পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় হান , চান , হুই , সালা ও মঙ্গোলিয়াসহ অনেক সংখ্যালঘু জাতি বাস করে । প্রতিটি জাতিরই নিজের কোন না কোন বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার আছে । সাম্প্রতি বছরগুলোতে ছিংহাই প্রাদেশিক সরকার বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং সাফল্য অর্জন করেছে ।
ছিংহাই প্রদেশের হোহুয়ান অঞ্চলের লোকসংগীত ' হুয়া আর ' -র কথা ও সুর বৈশিষ্ট্যময় । লোকসংগীতটি ছিংহাই প্রদেশের অন্যতম বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ।
ছিংহাই প্রদেশের সাংস্কৃতিক ব্যুরোর সামাজিক বিভাগের প্রধান লি সিয়াও ইয়েনের প্রধান দায়িত্ব হলো এ প্রদেশের বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ করা । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , ছিংহাই প্রদেশের বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে হুয়া আরসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘুজাতির লোকসংগীত ও লোকনৃত্য , সংখ্যালঘু জাতির অপেরা , রেশমী কাপড়ের ওপর বুদ্ধের চিত্র থান খা ও সংখ্যালঘু জাতির রীতিনীতি ও সামাজিক অনুষ্ঠান ।
লি সিয়াও ইয়েন বলেন , দেশের আধুনিকায়নের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি ছিংহাই প্রদেশের সাংস্কৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন হচ্ছে । বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারগুলোর প্রসার নানা ধরনের প্রতিকূল অবস্থার মুখে পড়ছে । কিছু মুখে মুখে প্রচার ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বিলুপ্তির পথে । তিনি বলেন , ছিংহাই প্রদেশের বিভিন্ন মহল এ অবস্থার জন্য উদ্বিগ্ন । প্রাদেশিক সরকার বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষার নানা ব্যবস্থা নিয়েছে । তিনি বলেন , ছিংহাই প্রাদেশিক সরকার বিশটিরও বেশি বিভাগ নিয়ে ছিংহাই বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ১১৭জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞকমিটি গঠন করেছে। এ বিশেষজ্ঞ কমিটির মধ্যে যেমন আছেন বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিত , তেমনি আছেন বিশিষ্ট লোকশিল্পীরা । ফলে বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সম্পদ জরীপের কাজ আরো সুবিধাজনক হয়েছে এবং এতে বিভিন্ন মহলের মতামত সংগ্রহ করা যাবে ।
ছিনহাই প্রাদেশিক পর্যায়ের সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে সারা প্রদেশের বেশির ভাগ বিভাগ ও জেলায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দের পরিচালিত বিষয়গত সাংস্কৃতিক উপরাধিকার সংরক্ষণের নেতৃ গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । তা ছাড়া, স্থানীয় সাংস্কৃতিক বিভাগগুলোকে নিয়ে বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ কার্যালয়ও গড়ে তোলা হয়েছে ।
২০০৩ সালের পর , সারা প্রদেশের প্রধান প্রধান ঐতিহ্যবাহী উত্সব এবং বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সম্পদ প্রদর্শন করার জন্য ছিনহাই প্রদেশ জাতীয় সাংস্কৃতিক পযর্টন উত্সবের আয়োজন করতে শুরু করে । প্রতি বছর এই আয়োজনে অজস্র মানুষ অংশ নেয় । ছিনহাই প্রদেশের রাজধানী সিনিন শহরের নাগরিক মাডাম সুয়েন সংবাদদাতাকে বললেন, তিনি প্রতি বছর সপরিবারে এ ধরনের সাংস্কৃতিক উত্সবে অংশ নেন । তিনি বলেন,
" আমার সন্তানরা যাতে ছিনহাই প্রদেশের সরস উত্তরাধিকার জানতে পারে সে জন্য প্রতি বছর আমি পরিবার নিয়ে এই সাংস্কৃতিক উত্সব দেখতে যায় । এ সংস্কৃতি আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে হারিয়ে যেতে পারে না বরং বংশক্রমিকভাবে তাকে বেঁচে থাকে হবে।"
সরকারের মনোযোগ ও জনসাধারণের সক্রিয় অংশ গ্রহণের ফলে ছিনহাই প্রদেশের বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণ কাজ ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ তা পেয়েছে এব ধারাবাহিক ও সার্বিক সংরক্ষণের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে । এর পাশাপাশি ছিনহাই প্রদেশ এই সংস্কৃতিকরাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকাভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছে । ২০০৬ সালে চীনের প্রকাশিত প্রথম কিস্তি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিষয়গত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার তালিকায় ছিনহাই প্রদেশের ১৯টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ।
|