একটি কৃষি প্রধান প্রদেশ হিসেবে আনহুই প্রদেশ মধ্য চীনে অবস্থিত । চীনের গ্রামীণ সংস্কার অভিযানে আনহুই প্রদেশ চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামাঞ্চলের জন্য একটি আদর্শ ভূমিকা পালন করেছে । ২০তম শতাব্দির সত্তরের দশকে এই প্রদেশের কৃষিতে দায়-দায়িত্ব বন্টন ব্যবস্থা চালু করা হয় । নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ও শেষ নাগাদ চীনের গ্রামাঞ্চলের তৃতীয় সংস্কার হিসেবে গ্রামীণ কর আদায় ব্যবস্থার সংস্কারও চালু করা হয় । এ সব সংস্কারে চীনের গ্রামাঞ্চলের সংস্কার অভিযানকে ত্বরান্বিত করা হয়েছে । ফলে গ্রামের আধুনিকায়নে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে । সম্প্রতি সিআরআই'র সংবাদদাতা সাক্ষাত্কার নেয়ার জন্য আনহুই প্রদেশের ছাওহো শহরের লুচিয়াং জেলায় গিয়েছিলেন । এই জেলাকে এ প্রদেশের গ্রামীণ সংস্কারের একটি অগ্রণী জেলা বলে অভিহিত করা হয় ।
লুচিয়াং জেলায় কৃষি উত্পাদন ও বনায়ন গড়ে তোলার কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য বেশ কিছু প্রযুক্তি পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছে । এ সব প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এ জেলার বিভিন্ন থানায় রয়েছে । এ সব কেন্দ্রের দায়িত্ব হচ্ছে কৃষি কাজের সেবা করা এবং নতুন গ্রামীণ সংস্কারে সাহায্য করা । এ জেলার একটি কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান চাং হুই মিন বলেন ,
কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের জন্য পশু , হাঁস-মুরগি পালন এবং মত্স চাষ বিষয়ক প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলা হয় । কৃষি ও পশু পালনের ক্ষেত্রে কৃষকদের কী কী সাহায্য লাগবে , সে ব্যাপারেও তাদেরকে পরারমর্শ ও অগ্রাধিকার দেয়া হবে । যেমন কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের মাধ্যমে পশুদের রোগ প্রতিষেধক লাইসেন্সের ব্যবস্থাও করা যায় । এ সব ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকদের জন্য বহু সুবিধা বয়ে এনেছে ।
এ সব কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের সাহায্যে কৃষকরা প্রয়োজনীয় কৃষি কারিগরি বিদ্যা শিখে নিয়েছেন এবং কৃষি কাজ ও কৃষকদের সাহায্য সংক্রান্ত দেশের সংশ্লিষ্ট নীতি সম্পর্কে বেশি জানতে পেরেছেন । এ সব কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাত্রায় অনেক সুবিধা বয়ে এনেছে । লুচিয়াং জেলার এ সব ব্যবস্থা অবলম্বনে কৃষক ও কৃষি কাজের সেবার কাজ দ্রুত বিকশিত হয়েছে । এ প্রসঙ্গে এ জেলার পার্টি-কমিটির সম্পাদক ফাং লু সেন বলেন ,
বর্তমানে অধিবাসীদের জীবনযাত্রার ব্যাপারে ঐতিহ্যবাহী ধারনার পরিবর্তনও হয়েছে । আগেকার সেবা সংস্থা এখন জনসেবার আরো বেশি চাহিদার সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না । এই পরিপ্রেক্ষিতে জনসাধারণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জনসেবার ক্ষেত্রও ক্রমাগত বিস্তৃত হয়েছে । পুরানো ঐতিহ্যবাহী সেবা সংস্থা জনসাধারণের বৈচিত্র্যময় চাহিদা মেটাতে পারছে না । সুতরাং এ সব সংস্থার সেবার বিষয়ও পরিবর্তন করা প্রয়োজন । এ সব কৃষি সেবা সংস্থার কাজ জোরদার করার ক্ষেত্রে চীন সরকার ভর্তুকী দিয়েছে । ফলে গ্রামাঞ্চলের গণ কল্যাণের কাজ ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে । কৃষি সেবার বিষয়ে দায়-দায়িত্ব বন্টনের ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে । যারা গ্রামীণ গণ কল্যাণের কাজে বেশি অবদান রেখেছেন , তাদের জন্য আরো বেশি বেতন ও পুরস্কার দেয়া হবে ।
