কর্মসংস্থান হচ্ছে জনসাধারণের জীবনের একটি মৌলিক বিষয় । চীনের রাজধানী পেইচিং পৌর সরকার সবসময় কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধানকে তার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে আসছে । গত কয়েক বছরে বেকারদের আবার কর্মসংস্থান ও নিজেদের উদ্যোগে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা জোরদারের জন্যে পেইচিং সরকার বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে ।
কযেক বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদের পর লিউ লি হুয়া তার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকেন । দেখতে দেখতে তার ছেলে বড় হয়ে যাচ্ছে । তার পেছনে খরচও বেড়েই চলেছে । তবে তিনি বেকার হয়ে যাওয়ার পর তার কোনো স্থিতিশীল আয় ছিল না । এ কথা নিয়ে ভাবতে ভাবতে তাকে মাঝেমধ্যে সারা রাত জেগে থাকতে হতো । তিনি বলেন ,
১৯৮১ সালে আমি একটি বস্ত্র কারখানায় কাজ করতে শুরু করি । ১৯৯৩ সালে মন্দাবস্থা থাকায় কারখানাটি অন্য একটি কোম্পানির সংগে সংযুক্ত হয় । ২০০৫ সালে আমি বেকার হই । আমার বয়স বাড়ার সংগে সংগে আবার কোনো চাকরী পাওয়া খুব মুশকিল ।
লিউ লি হুয়া পেইচিংয়ের পাই ছিয়াও ইউয়ান পাড়া এলাকায় বসবাস করেন । এ পাড়া কমিটি তার অবস্থা জানার পর পাড়া কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত বিনাপয়সায় বেকারদের পেশাগত প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেয়ার জন্যে তাকে উত্সাহিত করে । তিনি এ প্রশিক্ষণ কোর্সে পর পর ফুলের সজ্জা ও কম্পিউটার ব্যবহার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন । এক রকম পেশাগত দক্ষতা আয়ত্ত করার পর তরুণ-তরুণীদের পক্ষে একটি চাকরী পাওয়া তত কঠিন নয় । তবে লিউ লি হুয়ার বয়স এখন চল্লিশের ওপর । তার পক্ষে চাকরী পাওয়া সহজ নয় । তিনি বলেন ,
চাকরী পাওয়ার জন্যে আমি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি । কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মনে করে যে , আমার বয়স বেশি হয়েছে । আমি একটি শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে দু মাস ধরে কাজ করেছি । তিন মাস ধরে আমি সন্ধ্যা ডেইলী পত্রিকা বিক্রি করেছি । সুপার মার্কেটেও আমি তিন মাস কাজ করেছি । তবে কোথাও আমার চাকরী বেশিদিন স্থায়ী হয় নি । তাছাড়া উপার্জনও কম ছিল ।
অথচ নানা বাধাবিপত্তির মুখেও লিউ লি হুয়া দমে যান নি । নিজের অবস্থার পরিবর্তনের সুযোগ খুঁজে বের করার জন্যে তার চেষ্টা থামে নি । ব্যবসা করার ব্যাপারে পেইচিং পৌর সরকারের সুবিধাজনক নীতির আলোকে তিনি নিজের উদ্যোগে কিছু ব্যবসা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । তিনি বলেন ,
আমি এখন একাই একটি ছেলেকে নিয়ে থাকি । আমার স্বভাব অনুসারে আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু করতে চাই । আমি আমার ধারণাকে স্থানীয় সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান প্রতিষ্ঠানের কাছে জানালাম । এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা আমাকে সমর্থনের কথাও ব্যক্ত করেন ।
সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত এ সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেয়ার পর লিউ লি হুয়া নিজের ইচ্ছা মোতাবেক সরকারের কাছ থেকে বিনাসুদে ৫০ হাজার ইউয়ান ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েছেন । পাশাপাশি বেকারদরকে কর মওকুফ ও সামাজিক বীমা বাবদ ভরতুকিসহ সরকারের নানা ধরণের নীতির সহায়তায় লিউ লি হুয়া তার ব্যবসা শুরু করেন । প্রথমে তিনি একটি ডিজাইন কোম্পনি প্রতিষ্ঠা করেন । কিছুদিন আগে তিনি আবার চুল পড়া প্রতিরোধক প্রকল্প শুরু করেন ।
