v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-03-25 21:13:56    
এ বছরের কার্টুন ছবি ও এনিমেশনের প্রধান চরিত্র ইদুঁর

cri
    ৭ ফেব্রুয়ারী ছিল চীনের বসন্ত উত্সব । চীনের বসন্ত উত্সব চীনের চান্দ্র নববর্ষও বটে । চীনা পঞ্জিকায় প্রতি বারো বছরকে বারোটি প্রাণীর নামে ডাকা হয় । এ বারোটি প্রাণী হল ইঁদুর , গরু , বাঘ , খরগোশ , ড্রাগন ,সাপ ,ঘোড়া ,ছাগল, বানর , মোরগ , কুকুর ও শূকর। এ বারোটি প্রাণীর নামে নামকরণ করা বারোটি বছর চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে আসে। এ বারোটি প্রাণীর মধ্যে ইদুঁর প্রথম বলে চক্রাকারে ঘুরে আসা এ বছরটির নাম ইদুঁর বছর । ৭ ফেব্রুয়ারী ছিল চীনের ইঁদুর বর্ষের প্রথম দিন । চীনের বাজারে ইঁদুর বর্ষের স্মারক বস্তু ও উপহার প্রচুর পাওয়া যায় । এর সঙ্গে সঙ্গে ইঁদুর সম্পর্কিত কার্টুন ছবি , এনিমেশন , গান ও কবিতাও প্রচুর ।

    চীনে এক ধরনের কবিতার নাম সু লাই পাও । কবিতা পড়ার সময় অভিনয়ও করা হয় । কবিতার নামের প্রথম অক্ষর ' সু '-র উচ্চারণ আর ইঁদুরের উচ্চারণ একই । সুর আসল অর্থ হল গণনা। বসন্ত উত্সব উদযাপনের সময় এবার ইন্টারনেটে অভিনয়সহ কবিতা আবৃত্তির অনেকএনিমেশন ছবি ছাড়া হয় । একটি কবিতায় বলা হয় , ইঁদুর বর্ষে ইঁদুর আসে , ইঁদুর নিয়ে আসে সৌভাগ্য । ইঁদুর বর্ষের ভাগ্য গুনতে গুনতে জেনেছি সুস্বাস্থ্য ও আনন্দই সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য ।

    এ কবিতার এনিমেশন ছবিতে দুটি সোনালী রংয়ের ইঁদুর সংগীতের তালে তালে নাচে । ইঁদুর দুটির মাথা বড় , লেজ চিকণ । এ দুটি ইঁদুরের একটি ধনসম্পদের প্রতীক আর অন্যটি সুখী জীবনের প্রতীক । সবাই এ দুটি চঞ্চল ইঁদুরকে পছন্দ করেন । দর্শক ওয়াং মিং ই আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , আমি বসন্ত উত্সবের আগেই ইন্টারনেটে এ দুটি সোনালী ইঁদুর দেখেছি । ইঁদুর দুটি দেখতে সুন্দর । তাদেরকে দেখে আমার রূপকথার ইঁদুর মিকির কথা মনে পড়ে । আমি মনে করি সোনালী রংয়ের এ দুটি ইঁদুরও আমার জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসবে ।

    যুক্তরাষ্ট্রের কার্টুন ছবির ইঁদুর মিকি ও কার্টুন ছবি ' টম ও জেরি'র চালাক ইঁদুর জেরি চীনা শিশুদের পরিচিত । বিদেশের কার্টুন ছবির ইঁদুরের তুলনায় চীনের রচনা ও কার্টুন ছবির ইঁদুরগুলো জনপ্রিয় ছিল না । গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে একটি কার্টুন ছবিতেও বিড়াল ও ইঁদুরের লড়াইয়ের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । তবে ছবির ইঁদুরটি ছিল অলস ও ধূর্ত । অবশেষে ছোট বিড়াল সব ইঁদুর মেরে ফেলল।

