তাইওয়ান প্রদেশের কৃষি প্রযুক্তি মূল-ভূভাগের চেয়ে উন্নত। এ কারণে চীনের মূল-ভূভাগ তাইওয়ানী ব্যবসায়ীদের এখানে কৃষি পর্যটনে পুঁজি বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়। সুচৌ শহরের গণ কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির উপ-পরিচালক উ ওয়েন ইউয়ান বলেছেন, তাইওয়ানী ব্যবসায়ীরা অবকাশ খামারের উন্নত ধারণা নিয়ে আসার পাশাপাশি তাইওয়ানের কৃষি ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের উন্নততর অভিজ্ঞতাও নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেছেন—
এই অবকাশ খামার সারা সিশান দ্বীপ এমনকি সুচৌ থাইহু হ্রদ অঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রের নতুন পরিবর্তন ঘটাবে। এটি এ অঞ্চলের দ্রুত উন্নয়ন বাস্তবায়ন এবং আধুনিক কৃষি ও পর্যটন সেবা শিল্পের মধ্যে সেতুবন্ধনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। পাশাপাশি সবুজ আলো অবকাশ খামার তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের কৃষি, পর্যটন সহযোগিতা ও উন্নয়নের জন্য একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম ও দৃষ্টান্ত সরবরাহ করেছে যা তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের বিভিন্ন শিল্পের আন্তযোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়াবে।
চীনের কুওমিনতাং পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান চিয়াং বিং খুন সুচৌ ইলেকট্রোনিক তথ্য মেলায় অংশ নেয়ার সময় সুচৌ থাই হু হ্রদ সবুজ আলো অবকাশ খামারে এসেছিলেন। তিনি এই খামারের উদ্বোধনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। চিয়াং বিং খুন বলেছেন—
সুচৌ যেমন উন্নত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের জন্য ভালো জায়গা তেমনি তৃতীয় শিল্প অবকাশ ও পর্যটনে টাকা খাটানোর জন্যও দারুণ জায়গা। বলা যায় সুচৌ শহর হচ্ছে সবচেয়ে বেশি তাইওয়ানী ব্যবসায়ীর মিলিত হওয়ার জায়গা। তাছাড়া ইলেকট্রোনিক শিল্পের পাশাপাশি এখানে মনোরম দৃশ্য ও বিশাল কৃষি ভূমি আছে। অবকাশ কৃষি বর্তমানে তাইওয়ানের গ্রামীণ সমস্যা সমাধানের একটি ভালো উপায়ে পরিণত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, তাইওয়ানের ব্যবসায়ীরা তাদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা কাজে লাগালে কৃষি ভূমি ভালোভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে। আমি আশা করি পুঁজি বিনিয়োগ এই অঞ্চলের সমৃদ্ধিই শুধু নয়, পাশাপাশি তাইওয়ান প্রণালীর দু'পারের শান্তিও এগিয়ে নেবে।
উল্লিখিত তিনটি এলাকা ছাড়া, অবকাশ খামারে অন্য আরো ৬টি এলাকা আছেঃ ভ্যানিলা বাগান, সবুজ আলো মহাচত্বর, বসতি এলাকা, অবকাশ বিনোদন এলাকা, ডি আই ওয়াই শ্রেণীকক্ষ ও ক্রীড়া এলাকা। এখন আমরা এর মধ্যে কয়েকটি এলাকা নিয়ে আপনাদের কিছু জানাবো।
