বললেন । হুইইংকে কষ্ট দিতে চান না বলে হুইতি চু হাই যেতে রাজি হলেন না । হুইইং দৃঢ়কন্ঠে বলেন , আপনাকে বহন করেই চু হাইতে নিয়ে যাব । সবার পরামর্শে হুইতি হুইইংয়ের সাথে চু হাইতে চলে যান ।

    চু হাই এসে হুইতি চু হাই হাসপাতালে চিকিত্সা গ্রহণ শুরু করেন । এ সময় হুইইংয়ের কাছে মাত্র কয়েকশ' ইউয়ান বাকি । হুইতির চিকিত্সার অগ্রিমের জন্যও যথেষ্ট নয় । হুইইং ও হুইতি দুজনের কাহিনী শুনে হাসপাতাল বিশেষভাবে হুইতিকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিল ।

    বাড়িতে ফিরে হুইইং সব কথা স্বামীকে জানালেন । তিনি বললেন , বাড়ি বিক্রি করা হোক, ভিক্ষা করা হোক , আমি হুইতির চিকিত্সা করাবই । তুমি রাজি না হলে আমরা ছাড়াছাড়ি করব । তিনি ভাবতে পারেন নি যে, স্বামী তার সিদ্ধান্ত সমর্থন করতে পারেন ।

    হাসপাতাল ও সমাজের সাহায্যে হুইতির চিকিত্সায় অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে। । দু'মাস পর হুইতির স্বামী চু হাই এসে যখন হুইতির অবস্থা দেখেন তখন তিনি বিশ্বাস করতে পারেন না এবং চিনতে পারেন না যে , সে তার স্ত্রী হুইতি? হাসি পুনরায় তার মুখে ফিরে এসেছে । ক্যান্সারের সেল সরানো হয়েছে ,বলা যায়, তিনি আরোগ্য হয়েছেন । পরবর্তীকালের প্রতি মাসে একবার করে রেডিওথেরাপির চিকিত্সা গ্রহণ করলে যথেষ্ট ।

    ওয়াং হুইইং মনে করেন, অসংখ্য বিবেকবান মানুষ হুইতির প্রাণ বাঁচিয়েছেন । ফান হুইতি হাসপাতাল বের হলেন । হুইইং খুশি হুইইং আনন্দিত । ২৩ বছর পর তিনি তাঁর ধন্য মানুষের ঋণ পরিশোধ করতে পেরেছেন । তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, হুইতির পুনর্জন্ম হল আমারও পুনর্জন্ম হল ।