v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2008-03-21 21:14:18    
২০০৭ সালে চীনকে মুগ্ধ করা শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিলি লির কাহিনী

cri
    তাঁর নাম লি লি , একটি অতি সাধারণ, সুন্দর ও সহজ নাম । তাঁর মনটাও নামের মতো সুন্দর । সবাই তাঁকে খুব ভালবাসেন । গরিব হলেও তাঁর জীবনযাপনে আনন্দ ও সুখময় । কোনো অসুবিধা ও বাধার সামনে তিনি নতি স্বীকার করেন না । সাধারণ মানুষের মতো তিনি হাসতে, নিজেকে সুন্দর করে সাজাতে এবং কল্পনা করতে পছন্দ করেন । তিনি সবসময় অন্য লোককে সাহায্য করেন, নানা উপায়ে তাদের মানসিক সমস্যা নিরসনে সাহায্য করেন । এ জন্য তিনি ২০০৭ সালে চীনকে মুগ্ধ করা দশ জন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরএকজন হিসেবে নির্বাচিত হন ।

    এক বছর বয়সেই লি লি পঙ্গু হয়ে যায় । সে শুধু হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করত । চার বছর বয়সে নিজের দাঁড়ানোর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি প্রায় চল্লিশ বার শল্যচিকিত্সা গ্রহণ করেন । চল্লিশ বছর বয়সে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় সুখী জীবনপ্রাপ্ত তিনি চিরকালের জন্য দাঁড়ানোর শক্তি হারান । তারপরও নানা অসুবিধা ও কষ্ট তাঁকে পরাজিত করতে পারেনি । বাতাস ও বৃষ্টির পর সূর্যের আলো যেমনি আবার তাঁর দুনিয়াকে আলোকিত করে ঠিক তেমনি তার জীবনেও ।

    লি লি কখনো নিজের ভাগ্যের ওপর দোষ দেন না । তিনি লি লি নামে একটি পারিবারিক কর্মকক্ষ ও " লি লির ভালবাসার আকাশ" নামে একটি ওয়েবসাইড খুলেন । দীর্ঘকাল ধরে তিনি কল্যাণমূলকও যুবকযুবতীদের মানসিক বিষয়ক কাজ করে আসছেন । পরপর তিনি হুনান প্রদেশের ভেতর ও বাইরের শতাধিক স্কুল , কারখানা , কমিউনিটি ও জেলখানায় গিয়ে ধারাবাহিক শিক্ষাদান করেন । প্রায় এক লাখ শ্রোতা তাঁর বক্তৃতা শুনেছেন । তাঁর সাহায্যে একশরও বেশি স্কুলচ্যুত ছাত্র স্কুলে প্রত্যাবর্তন করেছে । ইন্টার্নেটেরওপর বেশি নির্ভরশীল ছাত্রদের মধ্যে দশ বারোজনকে সরিযে আসতে তিনি সাহায্য করেন । তারা প্রায় দশ হাজার ছাত্রের জন্য আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলেছে ।

    গত কয়েক বছরে তার কল্যাণমূলক কাজ দু লাখ লোককে পুনর্জন্ম দিয়েছে । এমন কি জেলখানার বন্দীরা তাঁকে নিজদের অনুরাগী বলে মনে করত । সবাই তাঁকে "ধন্যীদেবতা", " হুনান প্রদেশের চাং হাইতি" বা " চীনের হাইল্যান কাইলার" ডাকত । লি লির সাহায্য পেয়েছিল এমন বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে তাঁকে " লি মা" ডাকে । কিন্তু জেলখানায় কর্মরত একজন পুলিশ তাঁকে যে " লি রমণী" নাম দিয়েছেন তা তিনি সবচেয়ে পছন্দ করেন ।

    গাড়ি দুর্ঘটনার আগে শল্যচিকিত্সার পর লি লি প্রায় দাঁড়াতে সক্ষম হন । কিন্তু গাড়ির দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে লি লির ৮টি হাড় ভাঙ্গল । দুই পা প ঙ্গু হল ।শুধু চেহারাতেই ৮৯টি সেলাই করা হল । তাঁর শরিরে এখনো ইস্পাতের পেরেক লাগানো আছে।লি লি বলেন,যদিও আমি এখন হুইলচেয়ারে বসে আছি ।চেহারায় দাগ আছে । তবে আমি সাজতে পছন্দ করি । আমি সুন্দর পোশাক পরতে পছন্দ করি । আমি বিশ্বাস করি, আত্মবিশ্বাস ও আশাবাদী স্বভাব আমাকে সুন্দর করে সাজাবে । পুরস্কার বিতরণী সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে লি লি সবুজ রঙের পোশাক পরলেন । তিনি বলেন , সবুজ প্রাণের পরিচায়ক । আমি সবুজ রঙ পছন্দ করি । আমি জীবন ভালবাসি ।