আজ প্রতিবেশীদের চোখে লিউ লি হুয়া যেন আলাদ একজন লোক হয়ে গেছেন । তিনি নিজের জীবন নিয়ে খুবই আস্থাবান । তার ব্যবসা এখন সরগরম হয়ে ওঠেছে । অবশ্য তার অর্থনৈতিক আয় এখনো তত বেশি নয় । তবে সমাজের প্রতি প্রতিদান করতে তিনি চেষ্টার ত্রুটি করেন নি । তার কোম্পানি ৬জন বেকারকে ভর্তি করেছে । তিনি বলেন ,
এসব বেকারের বয়স আমার বয়সের কাছাকাছি । তাদের কারো কারো বয়স আমার চেয়েও বেশি । এমন বয়সী লোকদের পক্ষে চাকরী পাওয়া সহজ নয় । তবে আমার কোম্পনির কাজ তাদের উপযোগী । অবশ্য আমি এখনো তাদের বেশি বেতন দিতে পারছি না । তবে এতে কিছু আসে যায় না । আমি অন্তরের অন্তস্থল থেকে সরকারের চমত্কার নীতির জন্যে কৃতজ্ঞ । তাই আমি আন্তরিকতা নিয়ে নিজের সাধ্যমত অন্যদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক । পেইচিং সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতি অনুসারে বিভিন্ন স্তরের সরকার বেকারদের জন্যে বিনাপয়সায় পেশাগত প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকে । এ সম্পর্কে পেইচিংয়ের হাই তিয়ান এলাকার শ্রম ও সামাজাক নিশ্চয়তা বিধান ব্যুরোর কর্মসংস্থান সেবা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ছেন লি সিন বলেন ,
এ রকম প্রশিক্ষণ নেয়া ঋণ নেয়ার এক পূর্বশর্ত । প্রশিক্ষণ কোর্স সাধারণত দশদিন স্থায়ী হয় । বেকার হিসেবে নিবন্ধন করার সময় বেকারদের কাছ থেকে ব্যবসা করার ক্ষেত্র সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় । যারা ব্যবসা করতে চান , তারা সবাই এ রকম প্রশিক্ষণ কোর্সে যোগ দিতে পারেন । ছেন লি সিন বলেন , ব্যবসা করার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের কাজ সামনে এগিয়ে নেয়া শুধু একটি শ্লোগান নয় , সরকারের পরিচালনা ও নানা ধরণের নীতির সুসংহতকরণ দরকার । গত কয়েক বছরে পেইচিংয়ের সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান বাবদ আর্থিক বরাদ্দ ২০০৩ সালের ১১.৯ বিলিয়ন ইউয়ান থেকে বেড়ে ২০০৭ সালের ২৩.৮ বিলিয়ন ইউয়ানে উন্নীত হয়েছে । বার্ষিক বৃদ্ধি হার ছিল ২০ শতাংশ । এ আর্থিক সহায়তা কর্মসংস্থান ও বেকারদের পুনর্কর্মসংস্থান , সামাজিক নিশ্চয়তা বিধান এবং গণ স্বাস্থ্যের চাহিদা মোটানো সম্ভব করে তুলেছে । পেইচিংয়ের অর্থ ব্যুরোর উপমহাপরিচালক সুই সি বলেন ,
পেইচিং পৌর সরকার কয়েকটি বিভাগ নিয়ে বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নিয়েছে । এক , আগে কর্মসংস্থানের সহায়তায় নিছক বেকার বীমার অর্থ ব্যবহার করা হতো । কিন্তু ২০০৩ সাল থেকে কর্মসংস্থানের সহায়তায় সরাসরি আর্থিক বরাদ্দ করার ব্যবস্থা চালু হয় । দুই , কর্মসংস্থানের নানা ধরণের নীতিকে সুসংহত করা হয়েছে । যেমন ক্ষুদ্র ঋণ হিসেবে ২০ হাজার ইউয়ান থেকে ৫০ হাজার ইউয়ানে উন্নীত হয়েছে । তিনি আরো বলেন , সরকারের সমর্থন ও কার্যকর নীতির সুবাদে গত কয়েক বছরে পেইচিংয়ের বেকারত্বের হার সবসময় ২.৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে । ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসের শেষ নাগাদ পেইচিংয়ের শূণ্য কর্মসংস্থানবিশিষ্ট পরিবারের সংখ্যা কেবল ১৫টিতে নেমে এসেছে ।
|