ভ্যানিলার আকাশ রোমান্টিক ও বর্ণময়। ভ্যানিলায় সাজানো বাগানও সৌরভময়। ভ্যানিলার সুরভি শরীরে ঢুকলে কাজ ও পর্যটনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তাছাড়া মনটাও ফূরফূরে হয়ে ওঠে।
সবুজ আলো মহাচত্বরঃ আপনারা সবুজ আলো মহাচত্বরে বিচিত্র সব বিষয় উপভোগ ও এর যে কোনো কিছুতে অংশ নিতে পারেন। সেখানে নিয়মিতই কন্সার্ট, পণ্য মেলাসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজন থাকে। এতে পারিবারিক বা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা রকমের চাহিদা পূরণ হয়।
বাসস্থান এলাকাঃ সিশানে থাকাটা সত্যিই এক সুখের অভিজ্ঞতা। এর মধ্যে সেরা হচ্ছে সবুজ আলো ঘন বাঁশ বাগানের মধ্যে সারি সারি বৈশিষ্ট্যময় কাঠের ভিলা। ভোরে জানালা খুললে মুখে ঝাপটা মারা তরতাজা বাতাস। একটু দূরে দৃষ্টি ফেললে চোখে ভেসে উঠবে দূরের পাহাড় ও সবুজ পানি। বনে বেড়াতে বেরিয়ে পাখির গানে হঠাত আপনি নির্ভার ও উদ্বেগমুক্ত হয়ে যাবেন।
অবকাশ ও বিনোদন এলাকাঃ এখানে ঘোড়ায় চড়া, নৌকাবিহার করাও ছিপে মাছ ধরা যায়। আর বুঝতেই পারছেন এ সব করতে গিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন হবে।
ডি আই ওয়াই শ্রেণীকক্ষঃ ডি আই ওয়াই হচ্ছে ইংরেজী ভাষায় ডু ইট ইয়োরসেলফ। মানে নিজে করা। এই এলাকায় পেশাদার ব্যক্তিদের তত্ত্বাবধানে আপনারা নিজে নিজে বিশেষ সৌরভযুক্ত উদ্বায়ী তেল ও অন্য ধরনের হস্তশিল্পের কাজ করতে পারেন। আপনি যদি একটু সৃজনশীল হন তাহলে এই গ্রামীণ জীবন আপনাকে অন্যরকমের আনন্দ দেবে।
এখন আমি সবুজ আলো অবকাশ খামারে বেড়াতে যাওয়ার জন্য আপনাদেরকে কয়েকটি প্রয়োজনীয় তথ্য জানিয়ে দিচ্ছি। রেল গাড়িতে করে সুচৌ-এ যাওয়ার অনেক সহজ। সাংহাই থেকে নানচিং পর্যন্ত এই লাইনে প্রায় সব ট্রেন সুচৌ-এ থামে। সুচৌ-এ বেসামরিক বিমানবন্দর নেই, সুতরাং বিমানে যেতে হলে সাংহাই দিয়ে যেতে হবে। সাংহাই পুতোং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও হোং ছিয়াও বিমানবন্দর থেকে সুচৌ-এ আসা-যাওয়া অনেক বাস আছে। বাসে করে সাংহাই থেকে সুচৌ যেতে প্রায় ২ ঘন্টা লাগে। সুচৌ'এর স্ন্যাকস খুবই বিখ্যাত। এর মধ্যে এখানকার পেস্ট্রির দীর্ঘ ইতিহাস আছে। সুস্বাদু তো বটেই তার পাশাপাশি পেস্ট্রিগুলো দেখতে খুব সূক্ষ ও সুন্দর। সুচৌ-এর সুস্বাদু খাবার সড়কে, সোং হো লৌ, দে ইউয়ে লৌ, ওয়াং সি রেস্তোঁরা ও পুরনো জেং সিং সবগুলোই সুচৌ'র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রেস্তোঁরা। খাবার নিয়ে সুচৌবাসী খুব খুঁতখুঁতে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন সেখানে সুস্বাদু খাবারের সংখ্যা অনেক বেশি। সুযোগ পেলে আপনারা নিজেরাই খেয়ে দেখবেন।
যদি আপনাদের ইচ্ছা থাকে, আপনারাও সুচৌ থাই হু হ্রদ সবুজ আলো অবকাশ খামার নিজ চোখে দেখে আসতে পারেন। আজকের 'চলুন বেড়িয়ে আসি' অনুষ্ঠান এখানই শেষ করছি। শোনার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আগামীতে আবার দেখা হবে অন্য কোন দর্শনীয় স্থান থেকে।
|