লি লির সাহায্যে অনেক তরণ বয়সী ছেলেমেয়ে মানসিক বিষন্নতার কালো ছায়া কাটিয়ে আবার আত্মবিশ্বাস আয়ত্ত করেছে এবং সুন্দর ভবিষ্যত উপলব্ধি করেছে । তারা বলে , লি লি তাদের হৃদয়ে প্রবেশকারী মানসিক দেবতা ।

    লি লি যে ছেলেমেয়েদের সাহায্য করেছেন তাদের মধ্যে একজন ছেলে লি লির মনে গভীর রেখাপাত করেছে । সে আঠারো বছর বয়সী একজন সুন্দর ছেলে । সে লেখাপড়া করে না । সে নেটের কাল্পনিক ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশে নিমজ্জিত থাকে । গত পাঁচ বছর ধরে সে নেটের মধ্যে সময় নষ্ট করেছে। তার ওপর বাবা মা কোনো আশা রাখেন না , তারা হতাশ হন । বাবা মা ছেলেকে নিয়ে লি লির সামনে হাজির হন । স্বামী-স্ত্রী দুজনের কাছে লি লি ছেলেকে তার কাছে রেখে দেয়ার প্রস্তাব করেন । লি লির সযত্নে ছেলেটি যৌবন ফিরিয়ে আনার মানসিক যাত্রা শুরু করে ।

    লি লি ছেলেকে সমবয়সী বন্ধু হিসেবে তার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন । যখন তিনি জেলখানায় আটক তরণতরণীদের সাহায্য করতে যান তখন তিনি ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে যান । জেলখানায় গিয়ে তিনি পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় ছেলেটি তার রোগী বলেন না বরং বলেন , ছেলেটি তার অফিসের কর্মী । তিন মাস পর সেই বিদ্রোহী ছেলে লি লির কোলেমাথাগুজে জোরেজোরেকেঁদে কেঁদে বলল, আমি ভুল করেছি । আমার আচরণে আমার জীবন আমার যৌবন নষ্ট হয়েছে ।

    লি লির কাছে সবসময় এক জন আছেন । লি লি তাঁকে দি দি ডাকেন । লি লি বলেন, তিনি আমার আপন দিদি না হলেও আমি তাঁকে আপন দিদি বলে মনে করি । লি লির চেয়ে বড় দিদি বারো বছর বড়, তিনি ছ' বছর ধরে লি লির কাছে আছেন । লি লির গাড়ি দুর্ঘটনায়আক্রান্ত হওয়ার এক মাস পর দুজনের পরিচয় হয় । তিনি নানা দিক থেকে বিশেষ করে মানসিকতার দিক থেকে লি লির যত্ন নেন । বড় দিদি প্রায়ই সজল চোখে লি লিকে বলতেন, আমি বিশ্বাস করি , তুমি সফল হবেই ।

    বড়দিদির নিজের পরিবারও আছে । লি লির বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বড়দিদির বাড়ি । লি লির যত্ন নেয়ার জন্য তিনি মাসে মাত্র দুবার বাড়ি ফিরে যান । স্বামী তাঁকে সমর্থন করেন এবং তাঁকে বলেন , পরিবারের জন্য কোনো চিন্তা করো না । ভালভাবে লি লির যত্ন দাও । লি লি প্রায় বড় দিদির প্রশংসা করে বলেন, বড় দিদির আচরণ সবসময় আমাকে মুগ্ধ করে । তাঁর নব্বই বছর বয়সের মা মারা যাওয়ার সময় তিনি ফিরে যেতে পারেননি । পেইচিংয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় তিনিই আমাকে নিয়ে আসা যাওয়া করতেন । আমি তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি ।

    বড় দিদি বলেন, লি লি সত্যিই একজন খুব ভাল মানুষ । তাঁর আশেপাশে সকলেই তাকে ভালবাসেন । লি লির চেহারা দেখে কোনো দুঃখ ও অসন্তোষের ভাব বোঝাযায় না । তার মুখ থেকে কোনো অভিযোগের কথাও শোনা যায় না । তাঁর আন্তরিকতা ও অকৃত্রিমতা সবাইকে মুগ্ধ করে । কারণ তাঁর হৃদয় ভালবাসায় ভরপুর ।