স্থানীয় সরকারের এ সব ব্যবস্থা প্রসঙ্গে লুচিয়াং জেলার ইয়ানফুশান থানার কৃষি ও বনাঞ্চলের প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলা সংক্রান্ত বিভাগের একজন কর্মকর্তা ইয়ান সিং চ্যুন বলেন ,
আগে পশুদের রোগ প্রতিষেধক কর্মীদের আয় নিম্ন পর্যায়ে ছিল । সরকারী ভর্তুকীসহ বার্ষিক আয় শুধু ৫ থেকে ৬ হাজার ইউয়ান ছিল । এর পাশাপাশি এখন কর্মীদের কাজের উত্সাহও অনেক বেড়ে গেছে । কৃষি প্রযুক্তি সেবা কেন্দ্রের কাজে ব্যাপক কৃষকদের জন্য বহু উপকারও বয়ে এনেছে । লুচিয়াং জেলার থাংছি থানার কৃষি প্রযুক্তি সেবা কেন্দ্রের পরিচালক ইউয়ান ই বলেন ,
কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্র ও কৃষকদের পক্ষে এ সব ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে এক ধরনের ফলপ্রসূ সেবা । দু'পক্ষই লাভবান হয়েছে ।
কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠায় এ জেলার কৃষকরা আরো বেশি কৃষি বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান শিখেছেন । তারা এখন কারিগরদের সাহায্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষি কাজ করছেন । এর পাশাপাশি কৃষকদের আয় আরো বাড়ানোর জন্য এ জেলায় কৃষি সমবায়ও গড়ে উঠেছে । ফলে এক দিকে কৃষকদের আয় বেড়েছে , অন্য দিকে কৃষি পণ্য বিক্রি এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান পাওয়ার সুবিধার জন্য তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে । এখন এ ক্ষেত্রে কৃষকদের কোনো চিন্তা নেই । আনহুই প্রদেশের চা সমিতির প্রধান চাও ইয়্যু কুই বলেন ,
২০০২ সালে প্রাদেশিক চা কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় । তখন শুধু ৫৩টি কৃষক পরিবার কোম্পানিতে ভর্তি হয় । এখন কোম্পানির কৃষক পরিবারের সংখ্যা দু'শো একচল্লিশে দাঁড়িয়েছে । কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় উত্পাদন ও প্রযুক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে তারা উপকৃত । তাদের চা যাতে শীঘ্রই বিক্রি করা যায় , সেজন্য বিভিন্ন পর্যায়ের চা সমিতি তাদেরকে বিক্রির তথ্য যুগিয়েছে ।
চাও ইয়্যু কুই বলেন , সরকারের কাছ থেকে কৃষকদের কৃষি কর আদায়ের ভার কমানোর দরুণ কৃষকদের চা বিক্রির ব্যবসা অনেক উন্নত হয়েছে । লুচিয়াং জেলার কৃষকদের উত্পাদিত চা বিশ্বের বিশ বাইশটি দেশে রফতানি করা হয়েছে । ফলে চা তৈরি শিল্প প্রসারিত হয়েছে , কৃষকদের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে । তিনি বলেন ,
কৃষকদের বেশি অগ্রাধিকার দেয়ার ফলে চা চাষ করার জন্য বহু কৃষকরা গ্রামাঞ্চলে ফিরে এসেছেন । তাদের মধ্যে শহরে চাকরির জন্য কারো কারো বার্ষিক আয় ১০ হাজারের বেশি । কিন্তু তারাও চা চাষের জন্য দেশে ফিরে এসেছেন ।
সাক্ষাত্কার শেষে সংবাদদাতা গ্রাম থেকে ফিরে যাচ্ছিলেন । এমন সময় লু চিয়াং জেলার কৃষি ও বনাঞ্চল ব্যুরোর পরিচালক থাও চি স্যুং বলেন , সার্বিক গ্রামীণ সংস্কারে কৃষক ও গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য আরো বেশি সুযোগ দেয়া হয়েছে । তিনি বিশ্বাস করেন , এখানকার নতুন গ্রামাঞ্চলের নির্মাণকাজ অধিক থেকে অধিকতর সুষ্ঠু হয়ে উঠবে ।
(থান ইয়াও খাং)
|