১৯ মার্চ পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্ন পরিষদের অধিবেশনে পিপলস পার্টির মনোনিত ডঃ ফাহমিদা মির্জাকে পার্লামেন্টের নতুন স্পীকার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হচ্ছেন পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পীকার। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফাহমিদার নির্বাচিত হওয়া পাকিস্তানে নারীদের মর্যাদা উন্নতির একটি প্রতীক।
ফাহমিদা মির্জা ৩১৯টি ভোটের মধ্যে ২৪৯টি পেয়ে সহজেই পার্লামেন্টের বিরোধি দলের মনোনিত আসরার টারিনকে পরাজিত করেছেন। ফাহমিদা নির্বাচিত হওয়ার পর বিরোধি দলের নেতা চৌধুরি পারভেজ এলাহি তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিরোধি দল নতুন সরকারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
ফাহমিদা মির্জার নির্বাচিত হওয়ার ফলে পাকিস্তানের নারীদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজেদের সম্পৃক্ত করার ঐতিহ্য সৃষ্টি হলো। একটি ইসলামি দেশ হলেও পাকিস্তানে বিশিষ্ট নারী রাজনীতিবিদের অভাব নেই। বেনজির ভূট্টো হচ্ছেন পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তা ছাড়া, আরেক জন নারী দু'বারের মতো পাকিস্তানের জাতীয় পার্লামেন্টের ভাইস-স্পীকারের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান পাকিস্তানের সরকারে নারী রাজনীতিবিদের অনুপাতও উচ্চ হার রয়েছে।
বেনজির ভূট্টোর হত্যাকান্ডের পর পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রথম নারী স্পীকার নির্বাচিত হলো, এতে ইসলামি দেশটির বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে। পিপলস পার্টির একজন নারী মুখপাত্র মনে করেন, বেনজির ভূট্টোর নিহত হওয়ার পর ফাহমিদার নির্বাচন পাকিস্তানী নারীদের অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রীয় পরিষদের মুখপাত্র টম ক্যাসি নির্বাচিত হওয়ায় ফাহমিদাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ফাহমিদার নির্বাচনে বোঝা যাচ্ছে যে, পাকিস্তানী নারীরা গণতন্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।
স্পীকার নির্বাচন শেষ হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? তা এখনও ঠিক করে বলা যায় না। পিপলস পার্টির বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান আমিন ফাহিমকে নতুন প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী বলে মনে করা হয়। বর্তমানে ৬৮ বছর বয়সী ফাহিম বহু বছর ধরে বেনজির ভূট্টোর সঙ্গে কাজ করছেন এবং পিপলস পার্টিতে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। কিন্তু বিশ্লেষণ থেকে মনে করা হচ্ছে যে, নবনিযুক্ত স্পীকার ফাহমিদা সিন্ধু প্রদেশ থেকে এসেছেন। বিভিন্ন এলাকর স্বার্থ ভারসাম্য করার জন্য পিপলস পার্টি গুরুত্বপূর্ণ পদ বিভিন্ন এলাকার সদস্যদের মাঝে বিন্যাস করবে বলে সিন্ধু প্রদেশ থেকে আসা ফাহিমের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের সম্ভাবনা কম। তবে ফাহিম ১৯ মার্চ বলেন, পিপলস পার্টি স্পীকার এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ একই এলাকা থেকে আসা সদস্যের দেবে না এ ধরণের মনোভাব ঠিক নয়। কারণ পিপলস পার্টির কখনও এ ধরণের ঐতিহ্য নেই।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর আরেক জন পদপ্রার্থী, বেনজির ভূট্টোর স্বামী পিপলস পার্টির যৌথ চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারির প্রতি সমর্থনের হার সম্প্রতি বাড়ছে। পাকিস্তানের আদালত ১৪ মার্চ জারদারির সর্বেশষ দুর্নীতি অভিযোগ বাতিল করেছে। এখনো তিনি জাতীয় পার্লামেন্টের সদস্য হননি এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের যোগ্যতার নেই। কিন্তু তিনি উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে সদস্য হতে পারেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন।
জাতীয় পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন ১৭ মার্চ শুরু হওয়ার দিনে জারদারি এবং মুসলিম লীগের নেতা নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন। ১৮ মার্চ পাকিস্তানের তথ্য মাধ্যম থেকে জানা গেছে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ ২৩ মার্চের পর জাতীয় পার্লামেন্টের অধিবেশন আবার ডাকবেন। তখন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবে। পিপলস পার্টির মুখপাত্র সম্প্রতি জানিয়েছেন, এই পার্টি আগামী সপ্তাহে তাদের প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে। (লিলি)
|