    চীনের ঐতিহ্যিক সাহিত্যে ইঁদুরকে অলস ও লোভী এবং মানুষের শত্রু হিসেবে বর্ণনা করা হতো । চীনের একটি প্রবাদ হলো , ইঁদুর রাস্তায় বের হলে সবাই মার মার বলে হাঁকতে থাকে । কিন্তু গত শতাব্দীর আশির দশকে চীনের বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক চেন ইউয়েন চিয়ে ' সুক ও বেটার ভ্রমণকাহিনী ' শীর্ষক রূপকথায় একটি ইঁদুরের কাহিনী বণর্না করেছেন । তার এ রুপকথার কাহিনী হল সুক একটি ছোট ইঁদুর , সে মার সেবাযত্নে সারা দিন বসে বসে দিন কাটাত । এক দিন তার মা তাকে সঙ্গে নিয়ে খাবার খুঁজতে গেল । ইঁদুর সুক এই প্রথমবার জানতে পারল যে তার সব খাবার বাবা-মা চুরি করে আনে । পথে ইদুঁর সুকের যে সব জন্তুর সঙ্গে দেখা হয় , তারা সবাই ইঁদুরের নিন্দা করে । ইঁদুর সুক খুব দুঃখ পায় এবং এ অবস্থার পরিবর্তন করতে চায় । সে চুরি না করে নিজের পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে খাবার যোগাড় করতে চায় । সুক একটি খেলনা হেলিকপ্টার যোগে বেরিয়ে যায় । তার বন্ধু বেটা একটি খেলনা ট্যাংক চালিয়ে তার সঙ্গে গেল । তারা দুজন পথে ছোট প্রাণীদের সাহায্য করে এবং সবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জয় করে নেয় । লেখক চেন ইইয়েন চিয়ে বলেন , এ রুপকথা রচনার সময় আমি ভেবেছি , ছোটবেলায় আমরা যে সব রূপকথা পড়েছি , সেগুলোতে মানুষকে ভালো লোক ও খারাপ লোক হিসেবে ভাগ করা হয় । জীবজন্তুর ক্ষেত্রেও তাই । কাহিনীতে ছাগল ও খরগোশ ভাল প্রাণী , নেকড়ে ও ইঁদুর সব সময়ই খারাপ ও দুষ্টু প্রাণী । লেখার সময় আমি ইঁদুরের খারাপ ভাবমূর্তি বদলে দেওয়ার কথা চিন্তা করেছি । চেন ইউয়েন চিয়ের লেখা ' সুক ও বেটা ' বইটি পড়েই শিশুরা ছোট ইঁদুর সুককে পছন্দ করতে শুরু করে । চেন ইউয়েন চিয়ে সুক ও বেটার গল্প টানা ১৩ বছর লিখেছেন । এ কাহিনীর কার্টুন ছবি ও এনিমেশনও করা হয়েছে । পেইচিংয়ের একটি মাধ্যমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর মেয়ে ওয়াং ই পিং বলে , অনেকের ধারণায় ছোট বিড়াল ও কুকুরের মত ইঁদুর মানুষের প্রিয় প্রাণী নয়। তবে ' সুক ও বেটা ' বইতে ইঁদুর সুক দুষ্টু ইঁদুর নয় । ইঁদুর কোনো কোনো সময় জিনিসপত্র চুরি করে । এক দিন সুক তার মার জন্য একটি সসেজ চুরি করে । কারণ তার মা ক্ষুধায় মরে যাচ্ছিল। এ চুরির কারণ সম্পর্কে বইয়ে বলা হয় , ইঁদুরের মাও মা , সুকের মা নিজের বাচ্চা বড় করার জন্য নিজে ক্ষুধা সহ্য করে । তার ছেলে সুক ভাল ছেলে , মা যাতে ক্ষুধায় মরে না যায় , সেজন্যই সুক সসেজ চুরি করেছে । চুরির কারণ জেনে অনেক বনের প্রাণী সুককে ক্ষমা করে দেয় ।

    রূপকথা সুক ও বেটা প্রকাশের পর বিশ বছর পার হয়ে গেছে । চীনের সমাজের দ্রুত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ধারণাও অনেক বদলেছে। এখন মানুষ আরো সহনশীল হচ্ছে । বইপত্র , কার্টুন ছবি , টেলিভিশন ও ইন্টারনেটে ইঁদুরের চরিত্র ও চেহারা আরো বৈচিত্রময় হয়েছে । ইদানিংকার একটি জনপ্রিয় গানে বলা হয়েছে , আমি তোমাকে ভালোবাসি , যেমন ইঁদুর চাল ভালোবাসে । এ গান ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় । কেন ইঁদুর ও চাল দিয়ে পবিত্র প্রেমের তুলনা করা হলো , অনেকেই এর কারণ বলতে না পারলেও তরুণতরুণীরা এ গান পছন্দ করেছে এবং তরুণ সমাজের প্রায় সবাই এ গান গাইতে পারে ।

    এ বারের চান্দ্র বর্ষ ইঁদুর বর্ষ । ইন্টারনেটে ইঁদুর সম্পর্কিত এনিমেশন , ব্যঙ্গচিত্র এবং বাজারে স্মারক মুদ্রা , খেলনা ও ছোট ছোট উপহারে ইঁদুরের ছবি আছে । ইঁদুর যেন মানুষের ভালো বন্ধুতে পরিণত হয়েছে । আগে মানুষ শুধু ইঁদুরের চরিত্রের খারাপ দিক দেখত । প্রতিটি জিনিসের ভালোমন্দদুটি দিকই রয়েছে । ইঁদুরের খারাপ দিক দেখার সঙ্গে সঙ্গে ইঁদুরের তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও চঞ্চলতাকে স্বীকার করা উচিত । এটা শিশু ও তরুণ সম্প্রদায়ের শিক্ষাদানের জন্যও অনুকূল হবে ।